বাঙালি পরিবারে ঠাঁই করে নেওয়া সিলেটের ‘সাতকরা’
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ৯:২১ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রয়েছে বিশেষ কিছু খাবার। যে খাবারের সঙ্গে ওই অঞ্চলের পরিচিতি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যায়। অঞ্চলভিত্তিক রান্নায় সিলেটের ‘সাতকরা’ অন্যতম। ‘সাতকরায় গরুর গোশত ভুনা’ সিলেটিদের কাছে খুব প্রিয়। সিলেট সফরে এলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ‘সাতকরায় গরুর গোশত ভুনা’র স্বাদ নিতে ভুল করেন না।
‘সাতকরা’ এক ধরনের ফল, যা মাছ-মাংসের তরকারিতেও ব্যবহার হয়। উত্তর-পূর্বাঞ্চল সিলেটের মানুষের ভোজনবিলাস হয় সাতকরায়। সিলেট থেকে বিদেশেও ফলটি রফতানি হয়ে থাকে। শুধু তা-ই নয়, সাতকরার আচারও দেশের মানুষের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছে।
আঠারো শতকে বর্তমান সিলেট সীমান্তের ওপারে ভারতের আসাম রাজ্যে ব্যাপকভাবে ‘সাতকরা’ চাষ হতো। উনিশ শতকের গোড়ার দিকে ‘সাতকরা’ চাষ শুরু হয় সিলেটের পাহাড়ি এলাকায়। কমলা লেবুর মতো ‘সাতকরা’র গাছ আকারে লম্বা ও বড় হয়। বর্তমানে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সিলেট জেলার পাহাড়ি অঞ্চলে ‘সাতকরা’ চাষ হচ্ছে। এ তিন জেলার মধ্যে সিলেট জেলায় ‘সাতকরা’ চাষ হয় সবচেয়ে বেশি। তবে এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের চাহিদার তুলনায় ফলন কম এবং যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যের বাঙালি পরিবারে ঠাঁই করে নেওয়ার কারণে বর্তমানে এ ফলটির বাজারমূল্য অত্যধিক। দেশের বাজারে সাধারণ মৌসুমে প্রতি হালি ‘সাতকরা’ বিক্রি হয় ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে। অন্য সময় তা বিক্রি হয় ৮০ থেকে নব্বই টাকা হালি। বর্তমানে ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে বিক্রি হচ্ছে প্রতি হালি দেড়শ’ থেকে দুশ’ টাকা পর্যন্ত।
সিলেট অঞ্চলের মানুষের প্রাত্যহিক রান্নায় বিশেষ করে মাংস রান্নায় এক অপরিহার্য উপাদান সাতকরা। এটি ছাড়া অধিকাংশ লোকের রসনা বিলাসই যেন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। যুক্তরাজ্য ও মধ্যপ্রাচ্যে বসবাসরত সিলেটের অধিবাসীরা কাঁচা অথবা রোদে শুকানো সাতকরা নিয়ে যান প্রবাসে। বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলে অতিথি আপ্যায়নে ‘সাতকরা’ অদ্বিতীয়।
ব্যাপক চাহিদা থাকায় সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলার পাহাড়ি অঞ্চলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সাতকরা চাষের উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখনও সাতকরার চাহিদা মেটাতে আমদানির ওপরই ভরসা করতে হয়। বর্তমানে পাতলা ও ছেলা নামে দুই ধরনের সাতকরা সিলেটের বাজারে পাওয়া যায়। আমদানিকৃত সাতকরা থেকেই ঘরে ঘরে এবং বিভিন্ন কোম্পানি সাতকরার আচার প্রস্তুত করে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সদ্য সাবেক অতিরিক্ত পরিচালক এ এফ এম মতিউর রহমান জানান, দেশে সাতকরার চাহিদার অধিকাংশই আমদানিনির্ভর। সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলার পাহাড়ি অঞ্চলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সাতকরা চাষের উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখনও সাতকরার চাহিদা মেটাতে আমদানির ওপরই ভরসা করতে হয়। তিনি আরও জানান, বর্তমানে সিলেট অঞ্চলের অনেক স্থানেই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ‘সাতকরা’ চাষ করে কৃষকরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন।