এখন দেশজুড়ে প্রতিমা ভাংচুর শুরু হলে বুঝতে পারি দুর্গাপূজা চলে এসেছে !
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ আগস্ট ২০১৬, ৩:০৮ অপরাহ্ণ
লিটন দেব জয় :
আগেকার দিনে শিউলী ফুলের সৌন্দর্য্য আর কাশবনের শুভ্রতা মনে করিয়ে দিতো দুর্গা পূজা আসছে। ঢাকের তালে শরতের সর্ববৃহৎ এই উৎসবকে স্বাগত জানাত এই বদ্বীপের বাসিন্দারা। কতো আয়োজন। কতো আনন্দ। হাজার হাজার মানুষের মিলনমেলা জমে উঠবে শিশু-কিশোর-যুবাদের কলরবে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই যেনো উৎসবে মাতোয়ারা হতো।
তবে এখন সময়ের বিবর্তনে প্রতিমা ভাঙ্গার উৎসব শুরু হলে বুঝতে পারি দুর্গা পূজা খুব কাছে। সারা বছর তো প্রতিমা মন্দির ভাঙ্গাভাঙ্গি আছেই। যখনই তা উৎসবে পরিণত হয় মনে পড়ে দুর্গাপূজা চলে এসেছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের দুর্গোৎসবের সাথে পাল্লা দিয়ে একযোগে চলবে প্রতিমা ভাঙ্গার মহা উৎসব। এখন পূজায় আনন্দের চেয়ে পাহারা দিতে হয় বেশি। না জানি কখন মণ্ডপে শুরু হবে বরাহ শাবকদের হামলা। কোন পুরোহিতের প্রাণ গেলো চাপাতির কোপে। আসতে থাকবে একের পর এক হুমকির বেনামি চিঠি। সত্য হলো উৎসবের আনন্দ এখন আতংকে রূপ নিয়েছে।
এই অঞ্চলে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের বসবাস করছে দীর্ঘকাল ধরে। ভৌগলিকভাবে এখানকার মানুষজন সহনশীল। যেকোনো উৎসবে সবাই মিলেমিশে আনন্দ ভাগাভাগি করা আমাদের ঐতিহ্যেরই অংশ। ঈদ-পূজা-বৌদ্ধপূর্ণিমা সব এক সুতোয় গাঁথা ছিলো। তবে এখন এই অবস্থা কেন?
আজকের এই অবস্থা একদিনে সৃষ্টি হয় নি। মানুষের ধর্মান্ধতাকে পুঁজি করে এই দেশের মানুষের ভেতর সাম্প্রদায়িকতার বিষ ঢেলে দিয়েছে পাকিস্তান আর মধ্যপ্রাচ্যের ধর্ম বেনিয়ারা। কোটি কোটি টাকার ইনভেস্টমেন্ট। ধর্মের নামে চলছে মস্তিষ্ক বিকৃতির ঘৃণ্য খেলা। আমাদের হাজার বছরের “হিন্দু-মুসলমান ভাই ভাই” স্লোগানকে মগজভ্রষ্টরা পরিণত করেছে “হিন্দু-মুসলমান ঠাঁই ঠাঁই” এ। আগে ধর্মের অপর নাম ছিলো প্রেম আর সৌহার্দ্য। এখন ধর্মের অপর নাম বিদ্বেষ আর রক্তারক্তি।
সামনে ঈদ এবং দুর্গাপূজা। আসুন আমরা মানবিক চেতনায় মিশে যাই উৎসবগুলোতে। সব অপশক্তিকে পায়ে মেড়ে ফিরিয়ে আনি আমাদের চিরায়ত বাংলার গৌরবময় ঐতিহ্য। প্রমাণ করে দেই, “আমরা বাংলার সন্তান, এক জাতি এক প্রাণ।”