রাবেল: টক অব দ্যা সিলেট
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১১:৪৬ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
সিলেটের গোলাপগঞ্জের পৌর মেয়র আমিনুল ইসলাম রাবেলকে বরখাস্তের ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে উপজেলা ছাড়াসহ গোটা সিলেটে। বর্তমানে ‘টক অব দ্যা টাউনে’ পরিণত হয়েছে এ বিষয়টি। সর্বত্রই এনিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।
হঠাৎ করে কেন তিনি মন্ত্রী, দেশ ও মন্ত্রণালয়কে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করলেন? এসব প্রশ্ন এখন মানুষের মুখে মুখে। এ কারণে ক্ষুব্ধ স্থানীয় আওয়ামী লীগসহ এলাকার লোকজন।
এদিকে রাবেলকে বরখাস্তের কারণে অনেকেই উৎফুল্ল হয়েছেন। কেউ কেউ মিষ্টি বিতরণ করেছেন বলে জানা গেছে।
জানা যায়, পৌর মেয়র আমিনুল ইসলাম রাবেল ছুটি নিয়ে বিদেশে গিয়ে গ্রেটার সিলেট ডেভেলপমেন্ট ফোরাম আয়োজিত মতবিনিময় বলেন- আমরা মন্ত্রণালয়ে যাই। সচিবালয়ে সচিবদের সঙ্গে মিটিং করি, এলজিইডি মিনিস্টারের সঙ্গে মিটিং করি। তাদের কাছ থেকেই আমাদের ফান্ড আনতে হয়। ওখানে বিরাট একটা পার্সেন্টেজ দিয়ে আনতে হয়। আপনি ১০০ কোটি টাকার ফান্ড নিয়ে আসলেন। সেখানে ৫ পার্সেন্ট আগেই দিয়ে আসতে হয়।
এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে গোলাপগঞ্জ পৌরসভার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বিষয়ে রাবেল বলেন, গোলাপগঞ্জ পৌরসভায় আমি এখন পর্যন্ত ১০০ কোটি টাকার কাজ করেছি। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডকে আমি সাজিয়েছি। লাইটিং করেছি। আরিফ ভাই (সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী) যেভাবে টাউনকে উন্নত করেছেন, আমি সেভাবে গোলাপগঞ্জের উন্নয়ন করেছি। আমরা প্রবাসে থাকায় বাংলাদেশের মতো মন-মানসিকতা নয়। এ কারণে কাজ করতে পেরেছি। দেশ খুব সুন্দর এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ আরও উন্নত হোক এটা আমরা আশা করি। একজন ভালো মানুষ গোটা দেশকে ভালো করবে সেটি সম্ভব নয়। দেশে এখনো প্রচুর পরিমাণ দুর্নীতি হচ্ছে। আমরা যারা জনপ্রতিনিধি, আমরা তো গিয়ে ফান্ডিং আনি। সেখানে প্রকল্প পাস করাতে পার্সেন্টেজ দিতে হয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
রাবেল বলেন, বাংলাদেশে যে ইলেকশনগুলো হচ্ছে, সেখানে আমি নৌকার বিরুদ্ধে দুইবারই পাশ করেছি। আমি একবার মেয়র ছিলাম বলে মানুষের আস্থা অর্জন করেছি। পরেরবার মানুষ আমাকে ভোট দিয়েছেন। আপনারা জানেন- নির্বাচনে যে দলীয় প্রতীক পাবেন তাকে পাশ করাতেই হবে। এর মাঝেও গোলাপগঞ্জ পৌরসভায় নৌকা, ধানের শীষ থেকে ৫-৭ গুণ বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছি। একজন প্রবাসী হিসেবে মানুষ আমাকে ভোট দিয়েছেন। আমি প্রবাসীদের মুখ উজ্জ্বল রাখতে কাজ করছি।
তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেবকে গিয়ে বলেছিলাম, আমি একজন প্রবাসী, নির্বাচন করব কিন্তু তিনি অনুমতি দেননি। প্রবাসে যাও বলে দিয়েছিলেন। আমি তখন চ্যালেঞ্জ করে উনাকে বলেছিলাম, আপনারা যে প্রার্থীই দেন আমি পাশ করব। আপনার বাংলাদেশি প্রার্থী পাশ করাতে পারবেন না। এরপর তিনি আমাকে মনোনয়ন দেননি। আসলে আমাদের বাংলাদেশের মানুষের চরিত্র এখনো ঠিক হয়নি।
এমন বিরূপ মন্তব্যের কারণেই সোমবার মেয়র আমিনুল ইসলাম রাবেলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ সচিব মোহাম্মদ ফারুক হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ আদেশ জারি করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এ ধরনের জনহানিকর বক্তব্য স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন, অনুযায়ী মেয়র পদ থেকে অপসারণযোগ্য অপরাধ। এ আদেশ যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে জারি করা হয়েছে এবং তা দ্রুত কার্যকর হবে বলেও জানানো হয়েছে প্রজ্ঞাপনে।
২০২০ সালের ৩০ জানুয়ারি পৌরসভার নির্বচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে মেয়র পদে নির্বাচন করেছিলেন রাবেল। জয়লাভের পর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ হারান তিনি।
এদিকে মেয়র রাবেলের বরখাস্তের খবরে গোটা উপজেলা ছাড়াও সিলেটে সৃষ্টি হয় তোলপাড়। কেন তিনি সরকার, দেশ, মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের বিষয়ে বিরূপ মন্তব্য করলেন এমন প্রশ্ন এখন মানুষের মুখে মুখে।
পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রুহেল আহমদ বলেন, মেয়রের মতো একটি দায়িত্বশীল পদে থেকে তিনি যে মন্তব্য করেছেন তা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও শিষ্টাচার বহির্ভূত।
তিনি বলেন, রাষ্ট্র তথা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে এমন মন্তব্য কোনো বিশেষ মহলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন কি-না তা খতিয়ে দেখা উচিত।
গোলাপগঞ্জের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী লুকুছ আহমদ বলন, পৌর মেয়র রাবেল হঠৎ করে এমন কথা কেনইবা বললেন। আর বরখাস্ত হলেন আমরা ভেবে পাচ্ছি না।