সিলেটে হোটেলে চলছে পুলিশের অভিযান, আতঙ্কে যৌনকর্মীরা
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:৫৭:২৯,অপরাহ্ন ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১
সুরমা নিউজ :
সিলেটের নগরীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে চলছে রমরমা দেহ ব্যবসা। অভিযোগ রয়েছে হোটেল ব্যবসার ক্ষেত্রে অধিকাংশ মালিক সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের নির্দেশিত নিয়মগুলো যথাযথ অনুসরণ করেন না। এক্ষেত্রে হোটেল মালিকদের গাফিলতি এবং বর্ডারদের অসচেতনতাকে দায়ি করছেন অপরাধ বিশ্লেষকরা। এছাড়া এসব হোটেলে মাদক ব্যবসা ও জুয়ার আসরসহ বিভিন্ন রকম অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ তো রয়েছেই।
জানা গেছে, কিছু কিছু আবাসিক হোটেলের মালিক ও কর্মচারীরা বাড়তি লাভের আশায় হোটেল অভ্যন্তরে দেহ ব্যবসা, প্রতারণামূলক নানা কর্মকাণ্ড, মাদক ব্যবসা ও জুয়ার আসরের মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকারও অভিযোগ রয়েছে। এসব হোটেলে ভাড়া রুম মেলে ৫০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা। আর বিশ্বস্ত বা পরিচিত হলে ভাড়া কম রাখা হয়।
নগরীর কদমতলি বাস টার্মিনাল, চাঁদনী ঘাট, লালবাজার, সুরমা মার্কেট এলাকা, তালতলা, রেল স্টেশন এলাকা, ওসমানী মেডিকেল এলাকা, আম্বরখানা এয়ারপোর্ট রেড, দরগাগেট এলাকার অধিকাংশ হোটেলে রমরমা দেহ ব্যবসা চলছে। এসব হোটেলের বেশিরভাগের লাইসেন্স বা অনুমোদনও নেই।
চাঁদনী ঘাট এলাকার একটি হোটেলের ব্যবস্থাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তার হোটেলের লাইসেন্স আছে কি-না এ ব্যাপারে তিনি অবগত নন। বিষয়টি হোটেল মালিক ভালো বলতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, ‘বেশিরভাগ আবাসিক হোটেলেই সিসিটিভি ক্যামেরা ও বর্ডারদের ছবি তুলে রাখার ব্যবস্থা নেই। এছাড়া প্রতিদিনি রাত ১২টার মধ্যে আবাসিক হোটেলগুলোর বর্ডারদের নামের তালিকা পরিচয়সহ থানায় জমা দেয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু এটি হোটেল মালিকরা মানছেন না।
এদিকে সিলেট নগরীতে বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে ‘অসামাজিক কার্যক্রম’ বন্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সিলেট মহানগর পুলিশ। নগরীর বিভিন্ন এলাকার আবাসিক হোটেলে দীর্ঘদিন থেকে চলা অসামাজিক কার্যক্রম বন্ধে এবার বেশ নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। প্রায় প্রতিদিনই চালানো হচ্ছে অভিযান। ধরা পড়ছে এসব কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত তরুণ-তরুণী।
সবশেষ শুক্রবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দক্ষিণ সুরমা থানাধীন ভার্থখলা এলাকার অভি আবাসিক হোটেলে অভিযান চালিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত অবস্থায় ৭ নারী-পুরুষকে আটক করেছে দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশ। সিলেট মহানগর পুলিশের মিডিয়া শাখা জানায়, অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত থাকা অবস্থায় ৩ নারী ও ৪ পুরুরষকে আটক করা হয়েছে।
এর আগে ২ (ফেব্রুয়ারি) নগরীর লালবাজার হোটেল আল মিনার থেকে ৬ নারী পুরুষ আটক করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এর মধ্যে ২ জন মহিলা ও ৪ জন পুরুষ ছিলেন।
২০ জানুয়ারি রাতে নগরীর সোনালী আবাসিক হোটেল থেকে একই অপরাধে ১২ নারী-পুরুষকে আটক করে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। এর আগে ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় দক্ষিণ সুরমার হুমায়ুন রশিদ চত্বরস্থ তিতাস আবাসিক হোটেলে অভিযান চালিয়ে পাঁচ যুবতী ও নয় যুবকসহ মোট ১৪ জনকে আটক করে দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশ।
সবমিলিয়ে গেল কয়েক সপ্তাহে সিলেট নগরীর বিভিন্ন আবাসিক হোটলে অভিযান চালিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত থাকা অবস্থায় অন্তত ৩৯ জন নারী-পুরুষকে আটক করেছে পুলিশ। আটকৃতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানায় মহানগর পুলিশ।
এ বিষয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পলিশ কমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্ল্যা তাহের বলেন, সিলেটের আবাসিক হোটেগুলোতে অসামাজিক কার্যক্রম বন্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে মহানগর পুলিশ। প্রায় প্রতিদিনই এসব হোটেলে অভিযান চালানো হচ্ছে। অভিযানে এসব কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত তরুণ-তরুণী ধরাও পড়ছে; এবং তারে বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
অসামাজিক কার্যক্রম বন্ধে পুলিশের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান নগর পুলিশের এই কর্মকর্তা।