ক্ষুব্ধ লন্ডন প্রবাসী সিলেটীরা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ জুলাই ২০২০, ২:১১ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ :
বাংলাদেশ বিমানে লন্ডন ফেরত যাত্রীদের যাদের চূড়ান্ত গন্তব্য সিলেট, তাদেরও ঢাকা থেকেই লাগেজ সংগ্রহ করতে হচ্ছে। ঢাকায় ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হওয়ার পর তাদের ডমেস্টিক ফ্লাইটে সিলেটে পাঠানো হচ্ছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এমন সিদ্ধান্তে বিড়ম্বনায় পড়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বৃটিশ নাগরিকরা। তাদের লাগেজ টেনে ডমেস্টিক টার্মিনালে যেতে হচ্ছে যা করোনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। ঢাকা থেকে আবার নতুন করে বডিং পাস্ নিয়ে সিলেটে আসতে হবে।
ইমিগ্রেশন ঢাকায় হলেও লাগেজ সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের চেষ্টায় রয়েছে ঢাকা। এদিকে সরকারি ওই সিদ্ধান্তে নেট দুনিয়ায় অনেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন। এমন সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছেন তারা। বৃটিশ-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল হেলাল খান গতকাল ফেসবুক পোস্টে লিখেন- ‘গতকাল বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্স (সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ) একটি নোটিশ দিয়ে আমাদের জানিয়েছে যে, এখন থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সে যারা লন্ডন থেকে সিলেট যাবেন তারা ঢাকায় ইমিগ্রেশন করে সেখানেই তাদের ব্যাগেজ ক্লেইম করতে হবে এবং ঢাকা থেকে আবার নতুন করে বোর্ডিং পাস নিয়ে সিলেটে যাবেন! কেউ কি ভাবতে পারেন কতটুকু জুলুম-নিপীড়নমূলক মানসিকতা থেকে বিমানের ঐ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীরা এ কাজটি করছেন? নিঃসন্দেহে এটি একটি চরম সিলেট বিদ্বেষী আচরণ! একজন ব্যবসায়ী হিসেবে নয়, সমাজের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি- আমাদের পূর্ব পুরুষদের রক্ত ঘামে গড়া দেশের মানুষের সঙ্গে এই অমানবিকতার শেষ হোক! আসুন এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই একসঙ্গে।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা লন্ডন প্রবাসী সৈয়দ হক বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিমানকে লাভজনক প্রতিষ্ঠান করার যে উদ্যোগ গ্রহন করেছেন তা ব্যাহত করতে বিমানের একটি চক্র এই কাজটি করেছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে লন্ডন প্রবাসী সিলেটিরা বিমানকে বাদ দিয়ে অনেক কম ফেয়ারে অন্য এয়ার লাইন্সে ভ্রমন করতে বাধ্য হবে। আর তখন বিমান এই রুটে লোকসানের মুখোমুখি হবে।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতরা লন্ডনে হাইকমিশনের দ্বারস্থ হয়েছেন। তারা এ সিদ্ধান্তের পরিবর্তন চেয়েছেন। দাবি জানিয়েছেন প্রয়োজনে সিলেটে আইসোলেশন সেন্টার করার, তবুও তাদের ইমিগ্রেশন যেন সিলেটে হয় এবং লাগেজ যেন সিলেটই যায়। করোনা ঠেকাতে ঢাকার নেয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্তে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বৃটিশ নাগরিকদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বাংলাদেশ হাইকমিশনের তরফে জানানো হয় তারা এ বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন। দায়িত্বশীল প্রতিনিধিরা বলছেন, সরকারি সিদ্ধান্তের বিষয়ে তারা জানার চেষ্টা করছেন। একই সঙ্গে কমিউনিটিকেও বিষয় অনুধাবনের অনুরোধ করা হচ্ছে। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, করোনা বিষয়ক সরকারি বেশ কিছু সিদ্ধান্তে লন্ডনস্থ বাংলাদেশ কমিউনিটির প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে তারা অবহিত। যতটা সম্ভব তা শিথিল করার চিন্তায় এবং বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বৃটিশদের কষ্ট লাঘবে পুরো বিষয়টি পর্যালোচনার মধ্যে রয়েছে।
এদিকে এই খবরে সিলেটের মানুষও মর্মাহত হয়েছেন। তারা বলছেন যেখানে সিলেট-লন্ডন বিমানের সরাসরি ফ্লাইট চালু হবার কথা ছিলো জুলাই মাসের শুরুতে। সেখানে এ ধরনের সিদ্ধান্ত মোটেই গ্রহন যোগ্য নয়। তারা এ ব্যাপরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
গ্রেটার সিলেট ডেভেলপম্যান্ট এন্ড ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল ইন ইনকে সেন্ট্রাল প্রচার সম্পাদক সুফি সুহেল আহমদ বলেন, সিলেট-লন্ডন সিলেট সরাসরি ফ্লাইট চালু প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবি। গত এপ্রিল থেকে সরাসরি ফ্লাইট চালুর কথা থাকলেও তা হয়নি। ঢাকায় ইমিগ্রেশন ও লাগেজ ক্লেইম-সরাসরি ফ্লাইট বন্ধের পাঁয়তারা বলে মন্তব্য এ প্রবাসী কমিউনিটি নেতার। প্রবাসীদের অধিকার রক্ষার আন্দোলনে দল মত নির্বিশেষে সকলকে সোচ্চার হবার আহŸান জানান তিনি। এ বিষয়ে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদেরও হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী কমিউনিটি নেতা মোবারক আলী ও বিমানের এরুপ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, এ সিদ্ধান্ত প্রবাসীরা মেনে নিতে পারেন না। এ ব্যাপারে শিগগিরই বিমান মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।