বাবা-মায়ের ঝগড়ায় এতিম হলো দুই শিশু
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ জুন ২০২০, ১২:৩২ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ :
‘ভালো থাকিস বাবারা, ভালো হয়ে ফিরে আসিস, সমাজের অন্ধকার থেকে দূরে থাকিস, আলো হয়ে জ্বলে উঠিস।’
মৌলভীবাজার জেলা পুলিশের ফেসবুক পেজে দুই শিশুর ছবি দিয়ে এ স্ট্যাটাস দিয়েছেন এসপি ফারুক আহমদ। এরইমধ্যে এসপির দেয়া স্ট্যাটাসের নেপথ্যের কাহিনি অনেকের মনে প্রখর দাগ কেটেছে। সৃষ্টি করেছে ভিন্ন মানবিক আবেদন।
সবার একই প্রশ্ন, এ শিশু দুটির তো কোনো দোষ নেই। তবে কেন তাদের ভাগ্যের এ নির্মম পরিণতি! ওই দুই শিশুর বাবা-মায়ের কলহের জেরে তাদের ঠিকানা আজ অন্য এক পৃথিবীতে। যে ঠিকানার নাম এতিমখানা। নির্মম ভাগ্যের শিকার দুই শিশু হলো ইব্রাহিম মিয়া ও ফাহিম মিয়া। ইব্রাহিমের বয়স ১০ বছর, ফাহিমের ৫ বছর।
দীর্ঘদিনের ঝগড়া চলে আসছিল স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে। একপর্যায়ে দুই শিশু সন্তান রেখে স্ত্রী চলে যান মায়ের কাছে। এতে মানসিকভাবে অস্থির হয়ে ওঠেন স্বামী আজগর আলী। ক্ষোভে শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় স্ত্রী ও শাশুড়িকে হত্যা করেন। এ ঘটনায় গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কারাবাস করছেন আজগর আলী।
মা-নানি মারা গেছেন। বাবা জোড়া খুনের আসামি হয়ে কারাগারে। অসহায় দুটি শিশুকে দেখার কেউ নেই। পুলিশের সহযোগিতায় এখন তাদের ঠিকানা কলো সরকারি এতিমখানায়।
মঙ্গলবার মৌলভীবাজারের এসপির নির্দেশে শিশু দুটিকে সিলেটের একটি এতিমখানায় রেখে এসেছেন সিনিয়র এএসপি (শ্রীমঙ্গল সার্কেল) আশরাফুজ্জামান।
গত ৪ জুন রাতে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের আশিদ্রোন ইউপির পূর্ব জামসী গ্রামের জায়েদা বেগম ও তার মেয়ে ইয়াসমিন আক্তার নিজ ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন। পরদিন ৫ জুন দুপুর ১২টার দিকে মা-মেয়ের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তাদেরকে হত্যা করেন ইয়াসমিনের স্বামী আজগর আলী। তার বাড়ি সিন্দুরখান ইউপির বেলেরতল এলাকায়।
ইয়াসমিন-আজগর দম্পতির সংসারে দুটি ছেলে সন্তান। হত্যাকাণ্ডের ঘটনার আনুমানিক প্রায় ১৫ মাস আগে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়ার জের ধরে দুই সন্তান রেখে ইয়াসমিন তার মায়ের সঙ্গে মায়ের বাড়িতে চলে যান। তারপর থেকে সেখানেই অবস্থান করে আসছিলেন। এ নিয়ে অনেক বিচার-সালিস হয় কিন্তু ইয়াসমিন আর স্বামীর বাড়িতে ফিরে আসেননি। দুটি সন্তান নিয়ে আজগর আলী তার দাদির সঙ্গে বসবাস করতেন। ইয়াসমিন আসতে রাজি না হওয়ায় আজগরের মনে বিশ্বাস জন্মায় যে ইয়াসমিনের মা তার মেয়েকে স্বামীর বাড়ি না যেতে প্রলুব্ধ করছে। এতে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে আজগর স্ত্রী ও শাশুড়িকে হত্যা করেন। ঘটনার পর আজগরকে সিন্দুরখান এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের আজগর তার স্ত্রী ইয়াসমিন ও শাশুড়িকে হত্যার দায় স্বীকার করে হত্যার বর্ণনা দেন।
এরপর থেকে তাদের দুই শিশু সন্তানের দায়িত্ব নেয় মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ। তাদেরকে খাবার এবং কাপড় দেয় পুলিশ। কিন্তু দুই শিশুকে দেখার কেউ না থাকায় অবশেষে মঙ্গলবার দুপুরে সিলেটের বাগবাড়ী সরকারি শিশুসদনে (এতিমখানা) পাঠিয়েছে পুলিশ।
মৌলভীবাজারের সিনিয়র এএসপি ( শ্রীমঙ্গল সার্কেল) আশরাফুজ্জামান বলেন, সচেতন মহলের পরামর্শ ও এসপির সার্বিক তত্ত্বাবধানে শিশু দুটিকে সরকারি এতিমখানায় পাঠানো হয়েছে। অনেকেই তাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ এবং জীবনের নিরাপত্তার জন্য এতিমখানায় পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। মানবিক দৃষ্টিতে পুলিশও তাই মনে করে। ফলে তাদেরকে সিলেটের একটি এতিমখানায় দেয়া হয়েছে।