বিশ্ব বই দিবস আজ: জানুন জাকির মোহাম্মদ’র ভাবনার কথা…
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ এপ্রিল ২০২০, ১১:০৯ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক :
আজ ২৩ এপ্রিল বিশ্ব বই দিবস। ইউনেস্কোর উদ্যোগে ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতিবছর এই দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। বই দিবসের মূল উদ্দেশ্য হলো, বই পড়া, বই ছাপানো, বইয়ের কপিরাইট সংরক্ষণ করা ইত্যাদি বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানো। তবে এই বছর বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দিনটিও লকডাউনে আবদ্ধ। দিবসটি উপলক্ষে সরকারিভাবে আনুষ্ঠানিক কোন আয়োজনও নেই।
তবে ঘরবন্দি এই করোনার আকালে আজকে বিশ্ব বই দিবস উপলক্ষে কবি, গল্পকার জাকির মোহাম্মদ’র একটি অণুসাক্ষাৎকার নিয়েছে সুরমানিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন পত্রিকার স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ইমতিয়াজ আহমেদ।
সুরমা নিউজ : ঘরবন্ধি আছেন,করোনার এই সময়টি কিভাবে কাটছে?
জাকির মোহাম্মদ: ইমতিয়াজ শুভেচ্ছা জানাচ্ছি আপনাকে। করোনার জন্য মনটা খারাপ,চারপাশের বিভৎস অবস্থা,নিয়মহীনতা আমাকে কষ্ট দিচ্ছে। আবার যারা খুব চেষ্টা করে যাচ্ছেন এই অনিয়মের ভেতর মনপ্রাণ দিয়ে,শ্রম দিয়ে ঘাম দিয়ে তাদের জন্য বুকভরা ভালোবাসা,শ্রদ্ধা। বেশি সময় ব্যয় হচ্ছে বই পড়ে। পড়ছি,পড়ছি,পড়ছি।
সুরমা নিউজ: কী পড়তে ভালোবাসেন?
জাকির মোহাম্মদ: অবশ্যই প্রবন্ধের বই, গল্প, উপন্যাস আর কবিতা।
সুরমা নিউজ: কার কার প্রবন্ধ,কবিতা,গল্প বা উপন্যাস বেশি পড়েন?
জাকির মোহাম্মদ: নাম ম্যানশন করা কঠিন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,কাজী নজরুল ইসলাম,বনফুল,প্রমথ চৌধুরী’র রচনা সমগ্র তো পড়ছিই সাথে বাংলাদেশের প্রায় সকল বড় লেখকের রচনাসমগ্র সংগ্রহে আছে। পড়ছি,প্রতিদিন।
সুরমা নিউজ: শুধুই কী দেশীয় লেখকের বই পড়েন?
জাকির মোহাম্মদ: অবশ্যই না, বিশ্বসাহিত্য সাহিত্যও আমার প্রিয়। স্পেশালি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে জব করার সুবিধা পৃথিবীর সকল ক্লাসিক বই পড়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। এখনও সংগ্রহ করছি।
সুরমা নিউজ: বই পড়তে উৎসাহ পেয়েছিলেন কিভাবে?
জাকির মোহাম্মদ: সে এক লম্বা কাহিনী। সেটি বলছি না,শুধু এতটুকু বলি সপ্তম শ্রেনীতে পড়াকালীন সময়ে আমার তৃতীয় বোনের বান্ধবীর উনার কাছে দেয়া কিছু চিঠি আমার হাতে চলে আসে। সেগুলি পড়তে পড়তেই এক সময় তাদের কাছে থাকা উপন্যাস দিয়ে হাতেখড়ি। পরে দিলোয়ার আর আমার যৌথভাবে বই সংগ্রহ করা পড়া। সেই থেকে শুরু।
সুরমা নিউজ: কেমন বই সংগ্রহে আছে আপনার?
জাকির মোহাম্মদ: বলার মত সংগ্রহ নেই,তবে বই আছে। একজনের নিয়মিত পড়লে বছর দুয়েক তো লাগবেই পড়ে শেষ করতে।
সুরমা নিউজ: আপনার ক্যাম্পাস সময় কেমন মিস করেন?
জাকির মোহাম্মদ: মুরারিচাঁদ কলেজ ক্যাম্পাসের সময়টা আমার কাছে সবচে সেরা সময়। তবে ক্যাম্পাসে ছাত্রকালীন সময়ের চেয়ে ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক সময় আমার ভালো কেটেছে। ছাত্রাবস্থায় কেবল আড্ডা,ক্লাস,স্যারের বাসা। আর পরের সময়টা পুরো ক্যাম্পাসকে মুঠোয় নিয়ে হাঁটার আনন্দ।
সুরমা নিউজ: মুরারিচাঁদ কলেজে কোন কোন সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন?
জাকির মোহাম্মদ: মুরারিচাঁদ কলেজের প্রতিটি সংগঠনই নিজের সংগঠন বলতে ভালো লাগে। তবে কাজ করেছি জাতীয় কবিতা পরিষদ,পরে (মুকপ),যুগান্তর স্বজন সমাবেশ,প্রথম আলো বন্ধুসভা, রোভার স্কাউট, ট্যুরিস্ট ক্লাব অব এম সি কলেজ, এবং সর্বশেষ জাতীয় পুরস্কার জয়ী সংগঠন থিয়েটার মুরারিচাঁদ’র সাথে ওতপ্রোতভাবে কাজ করেছি,করছি। একজন কর্মী হয়েই কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।
সুরমা নিউজ: গণমানুষের কবি দিলওয়ারের সাথে আপনার খুব ভালো সম্পর্ক ছিল,এটি কিভাবে সম্ভব হয়েছিল?
জাকির মোহাম্মদ: আমার সৌভাগ্য আর দূর্ভাগ্য দুটিই বলতে পারেন। সৌভাগ্য এ কারণে কবি দিলওয়ার খুব স্নেহ করতেন। আর দূর্ভাগ্য হলো আরও বেশী দিন কবির সান্নিধ্য পাইনি বলে। শিশু সাহিত্যিক জসীম আল ফাহিম, কবি এখলাসুর রাহমান’র কল্যাণে কবি দিলওয়ারের কাছাকাছি থেকেছি। এক বছর কবি দিলওয়ার পরিষদে কাজও করেছি। কবি তীর্থে এখনও অবসরে যাই।
সুরমা নিউজ : নাটক পাড়ায় আপনার দৌরাত্ম্য দেখেছি, কিছু বলবেন?
জাকির মোহাম্মদ: না না, দৌরাত্ম্য কথাটার সাথে একমত না। সম্মানিত প্রিয় নাট্যজনদের সাথে কাজ করার চেষ্টা আমার আছে। গুনীজনদের সাথে পথ চলতে ভালো লাগে। কত কিছু শেখা যায়। এই যে করোনার সময় সিলেটের নাট্যজন যেভাবে সকল ভয়কে দূরে রেখে সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করেছেন এজন্য নাট্যজনদের একদিন বাংলাদেশ স্মরণ করবেই।
সুরমা নিউজ: আজকের বিশ্ব বই দিবসে প্রত্যাশা কি করতে পারেন?
জাকির মোহাম্মদ: প্রথমত এবং শেষ প্রত্যাশা আজকের দিনে করোনা যেভাবে হঠাৎ করে পৃথিবীতে এসেছে সেটি এভাবেই যেন হঠাৎ করে বিলিন হয়ে যায়। এই ঘরবন্দি অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার সকল প্রসেসিং শুরু হোক। দীর্ঘমেয়াদি ঘরবন্ধি আমাদের কষ্ট বাড়িয়ে তুলবে।
সবার বই পড়া অভ্যাসটা গড়ে উঠুক। সকালে বই,দুপুরে বই,রাতে ঘুমোবার আগে বই পড়ে যেন ঘুমটা দিই।
সুরমা নিউজ: আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমাদের মূল্যবান সময় দেয়ার জন্য।
জাকির মোহাম্মদ: শুভেচ্ছা আর ধন্যবাদ সুরমানিউজকে। আপনার প্রতিও শুভেচ্ছা। শুভরাত্রি।