করোনা: ১০মাস ১০ দিন পেটে রাখা ছেলেরা রাস্তায় ফেললো, অসহায় মায়ের আকুতি
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ এপ্রিল ২০২০, ৭:৫৩ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ :
‘ঢাকা থাইক্ক্যা কেডা আইছে, আর এরা কয়- আমি বুঝি এরার বাড়িত গেছি। এর লাগি আমারে করোনা কইয়া বাইর কইরা দিছে। আমার নাকি করোনা হইছে।’ করোনা সন্দেহে নিজের পেটে দশ মাস দশ দিন ধরা ছেলেরা তাকে রাস্তায় ফেলে গেছে। দুই দিন ধরে অভুক্ত অমৃতবালা দাস এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন। স্কুলের বারান্দায় বসে আছেন তিনি। পুরনো সাদা শাড়িতে বিধ্বস্ত লাগছিল তাকে। কথা বলছিলেন জড়তা নিয়ে। তবে তার সর্দি-কাশি বা করোনার প্রাথমিক কোন উপকরণ লক্ষ্য করা গেল না।
ঢাকাফেরত শ্রমিকের বাড়ি যাওয়ার অভিযোগে নাকি তার সন্তানরা বাড়ি থেকে বের করে দেন বলে তিনি জানান। তবে ছেলেদের এই অমানবিক কাজে উৎসাহ দেন পাড়ার লোকজনও।
ওই নারী বলেন, আমি কোন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয় নাই। নিয়ামতপুর গ্রামে সম্প্রতি ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে গ্রামে আসেন অমরচাঁদ দাস। তারা বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। ১২ এপ্রিল কে বা কারা গুজব ছড়ায় ওই বৃদ্ধা নারী তাদের বাড়ি গিয়ে চা খেয়েছেন। তারপর থেকেই তার ছেলেরা ও পাড়া-প্রতিবেশী তাকে গ্রামছাড়া করে।
মহিলা ইউপি সদস্য জ্যোৎস্না রাণী দাসের কথাও শুনেনি ছেলেরা। পরে ১৪ এপ্রিল বুধবার ওই নারী ২নং ওয়ার্ড সদস্য সুব্রত সরকারের কাছে যান। কিন্তু তাকে না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ওই নারী।
জানা যায়, সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউপির নিয়ামতপুর গ্রামের বাসিন্দা বিধবা অমৃতবালা দাসকে (৮০) করোনা রোগী সন্দেহে গ্রামছাড়া করে দিয়েছে। ঘর থেকে বের করে দেয়ায় তিনি পথে পথে ঘুরছেন। তার দুই ছেলে যোগেশ দাস ও রণধীর দাস। গত ১২ এপ্রিল ওই বৃদ্ধা নারীকে গ্রামছাড়া করা হয় বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে ২নং ওয়ার্ড সদস্য সুব্রত সরকার বলেন, ঘটনাটি অমানবিক। আমি খোঁজ নিচ্ছি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মুক্তাদির হোসেন বলেন, আমি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে অবগত করেছি। তার কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হবে। প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পাঠাবেন বলে তিনি জানান।