সুনামগঞ্জে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির আবেদনের হিড়িক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ মার্চ ২০২০, ১:১৫ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে শুরু থেকেই ছিল তর্ক-বিতর্ক। তাছাড়া ফলাফল প্রকাশের পরও হাই কোর্টের রায়ে বেশ কয়েকটি জেলায় স্থগিত করা হয়েছিল শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া। তার ফলস্বরুপ শিক্ষক নিয়োগে উত্তীর্ণ শিক্ষকরা প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন অনেকবার। অনেক চড়াই-উতরাইয়ের পর সুনামগঞ্জে প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হলেও সেখানে এখন বদলির আবেদনের হিড়িক।
বিদ্যালয়ে যোগদানের এখনও ৭ দিন না হলেও নিয়োগকৃত বিদ্যালয় থেকে বদলির জন্য আবেদন জমা হচ্ছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে। নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষককে তাদের নানা অজুহাত দেখিয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর করছেন আবেদন।
কিন্তু কর্তৃপক্ষ বলছেন, যাদের সমস্যা গুরুতর ধরনের তাদেরই আবেদন বিবেচনা করা হবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর সুনামগঞ্জের ১১টি জেলায় প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছেন ৬২১ জন শিক্ষক। সেখান থেকে কয়েকজন অন্য চাকুরীর সন্ধান পেয়ে যাওয়ার পর নিয়োগপত্র পান ৬১৩ জন শিক্ষক। যার মধ্যে থেকে আবার সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলায় যোগদান করেছেন ৬০২ জন শিক্ষক।
বাকিরা বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকায় এখনও তাদের নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মস্থলে যোগদান করতে পারেননি। যার মধ্যে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ৮, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ৫, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় ৩১, তাহিরপুর উপজেলায় ১০৮, জামালগঞ্জ উপজেলায় ২৯, দিরাই উপজেলায় ৫৬, ধর্মপাশা উপজেলায় ১১১, শাল্লা উপজেলায় ২৬, জগন্নাথপুর উপজেলায় ১৬৫, দোয়ারাবাজার উপজেলায় ২৮ এবং ছাতক উপজেলায় ৩৫ জন শিক্ষক তাদের কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু যোগদানের এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই প্রায় ১৫০টির অধিক বদলির আবেদন জমা পড়েছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে।
বাবা-মা একা অথবা নিজ বাড়ি থেকে ৩০-৪০ কিলোমিটার দূর অথবা দুর্গম এলাকা বলে বাড়ির পাশের কোনও বিদ্যালয়ে পদায়ন করার জন্য আবেদন করছেন ওই সকল শিক্ষকরা।
বাড়ির পাশে বিদ্যালয়ে পদায়নের জন্য আবেদন করা তাহিরপুর উপজেলার জন্টু রায় বলেন, আমি বাদাঘাট ইউনিয়নে থাকি। কিন্তু আমাকে জয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পদায়ন করা হয়েছে যা আমার বাড়ি থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে। হাওর এলাকা হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থাও খুব খারাপ এবং বাসায় আমার মা একা থাকেন। তাই বিদ্যালয়টি দূরে হওয়ায় আমি আমার বাড়ির পাশের বিদ্যালয়গুলোতে দেওয়ার জন্য আবেদন করেছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বদলির জন্য আবেদন করা এক মহিলা শিক্ষক বলেন, আমার বাড়ি জগন্নাথপুর পৌর শহরে। কিন্তু আমাকে যেখানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সেখানে যেতে হলে আমাকে ৩টি গাড়ি পরিবর্তন করতে হয়। আমি একজন মেয়ে মানুষ। আমার জন্য এতো দূর যাওয়া-আসা করা বিপদজনক এবং ব্যয়ও অনেক বেশি। তাই আমি আবেদন করেছি আমাকে আশেপাশের কোনও বিদ্যালয়ে দেওয়ার জন্য।
জগন্নাথপুর উপজেলার নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক মিন্টু চন্দ্র দেব বলেন, আমার বাড়ি থেকে ৩৯ কিলোমিটার দূরে আমাকে পদায়ন করা হয়েছে। বর্ষাকালে সেখানে যাওয়া-আসা করা খুব কষ্টকর। পাশাপাশি বর্তমানে যাওয়া-আসা করা কষ্টসাধ্য। আর পরিবারের একমাত্র ছেলে আমি। তাই আমার জন্য জায়গাটি অনেক দূরে হয়ে যায়।
অন্যদিকে ধর্মপাশা উপজেলায় নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক এমদাদুল হক বলেন, আমাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে মধ্যনগর থানার বাঙাল ভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কিন্তু জানুয়ারিতে আমার স্ত্রীর ক্যান্সার ধরা পড়ায় সেখানে গিয়ে ক্লাস করানো আমার জন্য কষ্ট হয়ে যায়। আর আমার স্ত্রীর চিকিৎসাও করাতে হচ্ছে। সেজন্য আমি আবেদন করেছি আমাকে বাড়ির পাশে কোনও বিদ্যালয়ে পদায়ন করে দেওয়ার জন্য।
শিক্ষাবিদ পরিমল কান্তি দে বলেন, প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের সর্বক্ষেত্রে শিক্ষার মান বৃদ্ধি করার জন্য তাদের যেখানে পদায়ন করা হয়েছে সেখানেই যোগদান করা প্রয়োজন। যোগদানের শুরুতেই যদি বদলির আবেদন আসে সেটি সুন্দর দেখায় না। তবে যারা দুর্গম এলাকায় থেকে বদলির আবেদন করেছেন তাদের আবেদন বিবেচনা করে যেন নতুন কর্মস্থলে এক বছর হওয়ার পর বদলি করা হয়।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জিল্লুর রহমান বলেন, আমাদের কাছে অনেকগুলো আবেদন জমা পড়েছে। সেখান থেকে আমরা নারী শিক্ষকদের বিষয়টি অগ্রাধিকার দিলেও সব আবেদন বিবেচনার মাধ্যমে দেখা হবে। যাদের সমস্যা খুব গুরুতর তাদেরই আমরা কাছের বিদ্যালয়ে পদায়নের ব্যবস্থা করবো। বাকিরা তাদের কর্মস্থলেই থাকবেন।