ডাকাত প্রতিরোধে সিলেটে মাঠে পুলিশ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১২:১৭ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
হঠাৎ করে বেড়ে গিয়েছিল ডাকাতি। কয়েকটি ঘটনায় আতঙ্কও তৈরি হয়। আবার রাতারাতি সেটি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। তবে- বসে নেই পুলিশ। ডাকাতদের খোঁজে চলছে অভিযান। রাত হলেই অভিযানে নামে পুলিশ। ধরা পড়ছে ডাকাতরা। গত এক সপ্তাহে অন্তত ১০ জনের মতো ডাকাতকে গ্রেপ্তার করেছে সিলেট জেলা পুলিশ।
বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে একজন, গুলিবিদ্ধ হয়েছে আরো একজন। জকিগঞ্জের কুখ্যাত ডাকাত গুল্লি কামালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ বলছে- সিলেটের ডাকাতি বন্ধ করতে ডাকাত আস্তানাগুলোকে চিহ্নিত করে অভিযান চলছে। ডাকাতরা যাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সিলেটের পাহাড়ি, হাওর ও সীমান্ত এলাকা হচ্ছে ডাকাতদের আস্তানা। যুগযুগ ধরে এসব ডাকাত সিলেটে ডাকাতি করে বেড়াচ্ছে। তার ওপর আছে বাইরের ডাকাতদল। তারা ডাকাতির জন্য সিলেটে বাইরে থেকে এসে অবস্থান নেয় বিভিন্ন কলোনিতে। এরপর নগরীতে তারা ডাকাতি করে বেড়ায়। এবার সিলেট নগরীতে ডাকাতদলের তেমন উপদ্রব লক্ষ্য করা যায়নি। তবে- কয়েক দিন আগে কলাপাড়া আবাসিক এলাকায় জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেত্রী নাহিদা চৌধুরীর ভাড়াটে বাসায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ডাকাতদের চিহ্নিত করার পর জালালাবাদ থানায় মামলা হয়েছে। ঘটনার পর পুলিশের অভিযান শুরু হওয়ায় ডাকাতরা এলাকা থেকে পালিয়েছে। কয়েকদিন আগে সিলেটের জৈন্তাপুরে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর তৎপর হয়ে উঠে ডাকাতরা।
ওসি শ্যামল বণিক জানিয়েছেন- ডাকাতির ঘটনার ২০ ঘণ্টার মাথায় ৫ ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর পর এলাকায় স্বস্তি ফিরেছে। জৈন্তাপুরের সীমান্ত এলাকায় ডাকাতদের বসবাস। পুলিশ ডাকাত গ্রেপ্তারে প্রতিদিনই অভিযান চালাচ্ছে। ডাকাত প্রতিরোধে সচেতন হয়ে উঠেছেন জৈন্তাপুরের মানুষ।
পুলিশ জানায়- বুধবার সিলেটের গোলাপগঞ্জ থেকে একাধিক মামলার আসামি আবদুল মান্নান নামের এক ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধৃত ডাকাত উপজেলার বাঘা এলাকার গোলাপনগর উত্তরগাঁও-এর মৃত আছাব আলীর ছেলে। পরবর্তীতে মান্নানকে থানায় নিয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে পুলিশ গোলাপগঞ্জের তহিপুর গ্রামে অস্ত্র উদ্ধারের লক্ষ্যে বুধবার দিবাগত রাত আড়াইটায় অভিযান চালালে ওত পেতে থাকা মান্নানের সহযোগীরা গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়। এ সময় এসআই পিন্টু সরকার ও কনস্টেবল রকি কাজীসহ পুলিশের এক সোর্স আহত এবং গ্রেপ্তারকৃত আসামি আবদুল মান্নান গুলিবিদ্ধ হয়। এরপর দুষ্কৃতকারীরা পালিয়ে গেলেও ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ১টি দেশীয় পাইপগান, ২ রাউন্ড কার্তুজ ও ২টি রামদা উদ্ধার করে। একই দিনে পুলিশ ওসমানীনগর থানার বাংলাবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিশের তালিকাভুক্ত ডাকাত আবুল কাশেম প্রকাশিত গুল্লি কামালকে গ্রেপ্তার করে। সে জকিগঞ্জ থানার শাহগলি প্রকাশিত খিলোগ্রাম সাকিনের মৃত আনু মিয়ার ছেলে। সে একাধিক মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি। গত ২৯শে জানুয়ারি ওসমানীনগর থানার বুরুঙ্গা এলাকার সাবেক চেয়ারম্যান মকদ্দুছ আলীর বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত ডাকাত গুল্লি কামাল জড়িত থাকায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে। এ ঘটনায় ডাকাতি মামলায় তাকে গত বৃহস্পতিবার কোর্টের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।
গতকাল পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন পিপিএম-এর বরাত দিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) লুৎফর রহমান জানান, সাধারণত শীতকালে সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় সংঘবদ্ধ ডাকাতদল হানা দেয়ার চেষ্টা করে থাকে। তাই সিলেট জেলায় ডাকাতি প্রতিরোধে সাম্প্রতিক সময়ে ডাকাতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে কয়েকজন ডাকাত সর্দার পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলি করতে গিয়ে নিহত হয়েছে এবং প্রতিদিনই কোনো না কোনো ডাকাত গ্রেপ্তার হচ্ছে।
এদিকে- ডাকাতির ঘটনার আরেক পরিচিত স্পট সিলেটের বিশ্বনাথের বাইপাস সড়ক। এই সড়কে গাছ ফেলে ডাকাতির ঘটনা পুরনো। ডাকাত আতঙ্ক থাকায় সন্ধ্যার পর কেউ আর এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতেন না। সম্প্রতি সময় কয়েকটি ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এর প্রেক্ষিতে গত সপ্তাহে পুলিশ ওই এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় সুড়িখাল নামক স্থানে এক ডাকাত নিহত হয়। এ ঘটনার পর ওই সড়কে আর ডাকাতি হচ্ছে না।
সুত্র:মানবজমিন