সুনামগঞ্জে চার কোটি টাকার হাসপাতাল এখন পশুর আশ্রয়স্থল!
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২:৫৭ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার জগদল ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটি উদ্বোধনের ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও চালু হয়নি চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম। প্রত্যন্ত এ হাওরপাড়ের মানুষের উন্নত চিকিৎসাসেবার স্বপ্ন নিয়ে নির্মিত হাসপাতালটি ছয় বছর ধরেই তালাবদ্ধ।
অনেকটা ঢাকঢোল পিটিয়ে উদ্বোধন করা হলেও চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ না দেওয়ায় চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন হাওরবেষ্টিত জগদল ইউনিয়নের ৩৯ গ্রামসহ আশপাশের এলাকার অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ। অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে হাসপাতালের সুরম্য পাঁচটি ভবনসহ ভেতরে থাকা চিকিৎসা উপকরণ ও আসবাবপত্র।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় ও স্থানীয়দের তথ্যমতে জানা যায়, ২০০৬ সালের ২১ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে স্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে দিরাই উপজেলার প্রত্যন্ত হাওরপাড়ের মানুষের উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে জগদল গ্রামে জগদল ২০ শয্যা বিশিষ্ট একটি আধুনিক হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয়। নির্মাণকাজ শেষে ২০১৩ সালের ২৩ অক্টোবর প্রয়াত নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হাসপাতালটির উদ্বোধন করেন।
কিন্তু উদ্বোধনের ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো চিকিৎসাসেবা পায়নি স্থানীয়রা।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের মূল ফটকসহ পাঁচটি সুরম্য ভবনের সবকটি ফটকেই ঝুলছে তালা, অযত্ন ও অবহেলায় পড়ে নষ্ট হচ্ছে হাসপাতালের চিকিৎসা উপকরণসহ ভবনের ভেতরে থাকা আসবাব। ভবন থেকে খসে পড়ছে পলেস্তারা। মরিচা ধরেছে লোহার গ্রিলে। ভেঙে পড়েছে জানালার কাচ। ভবনের চারপাশে জমেছে ময়লা-আবর্জনা। কোনো নৈশপ্রহরী কিংবা স্টাফ না থাকায় হাসপাতালটি এখন গবাদি পশুর আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।
জগদল গ্রামের সহিবুর রহমান বলেন, হাওরে এসব এলাকায় যাতায়াত ব্যবস্থা খারাপ থাকায় চিকিৎসাসেবার জন্য বর্ষায় নৌকা আর গ্রীষ্মে হেঁটে দূরে যেতে হয়। হাওরের এসব মানুষ সহজেই সেবা পেত এই হাসপাতালটি থেকে। কিন্তু এর সুবিধা থেকে গত ৬ বছর ধরে আমরা বঞ্চিত।
একই গ্রামের দরইছ আলী বলেন, হাসপাতালটির দেখাশুনার দায়িত্বে কেউ না থাকায় মাদক সেবনকারী আর জুয়াড়িদের অভয়াশ্রম হয়ে পড়েছে ভবনগুলো।
জগদল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শিবলী আহমদ বেগ বলেন, একাধিকবার কর্র্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, কিন্তু লোকবলের অজুহাতে চালু করছে না।
দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, জনবলের জন্য হাসপাতালটিতে চিকিৎসাসেবা চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। স্থানীয় সাংসদের সঙ্গে আলাপ করে দ্রুত হাসপাতালটি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে।