সতর্কতা জারি : সিলেটে ২৪ ঘণ্টায় ১৪ ডেঙ্গু রোগী, বাড়ছে সংখ্যা
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ আগস্ট ২০১৯, ১২:২২ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
সিলেটে ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু। বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। গতকাল বিকালে পর্যন্ত ৩৭ জন রোগী ভর্তি ছিলেন ওসমানী হাসপাতালে। ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ১৪ জন রোগী। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে- এখন পর্যন্ত যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে তারা ঢাকা ফেরত। স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী এখনো পাওয়া যায়নি সিলেটে। তবে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে- ডেঙ্গু নিয়ে সিলেটে সতর্কবার্তা জারি করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনের নির্দেশে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষা ও রোগীর চিকিৎসা বিনামূল্যে চলছে। ডেঙ্গু নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে গতকাল থেকে কেন্দ্রের নির্দেশে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ। হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে- চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। ওই রোগী ছিলেন ঢাকা ফেরত। এরপর আরো কয়েকজন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন মৌলভীবাজার সহ বিভিন্ন জেলার। এ পর্যন্ত ওসমানী হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন প্রায় ২০ জন রোগী। কিন্তু মঙ্গলবার বিকাল থেকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। ২৪ ঘণ্টায় ১৪ জন রোগী ভর্তি হন হাসপাতালে। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ গতকাল বিকালে জানিয়েছেন- যারা ভর্তি হচ্ছেন, তারা ঢাকায় সফর করেছেন। সিলেটে এসে ভর্তি হচ্ছেন। সিলেটে এডিস মশায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রোগী এখনো মিলেনি। তবে- আমরা সতর্ক আছি। চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রেখেছি। প্রতিদিনই ওসমানীতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় হাসপাতালে খোলা হয়েছে তিনটি ডেঙ্গু কর্নার। এর মধ্যে হাসপাতালের ২৭ নং ওয়ার্ডে পুরুষ, ৩ নং ওয়ার্ডে নারী ও শিশুদের জন্য শিশু ওয়ার্ডে বিশেষ কর্নার চালু করে চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ১৮ বেডে রোগী রেখে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। আক্রান্ত রোগীদের বিশেষ নজরদারিতে চিকিৎসা দেয়ার জন্য হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. শিশির চক্রবর্তীকে প্রধান করে ১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির সদস্যরা সার্বক্ষণিক রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার পাশাপাশি তাদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিচ্ছেন। গতকাল থেকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসাতালে আক্রান্ত রোগীদের পরীক্ষা শুরু হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন- পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনের নির্দেশের পর রোগ নির্ণয়ের দু’টি টেস্ট শুরু হয়েছে। এবং রোগীদের বিনামূল্যে এ সেবা প্রদান করা হচ্ছে। পাশাপাশি সব ধরনের চিকিৎসাও দেয়া হচ্ছে। আরো বেশি রোগী ভর্তি হলে তাদের চিকিৎসা সেবা হবে। গতকাল সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালককে টেলিফোনে এ নির্দেশনা দেন। সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি সিলেটের বেসরকারি হাসপাতালেও রোগীদের পরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে চিকিৎসার জন্য রোগীদের ওসমানীতেই প্রেরণ করা হচ্ছে। গতকাল সিলেট জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। এই সতর্ক বার্তায় সিলেট জেলার সব সরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়- সিলেটও ডেঙ্গু অধ্যুষিত এলাকার অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঘন বসতিপূর্ণ নগর এলাকা ও বর্তমান বর্ষা মওসুমের ফলে এ রোগ দ্রুত বিস্তার লাভ করে অতি সহজেই মহামারীর রূপ নিতে পারে। চলমান ও বিগত বছরগুলোর ঢাকার অভিজ্ঞতা সর্বস্তরের জনসাধারণ অবগত রয়েছেন। সিভিল সার্জনের আওতাধীন সকল স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনা ও ডেঙ্গু বিষয়ে মনিটরিং সেল গঠন করে মাঠপর্যায়ের কর্মীদের সার্বক্ষণিক সতর্ক পর্যবেক্ষণ ও তথ্য সংগ্রহ করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। সকল সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল ও জেলা হাসপাতালসমূহে বিনামূল্যে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সরকার কর্তৃক সকল বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডেঙ্গু শনাক্তকরণের পরীক্ষা সমূহের ফি নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। ডেঙ্গু শনাক্তকরণ ও চিকিৎসার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চিকিৎসকদের প্রস্তুত করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচির উদ্বোধন: ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরিচ্ছন্নতা ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী তিনদিনব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন করেছে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ। গতকাল বুধবার সকাল ১১টায় নগরীর শাহ্জালাল (রহ.) দরগাহ গেইট থেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে লিফলেট বিতরণ করেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, জেলার সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, সহ-সভাপতি আবদুল খালিক, এডভোকেট রাজ উদ্দিন, যুগ্ম সম্পাদক ফয়জুল আলোয়ার আলোয়ার, অধ্যাপক জাকির হোসেন, বিজিত চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক আজহার উদ্দিন জাহাঙ্গীর, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক জুবের খান, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক তপন মিত্র, আজহার উদ্দিন জাহাঙ্গীর, আবদুুস সোবহান, মতিন, জুনেদ আহমদ, মতি, বেলাল খান, বদরুল হোসাইন খান কামরান, রাহেল আহমদ চৌধুরী, আবদুল আলিম তুষার, শাওন আহমদ, আলী হোসাইন আলম প্রমুখ।