সিলেটে বন্যায় ক্ষতি ২শ ৯০ কোটি টাকা: সড়কগুলো বিধ্বস্ত, দুর্ভোগ চরমে
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ জুলাই ২০১৯, ৮:৪৪ অপরাহ্ণ
উপজেলা পর্যায়ের ১ হাজার ১৭৯ কিলোমিটার সড়ক বিধ্বস্ত
কাউসার চৌধুরী:
সিলেট বিভাগের চার জেলায় চলতি বন্যায় আন্তঃ উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের ১ হাজার ১৭৯ কিলোমিটার সড়ক বিধ্বস্ত হয়েছে। টাকার অংকে ক্ষতির পরিমাণ ২ শ’ ৯০ কোটি টাকারও বেশি। ৪ জেলার মধ্যে সর্বোচ্চ ৮শ ১৮ কিলোমিটার সড়ক বিধ্বস্ত হয়েছে সুনামগঞ্জ জেলায়। আর মৌলভীবাজার জেলায় সর্ব নি¤œ ক্ষতি হয়েছে ৩৪ কিলোমিটার। এল.জি.ইডি’র অধীনের যোগাযোগের এসকল সড়কগুলো বিধ্বস্ত হওয়ায় সাধারণ লোকজন দুর্ভোগে পড়েছেন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এল.জি.ই.ডি’র সিলেট বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শেখ মোহাম্মদ মহসীন জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর বর্তমান চিত্র ইতোমধ্যে এল.জি.ইডি’র প্রধান দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। বন্যায় পানি পুরোদমে সরে গেলে ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত পরিমাণ নিরূপন করা যাবে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর সংস্কারের জন্যে দ্রুত প্রকল্প নেয়া হবে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এল.জি.ইডি’র সিলেট বিভাগীয় অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বন্যায় সিলেট বিভাগের ৪ জেলার ৩৬ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সড়কগুলো পানিতে নিমজ্জিত হয়ে যায়। অনেক এলাকায় সড়কের উপর দিয়ে বয়ে যায় প্রবলস্রোত। এর ফলে সড়কগুলোর কার্পেটিং, ইট- পাথর উঠে মাটি সরে যায়। বানের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সড়কগুলোর বর্তমান চিত্র এমনই। অনেক সড়কে তৈরি হয়েছে অসংখ্য গর্ত। বিশ্বনাথ, জগন্নাথপুর সড়ক, বিশ্বম্ভরপুর- তাহিরপুর সড়কের অবস্থা করুন আকার ধারণ করেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর মধ্যে এই দুই সড়ক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্ভোগের মধ্যেই এসকল সড়ক দিয়ে লোকজন যাতায়াত করছেন। বন্যার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর সড়কগুলোর অবস্থা আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
এল.জি.ই.ডি সূত্র জানায়, সুনামগঞ্জ জেলার ১১ উপজেলার ২শ’ ৭৫টি সড়কের ৮১৮ দশমিক ১৪ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দোয়ারাবাজার উপজেলার ৬৬ সড়কে ১৮৪ দশমিক ৬৩ কিলোমিটার, শাল্লা উপজেলার ২৩ সড়কে ৪৫ কিলোমিটার, সুনামগঞ্জ সদরের ৩০ সড়কে ৬০ কিলোমিটার, দক্ষিণ সুনামগঞ্জের ৪২ সড়কে ১২৬ কিলোমিটার, দিরাইয়ের ৯ সড়কে ২৮ দশমিক ৮৬ কিলোমিটার, বিশম্ভরপুরের ৫১ সড়কে ১৬৮ কিলোমিটার, তাহিরপুরের ৩ সড়কে ১৬ দশমিক ৬৫ কিলোমিটার, জামালগঞ্জের ৬ সড়কে ৬ কিলোমিটার, জগন্নাথপুরের ২০ সড়কে ৭৫ কিলোমিটার, ধর্মপাশার ১৫ সড়কে ৫০ কিলোমিটার ও ছাতকের ১০ সড়কে ৫৮ কিলোমিটার, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ জেলার সড়ক বিধ্বস্ত হয়ে মোট ১শ’ ৯০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে সূত্র জানায়।
জানা গেছে, সিলেট জেলার ১৩ উপজেলায় মোট ২৬১ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার সড়ক বিধ্বস্ত হয়। এর ফলে প্রায় ৮০ কোটি টাকার ও বেশি ক্ষতি হয়েছে।
এল.জি.ই.ডি সূত্র জানায়, সিলেট সদর উপজেলায় ২৭ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার, বিশ্বনাথ উপজেলায় ৬ কিলোমিটার, ওসমানীনগর উপজেলায় ১৪ দশমিক ২৫ কিলোমিটার, দক্ষিণসুরমা উপজেলায় ৫ দশমিক ১৮ কিলোমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় ১০ দশমিক ৩৪ কিলোমিটার, বালাগঞ্জ উপজেলায় ২৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার জৈন্তাপুর উপজেলায় ১০ কিলোমিটার, গোয়াইনঘাট উপজেলায় ৬৭ দশমিক ৬০ কিলোমিটার, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ৫৪ দশমিক ২৪ কিলোমিটার, জকিগঞ্জ উপজেলায় ১০ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার, কানাইঘাট উপজেলায় ২০ কিলোমিটার, গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ১০ দশমিক ২২ কিলোমিটার ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় ২ দশমিক ৪০ কিলোমিটার সড়ক বিধ্বস্ত হয়েছে।
এল.জি.ই.ডি সূত্রে জানা গেছে, হবিগঞ্জ জেলার ৮ উপজেলার ৫৩টি সড়কে ৬৫ দশমিক ৮৬ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে প্রায় ১২ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় ৬ দশমিক ৪০ কিলোমিটার, লাখাইয়ে ৪ দশমিক ১১ কিলোমিটার, বাহুবলে ৫ কিলোমিটার, নবীগঞ্জে ৯ দশমিক ৯২ কিলোমিটার, বানিয়াচং এ ৫ দশমিক ২ কিলোমিটার, আজমিরীগঞ্জে ১৯ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার, চুনারুঘাটে ৫ দশমিক ৪০ কিলোমিটার ও মাধবপুরে ৯ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মৌলভীবাজার জেলার ৪ উপজেলার ১০ সড়কে ৩৪ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৮ কোটি টাকা। মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় ১২ কিলোমিটার, বড়লেখা উপজেলায় ৬ কিলোমিটার, কমলগঞ্জ উপজেলায় ১৪ কিলোমিটার ও শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ২ কিলোমিটার সড়ক বিধ্বস্ত হয়েছে। ৪ জেলায় বন্যা কবরিত ৩৬ উজেলার মধ্যে সর্বোচ্চ ১৮৫ কিলোমিটার সড়ক বিধ্বস্ত হয়েছে দোয়ারাবাজার উপজেলায়। আর সর্ব নি¤œ ২ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয় শ্রীমঙ্গল উপজেলায়।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এল.জি.ই.ডি’র সিলেট জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী এ.এস.এ মহসীন বলেন, আন্তঃ উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের সড়ক গুলোর চিত্র তুলে ধরে প্রধান দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। সড়কের কার্পেটিং উঠে যাওয়ায় লোকজন দুর্ভোগে পড়েছেন। অনেক সড়কে গর্তও হয়েছে। আমরা প্রকল্প তৈরি করব। পানি কমে যাওয়ার পরই সড়ক সংস্কারের কাজের প্রকল্প গ্রহণের পর প্রধান দপ্তরে পাঠানো হবে। দ্রুত সংস্কার করতে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। সূত্র- সিলেটের ডাক।