মৌলভীবাজারে অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত, লক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগ
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ জুলাই ২০১৯, ৬:০০ অপরাহ্ণ
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজারের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। কুশিয়ারা, মনু, ধলাই নদীর পানি বাড়ার ফলে নতুন করে গ্রামাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ইতিমধ্যে জেলার সদর উপজেলা, কমলগঞ্জ, রাজনগর উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন প্রায় লক্ষ মানুষ।
সোমবার (১৫ জুলাই) বিকেলের প্রতিবেদনে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানান, মনুর পানি বিপদসীমার ৮৫ সে.মি, কুশিয়ারা ৫৩ সে.মি ও ধলাই ২৪ সে.মি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে নদীতে ¯স্রোত বাড়ায় পানি নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখছে পাউবো।
জানা যায়, মৌলভীবাজার এ পর্যন্ত কুশিয়ার তিনটি ভাঙন দিয়ে পানি প্রবেশ করে সদর উপজেলার মনুমুখ ও খলিলপুর ইউনিয়নের ১৭ টি গ্রাম এবং কাউয়া দিঘি হাওরের পানি বৃদ্ধি আখাইলকুড়া ইউনিয়নের ৪ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কাউয়া দিঘি হাওরের পানি বৃদ্ধি পেয়ে ও কুশিয়ারর পানি বাঁধ উপচে রাজনগর উপজেলা ফতেহপুর ও উত্তরভাগ ইউনিয়নের ১৮ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ধলাইর রামপাশা বাঁধ ভাঙায় ও ঘোড়ামারার পূর্বের ভাঙন দিয়ে পানি প্রবেশ করে এবং বাঁধ উপচে কমলগঞ্জ উপজেলার পৌরসভা, আদমপুর, ইসলামপুর ও রহিমপুর ইউনিয়নের প্রায় ১৫ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
এদিকে অতিবৃষ্টিতে জেলার বড়েলেখা, জুড়ী ও কুলাউড়ার নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। জুড়ী উপজেলায় হাকালুকির পানি বৃদ্ধি পেয়ে জায়ফরনগর ও পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের প্রায় ১০ টি গ্রামে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এসব এলাকায় ক্রমশই পানি বাড়ছে বলে জানা যায়। কুলাউড়া উপজেলায় হাকালুকি হাওরের পানি বৃদ্ধি পেয়ে ভুকশীমইল, জয়চন্ডি, কাদিপুর ও বরমচালের নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে ভুকশিমইল ইউনিয়নে বেশ কয়েকটি পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এছাড়া উপজেলা টিলাগাও ও হাজীপুর ইউনিয়নে কয়েকটি এলাকায় মনুর বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় বাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করেছে।
বন্যা মোকাবেলায় ইতোমধ্যে জেলাজুড়ে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা ও ত্রাণ তৎপরতা শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে বন্যা দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে সদর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের জন্য চার মেট্রিক টন চাল ও শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কমলগঞ্জ উপজেলায় ৭ মেট্রিক টন চাল ও শুকনো খাবার বরাদ্দ হয়েছে। কুলাউড়া ও রাজনগরের আগাম ১০ মেট্রিকটব টন চাল ও শুকনো খাবার বরাদ্দ রয়েছে। এর বাইরে বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলা থেকে জেলায় ত্রাণের চাহিদা পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় ৪ টি আশ্রয় কেন্দ্র, কমলঞ্জে ৩ টি আশ্রয় কেন্দ্র ও রাজনগরে ৩ টি আশ্রয় কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্র কয়েক হাজার মানুষ ঠাই নিয়েছেন। তবে এর বাইরে বন্যার্ত মানুষ সংঘবদ্ধভাবে উঁচুস্থানে ও বিভিন্ন স্কুল-মাদ্রাসায় আশ্রয় নিয়েছেন।
তবে আশ্রয় কেন্দ্রে ত্রাণ পৌঁছালেও এর বাইরের বন্যার্তদের কাছে ত্রাণ পৌঁছাতে প্রশাসন দেরী করছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। রাজনগর উপজেলার খেসর পাড়া এলাকার সরেজমিনে দেখা যায় বন্যায় মানুষ রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে হাটু পানিতে ঘরবন্দী হয়ে আছেন। তাদের কাছে কোন ত্রাণ পৌঁছায়নি বলে জানান তারা।
মৌলভীবাজার সদর, বড়লেখা,জুড়ী, কমলগঞ্জ ও রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বন্যা মোকাবিলায় সর্বোচ্চ তৎপর রয়েছে উপজেলা প্রশাসন। এর মধ্যে প্রত্যেক উপজেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির মিটিং হয়েছে।সদর, রাজনগর ও কমলগঞ্জ উপজেলায় জেলা প্রশাসনের বরাদ্ধকৃত ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। এর সাথে শুকনা খাবার বিতরণও করা হয়। তবে বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলায় সেরকম কোনো বন্যা পরিস্থিতি না হলেও ত্রাণের চাহিদা পাঠানো হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফুল আলম খান বলে, বন্যাকবলিত প্রত্যেক উপজেলায় বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। উপজেলা থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ত্রাণ বন্যার্তেদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। খাদ্য গোদামগগুলো রাত অবদি খোলা রাখা আছে। ত্রাণের কোনো অভাব নেই।