জগন্নাথপুরে ঠিকাদারদের অবহেলা : আটকে আছে ১৪টি সড়কের ১৪ কোটি টাকার কাজ
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ আগস্ট ২০১৭, ৭:৩০ অপরাহ্ণ
জগন্নাথপুর প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে সড়ক সংস্কারের জন্য সরকার কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও ঠিকাদারদের গাফলতির কারণে কাজ আটকে আছে। ফলে দীর্ঘদিন ধরে জগন্নাথপুর উপজেলাবাসী দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। সরকারি দলের ঠিকাদার হওয়ায় এরা কাউকেই তোয়াক্কা করছেন না। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের বাস্তবায়নে জগন্নাথপুর উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ ১৪টি সড়কে ১৪ কোটি টাকা বরাদ্দে কার্যাদেশ প্রদান করা হলেও ঠিকাদারদের অবহেলার কারণে গুরুত্বপূর্ণ এসব সড়কগুলোতে কাজ হচ্ছে না।
স্থানীয় সংসদ সদস্য অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নানের প্রচেষ্টায় এসব সড়কে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করে ঠিকাদারদের কার্যাদেশ প্রদান করা হলেও তাদের গড়িমসির কারণে এসব সড়কে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর সূত্র জানায়, উপজেলার শিবগঞ্জ-বেগমপুর সড়কে ৫ কোটি ১৬ লাখ ৪৭ হাজার ৮৪১ টাকা বরাদ্দে কার্যাদেশ পায় লৌহজং নাসিম সুয়েব জে.বি কনস্ট্রাকশন। ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দুই কিলোমিটার কাজ করে বৃষ্টির অজুহাত দেখিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। উক্ত সড়কটি ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বিলিন হওয়ার পথে রয়েছে। ২৪ লাখ ৯৭ হাজার টাকা ব্যয়ে ধাওরাই-শেওড়া রাস্তার কাজ পায় ধর্মপাশার আনোয়ারা এন্টারপ্রাইজ। গত ৩ এপ্রিল তাদেরকে কার্যাদেশ দেয়া হলেও ঠিকাদার এলাকায় এখনো আসেননি।
৭৭ লাখ ১৫ হাজার ৭০৯ টাকা বরাদ্দে কাঠালখাইড়-ধাওরাই-জয়দা সড়কে ২ এপ্রিল কার্যাদেশ প্রদান করা হলেও কাজ শুরু করেনি সুনামগঞ্জের হাসান এন্টারপ্রাইজ। একই দিনে কার্যাদেশ পেয়ে হাসান এন্টারপ্রাইজ সুনামগঞ্জ ১ কোটি ৩১ লাখ ২৮ হাজার ৯৭৫ টাকা বরাদ্দে গোঁতগাঁও বিশ্বরোড থেকে স্বাধীনবাজার রাস্তার কাজ পেলেও এখন পর্যন্ত কোন কাজ করেনি। ৭৩ লাখ ১৭ হাজার ১৯৮ টাকা বরাদ্দে প্রভাকরপুর নন্দিরগাঁও সড়ক, ৯১ লাখ টাকা বরাদ্দে রানীগঞ্জ-অনন্ত গোলাম আলীপুর সড়ক, ১ কোটি ৫ লাখ ২২ হাজার ১০৮ টাকা বরাদ্দে নয়াবন্দর বিদ্যালয় থেকে শংকপুর সড়ক, ৯৭ লাখ ৩২ হাজার ১৯০ টাকা ব্যয়ে জগন্নাথপুর-বিশ্বনাথ-সড়ক হতে কাচন মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তার কাজ এখনও শুরু করেননি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা।
মজিদপুর-এরালিয়া সড়কে ৭১ লাখ ১৪ হাজার ৬৪৪ টাকা বরাদ্দ নিয়ে কার্যাদেশ পেয়েও হাসান এন্টারপ্রাইজ কাজ করছে না। একইভাবে ১ কোটি ২১ লাখ ২৮ হাজার ৯৭৮ টাকা বরাদ্দে কার্যাদেশ নিয়ে মাহবুব এন্টারপ্রাইজ সুনামগঞ্জ শিবগঞ্জ বাজার ও রানীগঞ্জ সড়ক উন্নয়ন কাজ ফেলে রেখেছে। ৮২ লাখ ৩৮ হাজার ৪৩৬ টাকা বরাদ্দের লামাটুকের বাজার গড়গড়িকান্দি সড়কের কাজ ছাদ মিয়া এন্টারপ্রাইজ কার্যাদেশ নিয়ে শুরু করলেও নিম্নমানের কাজের অভিযোগ রয়েছে। ৪৭ লাখ ৭৬ হাজার টাকা বরাদ্দে জেলা পরিষদ লহরী সড়কের কাজ পায় পরাগ এন্টারপ্রাইজ। গত ২ এপ্রিল কার্যাদেশ ফেলেও কাজ শুরুর খবর নেই।
বৃষ্টির কারণে রাস্তায় পানি জমে থাকায় ভবের বাজার-সৈয়দপুর রাস্তায় ৮ লাখ ৫৮ হাজার ১২৫ টাকা ও দাওরাই মাঝপাড়া থেকে মধ্যপাড়া রাস্তার ১৭ লাখ ৬০ হাজার ৮৮৫ টাকা বরাদ্দের কার্যাদেশ পেলেও তালুকদার এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এখনও কাজ শুরু করেনি। এছাড়াও শিবগঞ্জ-বেগমপুর সড়কে ৫ কোটি ১৬ লাখ ৪১ হাজার টাকা বরাদ্দে কাজ নেয় লৌহজং নাসিম সুয়েব জে.বি কনস্ট্রাকশন। কিন্তু কাজ শুরুর কোন খবর নেই। উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ এসব বেহাল সড়কে প্রতিদিন মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
কার্যাদেশ নিয়ে কাজ শুরু না করা প্রসঙ্গে হাসান এন্টারপ্রাইজ-সুনামগঞ্জের ঠিকাদার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘কার্যাদেশ পাওয়ার পর থেকে অব্যাহত ঝড়বৃষ্টি প্রাকৃতিক বিপর্যয় চলছে। এ অবস্থায় কাজ করার কোন সুযোগ নেই। বৃষ্টি কমলে বর্ষা মৌসুমের পর সড়কের কাজ শেষ করা হবে।’
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর-এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করে ঠিকাদারদেরকে কার্যাদেশ দিয়ে কাজ শুরু করার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত কাজ শুরু করেনি। একাধিকবার বলার পরও তারা কর্ণপাত করছেন না।’
এলজিইডির সুনামগঞ্জের সহকারী প্রকৌশলী ইব্রাহিম মিয়া জানান, ‘জগন্নাথপুরের সড়কগুলোর কাজ শুরু করতে ঠিকাদারদেরকে আমরা বার বার অনুরোধ করছি। বৃষ্টি কমলে কার্যাদেশপ্রাপ্ত ঠিকাদাররা কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছে।’