তীব্র যানজটের নগরীতে পরিণত হচ্ছে সিলেট : নিরসনে পরিকল্পনা কল্পনা থেকেই বিদায় -মেয়র আরিফ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ জুলাই ২০১৭, ১১:১০ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
সিলেট নগরীর নিত্যদিনের সমস্যা যানজট নিরসনে কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না। নগরীর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে যানবাহনের সংখ্যাও। কিন্তু সে তুলনায় বাড়েনি রাস্তাঘাট প্রশস্তকরণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগরীর অনেক বহুতল বাণিজ্যিক ভবন আছে যাদের নিজস্ব কোনো পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই। বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্মকর্তা তাদের পণ্য সরবরাহকারী গাড়ি অথবা পারিবারিক কাজে ব্যবহূত গাড়ি ইচ্ছামতো মেইন রোডে পার্কিং করে। শহরের মেইন রোডের সঙ্গে গড়ে ওঠা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধিকাংশেরই নিজস্ব কোনো পার্কিং ব্যবস্থা নেই। যার কারণে স্কুল শুরু হওয়া এবং ছুটির সময় শিক্ষার্থীদের বহনকারী যানবাহনগুলো যানজটের সৃষ্টি করে। সিলেট গুরুত্বপূর্ণ বিভাগীয় শহর হলেও আয়তনের দিক দিয়ে তেমন বড় নয় জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভৌগোলিকভাবে এ শহরের এক পাশে সুরমা নদী অপর দুই পাশে পাহাড়ি অঞ্চল ও সরকারি টি-স্টেট। যার কারণে এই তিনদিক দিয়ে শহর প্রশস্ত হওয়ার সুযোগটা স্বাভাবিকভাবেই কম। সে কারণেই মূলত সময়ের ব্যবধানে শহর প্রশস্ত হওয়ার চেয়ে অন্যান্য শহরের তুলনায় হাইরেজ বিল্ডিংগুলোর আধিক্য বেশি। নগর পরিকল্পনাবিদ ড. জহির বিন আলম বলেন, রাস্তা বৃদ্ধি হচ্ছে না কিন্তু জনসংখ্যা ঠিকই বাড়ছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হল, যানজট নিরসনে নগরবাসীকে সচেতন হতে হবে। যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং করা যাবে না। ড. জহির আরও বলেন, সিলেট নগরীর চারদিকে বাইপাস রাস্তা বা রেললাইন হলে নগরীতে যানবাহনের চাপ কমবে। তখন যানজটও নিরসন হবে। যেটা ভারতের বোম্বে শহরে হয়েছে। পাবলিক বাস না থাকায় যানজটের বড় একটা কারণ বলে মনে করেন এই নগর পরিকল্পনাবিদ। অন্যদিকে গত ঈদের আগে আদালতের নির্দেশে ফুটপাত দখলমুক্ত করা হয়েছিল কিন্তু তারা এখন আবার আগের মতো বসতে শুরু করেছে। ফুটপাত দখল করে অবৈধভাবে ব্যবসার বিরুদ্ধে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী প্রায় প্রতিদিনই অভিযান চালান। অভিযান শেষ হয়ে গেলে আবারও হকাররা ব্যবসার পসরা সাজিয়ে রাস্তায় বসে পড়ে। নগরীর অনেক পয়েন্টে পর্যাপ্ত ট্রাফিক সদস্য না থাকার কারণেও যানজটের সৃষ্টি হয় বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। যানজট নিরসনে কার্যকরী কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করছে না কর্তৃপক্ষ। এমন অভিযোগ ভুক্তভোগী নগরবাসীর। সিলেট নগরীর ব্যস্ততম এলাকা জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, লামাবাজার এবং আম্বরখানা পয়েন্টে প্রতিদিন দীর্ঘ যানজট লেগেই থাকে। সরেজমিন এসব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, যানজটের করুণ দৃশ্য। বিশেষ করে জিন্দাবাজার পয়েন্টে যানজট অন্যরকম ভোগান্তি দেয় নগরবাসীকে। ওয়ানওয়ে রোড হওয়া সত্ত্বেও বিপণিবিতান, শপিংমল, ক্লিনিক-হাসপাতালগুলোর পর্যাপ্ত পার্কিং না থাকায় সবসময় যানজট থাকে। কেনাকাটা করতে আসা লোকজনকে হেঁটে যাওয়ারও উপায় থাকে না। মহিলা ও শিশুদের বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। উভয় দিক থেকে মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেল এসে মুখোমুখি অবস্থান নেওয়ায় সৃষ্টি হয় অসহনীয় যানজট। সুশাসনের জন্য নাগরিক সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, সম্ভবত যানজট নিরসনের সঠিক প্রশিক্ষণ না থাকায় ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা বেশিরভাগ সময়ই যানজট তৈরি করে। তাদের মূল উদ্দেশ্য থাকে বাইরের জেলা বা বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা সিএনজি, ট্রাক দাঁড় করিয়ে টাকা আদায় করা। নগরীর আম্বরখানা এলাকায় বিকেল ৬টার পর থেকে অনেকটা ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করে। পাথর বালুবোঝাই ট্রাক চলাচল শুরু হওয়ার পর সীমাহীন যানজটের পাশাপাশি এই এলাকা দিয়ে চলাচল করতে মানুষ ভয় পায়। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) নিকোলিন চাকমা বলেন, জনগণ সচেতন হলে যানজট নিরসন সম্ভব। যানজট নিরসনের পরিকল্পনা : সিলেট নগরীর যানজট নিরসনে ২০১০ সালের জুলাই মাসে একটি মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ হাতে নেয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। সংশ্লিষ্টরা জানায়, তখন সিলেট জেলা প্রশাসন আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় অর্থমন্ত্রী সিলেটে যানজট নিরসনে নতুন কৌশল বের করার তাগিদ দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সওজ প্রাথমিক জরিপের মাধ্যমে ২০টি কারণ চিহ্নিত করে। ওই পরিকল্পনার ছয় বছর পেরিয়ে সাত বছর চলছে। পরিকল্পনাটি এখন কোথায় কী অবস্থায় আছে কিছুই জানে না কেউ! ২০১০ সালের পরিকল্পনার কিছুই জানেন না জানিয়ে সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী উত্পল সামন্ত বলেন, সিলেট নগরীর সব সড়ক সওজের নয়। সিলেট সিটি করপোরশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, যানজট নিরসনের জন্য পরিকল্পনা অনেকবার হয়েছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কাউকে দায়িত্ব না দেওয়ায় সবাই একে অপরের দিকে চেয়ে থাকে। পরিকল্পনা কল্পনা থেকেই বিদায় নেয়।