বালাগঞ্জে অর্ধশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যাপ্লাবিত : ১৫ হাজার শিক্ষার্থীর পাঠদান অনিশ্চিত
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ জুলাই ২০১৭, ১২:১২ অপরাহ্ণ
রজত দাস ভুলন, বালাগঞ্জ থেকে:
টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে প্রতিদিনই সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার নতুন নতুন এলাকা বন্যা প্লাবিত হচ্ছে। গোখাদ্য সংকট সহ পানি বাহিত রোগ ও ডায়রিয়া দেখা দিয়েছে। গত ১৮ দিন ধরে উপজেলায় পানিবন্দি লোকজনের সংখ্যা প্রায় লক্ষাধিকের উপরে রয়েছে বলে জানা গেছে। উপজেলার ৭০টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে অর্ধ শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যা প্লাবিত হওয়ায় উপজেলার প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৫ হাজার শিক্ষার্থীর পাঠ দান বন্ধ হয়ে পরেছে। এছাড়াও বালাগঞ্জের তয়রুননেচ্ছা,এম ইলিয়াস আলী ও বালাগঞ্জ ডিএন মডেল উচ্চ বিদ্যালয়সহ আরও প্রায় ১০/১৫ মাধ্যামিক ও মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যা প্লাবিত হয়েছে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের শত শত শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। প্লাবিত বিদ্যালয় গুলোর কর্মরত শিক্ষকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পানি সাঁতরিয়ে বিদ্যালয়ে গেলেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি শূন্যতে থাকায় পানির মধ্যে বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন শিক্ষকরা। আবার একাধিক বন্যা প্লাবিত বিদ্যালয় গুলোর শিক্ষকরা উর্ধ্ধতন কর্তৃপক্ষকে না জানিয়েই ইতিমধ্যে বিদ্যালয়ে অলিখিত ছুটি ঘোষনা করে কর্মরত সকল শিক্ষকরাও বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। তবে বন্যা প্লাবিত বিদ্যালয়গুলোর ব্যাপারে শিক্ষকসহ বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা গত এক সপ্তাহ থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসসহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে যোগাযোগ করেও শিক্ষকরা কোন সৎ উত্তর পাচ্ছেন না। এছাড়া উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা উর্ধ্ধতন মহলের দোহাই দিয়ে বন্যা প্লাবিত বিদ্যালয় গুলোর ব্যাপারে দায়সারা ভাব প্রকাশ করে নানা ছুটিসহ অযুহাতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়গুলোর কর্মরত শিক্ষকরা। বন্যা প্লাবিতদের নিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তাদের এয়েন কর্মকান্ডে উপজেলার শিক্ষক সমাজসহ অভিবাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষক নেতা সন্তোষ চক্রবর্তী, লাল মোহন দাস নান্টু সহ উপজেলার একাধিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী ও অভিবাবকদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে। বালাগঞ্জ৭০ টিপ্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ইতিমধ্যে অর্ধশতাধিক বিদ্যালয়ের পোরোপুরিভাবে বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। আরও ১৫/২০টির উপরে বিদ্যালয়গুলোর চতুরদিক জলমগ্ন হয়ে হাটুঁর উপরে পানি বিদ্যমান। এ অবস্থায় উপজেলার ২৫ হাজার শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষার্থীর পাঠদান ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। মনোহরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ক্ষেতকি রঞ্জন চক্রবর্তী জানান, তাদের কর্মরত বিদ্যালয় গুলোতে ইতিমধ্যে শ্রেনী কক্ষে পানি ঢুকে পড়েছে। এছাড়া বিদ্যালয়ের যোগাযোগ রাস্তাসহ চতুরদিক তিন/চার ফুট পরিমান পানি বিদ্যমান রয়েছে। বৃষ্টির কারণে পরিস্থিতির আরও অবনতি হচ্ছে।
উপজেলার দ্বায়িত্বে থাকা বালাগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রকিব ভুঁইয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি ইতিমধ্যে কতগুলো বিদ্যালয় বন্যা প্লাবিত হয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান এখনও করা হয়নি,বন্যা প্লাবিত বিদ্যালয় গুলোতে শিক্ষকার্থীরা না আসলেও কর্মরত শিক্ষকদের বিদ্যালয়ে আসার জন্য বলেছি। উপজেলার শিক্ষকদের মধ্যে অধিকাংশ শিক্ষকরাই মহিলা ফলে মহিলা শিক্ষকরা কিভাবে পানি সাঁতরিয়ে বিদ্যালয়ে যাবে প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন,উধ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে এ ব্যাপারে পরবর্তী দিক নিদের্শনা দেয়া হবে।
উপজেলার দ্বায়িত্বে থাকা বালাগঞ্জ মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যে উপজেলার বন্যা প্লাবিত বিদ্যালয়গুলোর ব্যাপারে উর্ধ্ধতন কর্তৃপক্ষের বরাবরে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।বালাগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক মোঃ জুনেদ মিয়া বলেন, পানি দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় যোগাযোগ সহ নানা কারনে জনসাধারনরা অনেকেই দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। আসুন আমরা এই দুর্যোগ কাটতে সবার নিজনিজ অবস্থান থেকে সাহায্য করি।
বালাগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল মুনিম বলেন , আমার পরিষদটি পানি বন্দি তাছাড়া জনসাধারন আসা যাওয়া করতে ব্যপক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তুলনামুলক পর্যাপ্ত ত্রান সামগ্রী আমরা দিতে পারছি না সমাজের বিত্তশালীদের এগিয়ে আসার আহবান জানান।
বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ আনিসুর রহমান বলেন পানি মধ্যে হাসপালে রোগীদের আসা যাওয়া করতে কষ্ট হচ্ছে । তাছাড়া পানি বাহিত রোগ সহ ডায়রিয়া দেখা দিয়েছে। আমরা মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। তাছাড়া আমাদের কাছে যে সমস্ত ওষধ রয়েছে তা পর্যাপ্ত নয় আরও ওষধের প্রয়োজন রয়েছে।
বালাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাওঃ সৈয়দ আলী আজগর বলেন, কুশিয়ারা ডাকি ংেগে যাওয়ার ফলে বালাগঞ্জ খছরু পুর রাস্তা সহ অনেক ফিসারির পুকুরগুলো ডুবে গিয়ে মাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রদীপ সিংহ বলেন, গতকাল ২ জুলাই রবিবার সিলেটে ত্রান ও দুর্যোগ কমিটির সভায় বালাগঞ্জ উপজেলার বন্যা প্লাবিত বিষয়টি সম্পর্কে বলেছি। মিটিং শেষে দেওয়ানবাজার শিওরখাল আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনা খাবার বিতরন করেছি। ১২টন চাল ২দিনের মধ্যে বিতরনের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এলাকার বিত্তবান সহ প্রবাসীদের বর্ন্যার্তদের সাহয্যে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
বালাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবদাল মিয়া বলেন উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের আশি ভাগ লোকই পানি বন্দি। সরকারের পাশাপাশি আমি ব্যক্তিগত পরির্দশন করে প্রায় চারশ পরিবারের মধ্যে নগদ ২শটাকা করে দিয়েছি। বন্যার্তদের তুলনায় আমাদের এ পর্যন্ত যে সাহায্য এসেছে ২ দফায় ১৭টন চাল ও নগদ ২১হাজার ৫শ টাকা তা খুবই কম। আমি সরকারের পাশাপাশি প্রবাসী ও বিত্তশালীদের সাহায্যে এগিয়ে আসার আহবান জানাই। এদিকে গতকালও বালাগঞ্জ সদর ইউনিয়নের বির্তনীয়া ও রুপিয়া গ্রামে ২৭টি পরিবারের ১০ কেজি চাল উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক তুহিন মনসুর বিতরন করেন তার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে।
উপজেলার নলজুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসিদ আলী বলেন,আমাদের কর্মরত বিদ্যালয়ের আঙ্গিনা,যোগাযোগ রাস্তাসহ চতুর দিক জলমগ্ন হয়ে হাটুঁর উপরে পানি বিদ্যমান রয়েছে। এ অবস্থায় আমরা পানি সাঁতরিয়ে বিদ্যালয়ে গেলেও শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসতে পারছে না। প্লাবিত বিদ্যালয়গুলো হচ্ছে, বালাগঞ্জের মনোহরপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মকবেলপুর বিদ্যালয়, মাখরচি বিদ্যালয় হামছাপুর বিদ্যায়লয়, খরছাপার বিদ্যালয়, নলজুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, গৌরীপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মেগারকান্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, সারশ পুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, তেগরিয়া, প্রাথমিক বিদ্যালয়, আতাশন প্রাথমিক বিদ্যালয়, কৃত জালালপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইছাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়,পূর্ব ডেকাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, শ্রীনাথপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিত্তনিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম গৌরিনাথপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়,কলিগঞ্জ প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ শতাধিক বিদ্যালয় এখন বন্যায় প্লাবিত হয়ে আছে।