বালাগঞ্জে ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী হত্যা : এলাকায় চাঞ্চল্য,প্রতিবাদে মানববন্ধন
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ জুন ২০১৭, ৯:৪১ অপরাহ্ণ
শামীম আহমদ: বালাগঞ্জে ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী ফয়সল মিয়া ওরফে মাস্টার ফয়সল (৩৫) হত্যার ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো মামলা দায়ের করা হয়নি। নিহত ফয়সল মিয়া বালাগঞ্জ সদর ইউনিয়নের মজলিসপুর গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে। সে স্থানীয় বোয়ালজুড় বাজারের ভাঙ্গারির ব্যবসা পরিচালনা করত। এই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ও সমালোচনার ঝড় বইছে। এই হত্যার বিচার দাবি করেছেন এলাকাবাসী।
হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ২টায় বোয়ালজুড় বাজারে স্থানীয় এলাকাবাসীর উদ্যোগে মানববন্দনের ডাক দেয়া হলে এলাকার বিভিন্ন শ্রেনী পেশার লোকজন উপস্থিত হন। এসময় মানববন্ধন স্থলে বালাগঞ্জ থানার ওসি এসএম জালাল উদ্দিন আহমদ উপস্থিত হয়ে মানববন্ধনের আয়োজক ও এলাকাবাসীর দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে ঘটনাটির সুষ্টু তদন্তের আশ্বাস দিলে মানবন্দন স্থগিত করে সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ সভা করা হয়। প্রতিবাদ সভায় বক্তারা পুলিশ ও হত্যাকারীদেরকে ইঙ্গিত করে বলেন, যারা গুপ্ত হত্যা ঘটিয়ে তড়িগড়ি করে সাত ঘন্টার মধ্যে বেওয়ারিশ হিসেবে লাশ দাফন করিয়েছে তাদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে। বক্তারা বলেন, আমাদের ধারনা বোয়ালজুড় বাজার এলাকায় এই হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে। তাই হত্যাকারী যে বা যারাই হোক জনসমক্ষে তাদেরকে দোষ স্বীকার করতে হবে। অন্যতায় আইন তাদের ক্ষমা করবে না বলে হুঁশিয়ারী দেয়া হয়। এতে বক্তৃতা করেন, বাংলাদেশ দুর্নীতি প্রতিরোধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় যুগ্ন মহাসচিব বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন সিলেট মহানগর শাখার যুগ্ন সম্পাদক শফিকুর রহমান শফিক সহ এলাকার বিভিন্ন শ্রেনী পেশার নেতৃবৃন্দ। ঘটনার সাথে স্থানীয় প্রভাবশালীরা সরাসরি জড়িত রয়েছে তারা বিষয়টিকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন বলে স্থানীয়রা পুলিশের সম্মুখে অভিযোগ তুলেন। তবে এলাকাবাসীর এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বালাগঞ্জ থানার ওসি এসএম জালাল উদ্দিন আহমদ উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের কাছে তথ্য প্রমান রয়েছে এলাকার লোকজন নিহতের পরিবারকে বার-বার বলার পরও তারা প্রথমে লাশ সনাক্ত করতে যায়নি। পরবর্তীতে লাশ সনাক্ত করলেও এখনো মামলা দেয়া হয়নি। এখানে পুলিশের কোনো গাফিলতি নেই, মামলা দিলে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। ফেইসবুকে নিহত ফয়সলের লাশের ছবি দেখে তার ভাইদেরকে জানানোর পরও ভাইয়েরা লাশ সনাক্ত করতে আগ্রহী হয়নি। সে সময়ে ফয়সলের পরিবারের লোকজন বলেছিলেন সে (ফয়সল) ২৪ জুন সুনামগঞ্জে আত্মীয় বাড়ীতে বেড়াতে গিয়েছে বলে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে। এবিষয়ে স্থানীয়রা অবশ্য বলছেন, অতি দারিদ্রতা এবং সামাজিক সচেতনাবোধ না থাকার কারণেই এমনটি হয়েছে।
২৫ জুন উপজেলার বোয়ালজুড় ইউনিয়নের সোনাপুর এলাকায় ইলাশপুর-গোয়ালাবাজার সড়কের নিকট বাটনার হাওর থেকে বিবস্ত্র ও পিছন দিকে দুই হাত বাঁধা অবস্থায় ফয়সলের মৃত দেহ উদ্ধার করে বালাগঞ্জ থানার পুলিশ। পরিবারের লোকজন লাশটি সনাক্ত করতে বিলম্ভ করায় বেওয়ারিশ হিসেবে লাশের দাফনের পর এলাকাবাসীর সহযোগীতায় ছবি দেখে নিহতের পরিবার লাশ সনাক্ত করেন। ধারনা করা হচ্ছে ২৪ জুন রাতে অথবা ২৫ জুন ভোরে কে বা কারা ফয়সলকে হত্যা করে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে হাওরের পানিতে ফেলে রাখে। নিহত ফয়ছলের বড় ভাই আব্দুল হান্নান বলেন, লাশ দাফনের পর সোমবার এলাকার লোকজনের মাধ্যমে ফেইসবুকে ছবি দেখে আমার ভাইর লাশ সনাক্ত করি। সে বোয়াজুড় বাজারে ভাঙ্গাড়ী ব্যবসা করত কারও সাথে তার কোনো শত্রুতা ছিল না। তার দুটি পুত্র সন্তান রয়েছে। পরে আমার নিহত ভাইয়ের স্ত্রী ফাহিমা বেগম আমি ও আমার পিতা থানায় গিয়ে লাশ সনাক্তের বিষয়টি পুলিশকে অবগত করি। এদিকে বুধবার বিকেলে নিহতের বড় ভাই আব্দুল হান্নান এই ঘটনায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের অভিযুক্ত করে থানায় মামলা দায়েরের কথা জানালেও পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো মামলা করা হয়নি বলে জানা গেছে। স্থানীয়রা বলছেন পুলিশ তৎপর হলেই হত্যাকান্ডের রহস্য উদগাটন করা সম্ভব হবে। তারা বলছেন বিষয়টি স্থানীয়দের মধ্যে কারো না কারো জানা থাকতে পারে কিন্তু আঞ্চলিকতার খাতিরে হয়ত কেউ মুখ খুলছে না। তবে এই ঘটনাটি নিয়ে কেউ ব্যক্তি স্বার্থ কিংবা প্রতিহিংসার রাজনীতি না করার জন্য এলাকার পক্ষ থেকে পুলিশ প্রশাসন সহ সকলের প্রতি জোর আহবান জানানো হয়েছে