সিলেটে ২০ কোটি টাকা নিয়ে শিবিরের সহ-সভাপতি লাপাত্তা
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ মে ২০১৭, ১১:৫২ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
লাখে প্রতিমাসে ২০ হাজার টাকা লভ্যাংশ প্রধানের লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন পেশাজীবী ব্যক্তিসহ নিজ দলের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে প্রতারনার মাধ্যমে প্রায় ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছেন সিলেট জেলা শিবিরের সহ-সভাপতি আহবাব আহমদ। প্রতারনার শিকার অনেকেই লোভে পড়ে ১লক্ষ থেকে ১০লক্ষ টাকা বিনোয়োগ করে কথিত ব্যবসায় অংশীদার হয়েছিলেন ।
জানা যায়, কারো সাথে লেয়ার মুরগীর খাদ্য কেনাবেচার কথিত ব্যবসার নামে করেছে প্রতারনা। কাউকে সিলেটের ইবনে সিনা হাসপাতালের শেয়ার বিক্রীর ভূয়া চুক্তিপত্র দিয়ে করেছে প্রতারনা। তাদের একজন সিলেটের গোলাপগঞ্জের রানাপিং ছত্রিশ গ্রামের ময়না মিয়া ইবনে সিনা হাসপাতালের দুটি শেয়ার ক্রয়ের চুক্তি পত্র নিয়ে ২ লক্ষ টাকা খুইয়েছেন। শুধুমাত্র সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে প্রতারনা করে প্রায় ৭কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। দলীয় ইমেজ রক্ষায় শিবিরের দায়ীত্বশীল সকলেই এবিষয়ে বক্তব্য দিতে নারাজ। প্রতারনার বিষয়টি লোকমুখে ছড়িয়ে পড়লে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলা জুড়ে তোলাপাড় শুরু হয়।
স্থানীয়রা জানান, আহবাব সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার গোলাপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ছত্রিশ গ্রামের রিয়াজ উদ্দিনের বড় ছেলে। আর্থিক অবস্থা ভাল না থাকায় বিভিন্ন বাড়ীতে প্রাইভেট টিউশনি পড়ে চলছিল সে। গত কয়েক বছর থেকে তার চলা ফেরায় পরির্বতন আসে। একে একে ৪টি সিএনজি অটোরিক্সা, ১টি পিকআপ ভ্যানসহ দামী মটরসাইকেল ক্রয় করে। সে ছাত্র শিবির গোলাপগঞ্জ পশ্চিম শাখার সভাপতি ও কিশোরকন্ঠ পাঠক ফোরামের অফিস সম্পাদক ছিলো এবং বর্তমানে সিলেট জেলা শাখার সহ-সভাপতি।
যোগাযোগ করা হলে গোলাপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মুহিবুল্লাহ হোসনেগীর জানান, দলীয় নেতাকর্মীর টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করলেও প্রতারক আহবাবকে নিজদলের দায়ীত্বশীল কেউ নয় বলে জানান তিনি। তবে শিবিরের কর্মীদের সাথে তার উঠাবসা ছিলো বলে দাবী করেন মুহিবুল্লাহ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিবিরের একজন সাথী সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আহবাব আহমদ সিলেট জেলা শাখা শিবিরের সহ-সভাপতি। এমনকি সে গোলাপগঞ্জ শিবিরের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি। তিনি শুধু গ্রামের মানুষের সাথে প্রতারণা করেননি। তার প্রতারণার শিকার হয়েছেন দলীয় অনেক সাথী ভাইয়েরা। এজন্য দলের সিনিয়র সাথীদেরকে অবহিত করা হয়েছে।
এদিকে রোববার (৭ মে) দুপুর থেকে প্রতারনার শিকার অনেকেই আহবাবের বাড়িতে ভীড় জমিয়েছিলেন। তাকে না পেয়ে বিক্ষুব্দ জনতা ওই দিন বিকালে তার ঘরের ফ্রিজ, টিভি, খাট, ৪টি সিএনজি অটোরিক্সা, একটি পিকআপ ভ্যান, শ্যালো মেশিন এমনকি বাড়ীর প্রধান গেইট যে যা পেরেছেন নিয়ে গেছেন । সিলেট শহরের তালতলায় বসবাসকারী প্রতরনার শিকার একজন জানান আহবাবের সাথে আমার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে পরিচয় । এরপর কয়েকজন বন্ধু মিলে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা আহবাবরে কথিত ফার্মের ব্যবসায় বিনোয়াগ করেছিলাম।
আহবাব লাপাত্তার খবর শুনে তার বাড়ীতে এসেছি। অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে আহবাবের ব্যবহৃত মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে থাকে পাওয়া যায়নি । বাড়ীতে থাকা আহবাবের মা নাছিমা বেগম জানান , “ শনিবার রাত থেকে ছেলের খোঁজ জানিনা। রবিবার থেকে লোকজন আহবাবকে না পেয়ে বাড়ীর সবকিছু লুটে নিয়েছে। আমি এসব বিষয়ে কিছুই জানিনা, আমার ছেলে দোষী হলে তার শাস্তিহোক।”
স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল কুদ্দুস টিপু জানান চলতি বছরের ২৯ মার্চ ফার্মের মুরগীর খাবারের ব্যবসার কথা বলে চতুর আহবাব তার কাছ থেকে ৬লাখ ৬০হাজার টাকা নিয়েছে এক টাকাও ফেরৎ দেয়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকারদলীয় একজন সমর্থক জানান তার ভাইয়ের কাছ থেকে ১২ লক্ষ টাকা প্রতারনার মাধ্যমে নিয়েছিলো আহবাব এর মধ্যে ৮লাখ টাকা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি।।
জকিগঞ্জ উপজেলার কামালপুর গ্রামের বদরুল হকের ছেলে সোহেল আহমদ জানান তিনি ১০লাখ টাকা বিনোয়োগ করেছিলেন আহবাবের কথায় তাকেও মুরগীর ফার্মের ব্যবসার কথা বলে টাকা আনে এর প্রেক্ষিতে এক্সিম ব্যাংকের একটি চেকও দেয় ।
ভুটি টিকর ছত্রিশ গ্রামের মুহিব আলী মাস্টারের নাতি পিন্টুর ৫লক্ষ টাকা, ছত্রিশ গ্রামের জালাল মিস্ত্রী ৭০ হাজার টাকা, গোলাপগঞ্জ ইউনিয়নের চকরিয়া গ্রামের কামরুল ইসলামের ৭লক্ষটাকা, বিয়ানীবাজার উপজেলার চন্দগ্রাম গ্রামের ব্যবসায়ী আবু বকরের ৫লক্ষ ৬০ হাজার টাকা, একই উপজেলার খাদিম উলি গ্রামের রুনু মিয়ার ২লক্ষ টাকা , হুমায়ুন নামে এক আইনজীবি ও তার ৩ বন্ধুর প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা এরকম কয়েকশ লোকের প্রায় ২০ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছে প্রতারক আহবাব।
অনুসন্ধানে নেমে জানা গেছে, আহবাব ফেব্রুয়ারী মাসে সিলেটের তামাবিল-ডাউকি সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশের ভিসা ইস্যূ করে রেখেছেন। স্থানীয়রা ধারণা করছেন সে কোটি টাকা আত্মসাৎ করে ভারত চলে গেছে। আহবাবের পাসপোর্ট নাম্বার বিএইচ ০১৫৬৯৮০। পাসপোর্টে দেওয়া তথ্যে তার জন্ম ২৫ ডিসেম্বর ১৯৮৭ ইংরেজী এবং জাতীয় পরিচয় পত্র নং ১৯৮৭৯১১৩৮৫১২০৩২৬। সিলেটের গোলাপগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ এ কে এম ফজলুল হক শিবলী জানান, প্রতারনার বিষয়ে মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।