এখন থেকেই সিলেটে যোগ্য মেয়র প্রার্থীর সন্ধানে আ’লীগ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ মে ২০১৭, ১১:২৩ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) নির্বাচনের বাকি এখনও দেড় বছর। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই এ নির্বাচন হওয়ার কথা। সিটির নির্বাচিত পরিষদের মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে। সে হিসাবে আগামী বছরের জুন-জুলাই নাগাদ সিসিকের চতুর্থ নির্বাচন হবে। এরই মধ্যে যোগ্য মেয়র প্রার্থী সন্ধান শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
আগের তিনটি নির্বাচনেই মেয়র পদে দলের প্রার্থী ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। এর মধ্যে দল ক্ষমতার বাইরে থাকাকালে অনুষ্ঠিত প্রথম দুটি নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন কামরান। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৩৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে তিনি পরাজিত হন বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে। আগের নির্বাচনে ১২৮টির সব কেন্দ্রে বিজয়ী হওয়া কামরান ওই নির্বাচনে পরাজিত হন ১২২টি কেন্দ্রে। এমতাবস্থায় আগামী নির্বাচনে কামরানের ওপর কেন্দ্র আস্থা রাখতে পারছে না বলে আভাস পাওয়া গেছে। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ সিলেটের মেয়র পদে যোগ্য প্রার্থীর সন্ধানে রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সম্ভাব্য প্রার্থীদের আমলনামাসহ বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সাংগঠনিকভাবে মাঠের চিত্র জানার পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টও নেয়া হচ্ছে। জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা কামরানের গত নির্বাচনে ভরাডুবির কারণগুলোও বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের পরবর্তী নির্বাচনে মেয়র পদে নতুন মুখ খোঁজা হচ্ছে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত নির্বাচনে কামরানের পরাজয়ের কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে নগর ভবনে মেয়রের স্ত্রী-ছেলে মিলে বিভিন্ন কাজের দরপত্র নিয়ন্ত্রণসহ তাদের নেতৃত্বে নগর ভবনে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে সবকিছু তদারকি করা। নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালে ডালিয়া সুলতানা নামের এক নারী কামরানের স্ত্রী হিসেবে দাবি করা। সর্বোপরি দলের অধিকাংশ নেতাকর্মীকে নিজের পক্ষে মাঠে নামাতে কামরানের ব্যর্থতা। গতবার অনেক নেতাই চাননি কামরান টানা তৃতীয় দফায় মেয়র নির্বাচিত হোক। আগামী নির্বাচনেও কামরানকে প্রার্থী করা হলে একই পরিণতি হতে পারে বলে কেন্দ্র মনে করছে। এছাড়া কেন্দ্রে কামরানের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে জড়িত থাকার। উচ্চ আদালতের নির্দেশে রাগীব আলীর দখলে থাকা তারাপুর চা বাগানের সব স্থাপনা অপসারণের নির্দেশ দেয়ার পর স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ অবৈধ দখলদারদের পক্ষে গোপন তৎপরতা চালান। এতে কামরানেরও সায় ছিল। এমনকি আদালতের নির্দেশে তারাপুর চা বাগান থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার কথা বলা হলেও কামরানের ছেলে আরমান আহমদ শিবলু ওই হাসপাতালে পরিচালক পদে এখনও কর্মরত, যা ভালোভাবে দেখছে না আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। সব মিলিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্য ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির একজনকে মেয়র পদের জন্য খোঁজা হচ্ছে।
নতুন প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ। তিনি এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে দেয়া বক্তৃতায় আগামী সিটি নির্বাচনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশার কথা বলছেন। এছাড়া আলোচনায় আছেন টানা তিনবারের নির্বাচিত সিটি কাউন্সিলর মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ। তিনি মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে নিশ্চিত করেছেন। তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সিসিকের পরবর্র্তী নির্বাচনে আলোচনায় থাকা কামরান, আসাদ, আজাদ না অন্য কেউ মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হবেন- তা নিশ্চিত হতে আরও অপেক্ষা করতে হবে।
কেন্দ্রের কাছে বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে এর কোনোটিরই ভিত্তি নেই। মেয়র থাকাকালে নগর ভবনে দরপত্র নিয়ন্ত্রণ বা সিন্ডিকেটের সঙ্গে স্ত্রী-ছেলে জড়িত ছিল না। জামায়াত-বিএনপির সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্যে জড়িত থাকার প্রশ্নই উঠে না। তারাপুর চা বাগানে অবৈধ দখলদারের পক্ষাবলম্বনে নিজের সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেন কামরান। তিনিই মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আমি আজীবন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করে আসছি। এ নগরীর সার্বিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার পাশাপাশি বিভিন্ন পেশাজীবী ও সামাজিক সংগঠনের সঙ্গেও সুসম্পর্ক রয়েছে। সব বিবেচনায় দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মূল্যায়ন করবেন। তবে কামরান বলেন, এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।