সিলেটের বিভিন্ন হাওরে মড়ক : বাজারগুলোতে কমে গেছে মাছ বিক্রি
প্রকাশিত হয়েছে : ২২ এপ্রিল ২০১৭, ৯:২১ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্কঃ সিলেটের বিভিন্ন হাওরে মড়ক শুরু হওয়ার পর নগরীর বাজারগুলোতে মাছ বিক্রি কমে গেছে। কমেছে সরবরাহও। বিশেষ করে স্থানীয় প্রজাতির মাছের সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। ক্রেতারাও মাছ কিনতে খুব একটা ভরসা পাচ্ছেন না। হাওরে ধান পচে তৈরি হওয়া অ্যামোনিয়া গ্যাসের প্রভাবে মৃত মাছ খাওয়ার আগ্রহও কমেছে। আড়তদার ও বিক্রেতারা জানান, গ্রীষ্মের শুরুতে এমনিতেই মাছের সরবরাহ থাকে কম। এর মধ্যে মড়ক শুরু হওয়ায় বাজারে সংকট দেখা দিয়েছে। ক্রেতারাও মাছ কেনার প্রতি খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
সুনামগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে হাওর এলাকা। গ্রীষ্মের শুরুতে আচমকা ঢলে ডুবে গেছে অন্তত এক লাখ ৪১ হাজার ২০৪ হেক্টর জমির বোরো ফসল। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, বর্তমান দুর্যোগে প্রায় সাড়ে চার লাখ টন ধানের ক্ষতি হয়েছে। সেই ধকল সামলে ওঠার আগেই দেখা দিয়েছে মড়ক। হাওরের মাছ ও জলজ প্রাণীর মারা যাচ্ছে। এতে হাওরের বিরাট মৎস্য ভাণ্ডার পড়েছে ঝুঁকির মুখে। গত সপ্তাহের মধ্যভাগ থেকে সিলেট ও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন হাওরে দেখা দেয় মাছে মড়ক। সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, কয়েকদিনে ২৫ টন দেশীয় প্রজাতির মাছ মারা গেছে। দেশের বৃহৎ হাকালুকি হাওরেও হাজার হাজার মাছ মরে ভেসে উঠেছে।

সুনামগঞ্জের সুরমা নদীতেও বিভিন্ন জাতের মাছ মরে ভেসে যেতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। মাছের মড়কের বিষয়টি প্রকাশের পর আতঙ্কিত হয়ে উঠেছেন ক্রেতারাও। বিশেষ করে দেশীয় প্রজাতির মাছের ক্রেতারা। মাছে মড়কের কারণে বাজারে চলছে মাছের সংকট। গতকাল শুক্রবার সিলেট নগরীর কাজিরবাজার, লালবাজার, আম্ভরখানা, মিরাবাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারগুলোতে আগের মতো মাছ ওঠেনি। বিশেষ করে দেশীয় জাতের মাছ একেবারেই কম। শুধু বাজার নয়, নগরীর বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী বাজার ও শহরতলির বাজারগুলোতেও একই অবস্থা।
সিলেট নগরীর একমাত্র মৎস্য আড়ৎ কাজিরবাজারের মামুজি মৎস্য আড়তের পরিচালক নিজাম উদ্দিন ও বিমল বাবু জানান, মাছ মরার খবরে বাজারে প্রভাব পড়েছে। ক্রেতাদের আগ্রহ কম। আগে প্রতিদিন ২-৩ লাখ টাকার মাছ বিক্রি হতো। এখন কমেছে। তারা জানান, বাজারে মরা বা পচা মাছ উঠছে না; কিন্তু মানুষের মধ্যে ভীতি কাজ করছে। দু’দিন ধরে বৃষ্টি হওয়ায় মাছ মরে যাওয়ার পরিমাণ কমে আসছে। নগরীর প্রধান মাছ বাজার লাল বাজারের মাছ বিক্রেতা কামরুজ্জামান জানান,
মাছ কম থাকায় দাম বেশি। ক্রেতাও কম। মানুষ ভয়ে মাছ কিনতে চাচ্ছে না। আসলে ভয়ের কোনো কারণ নেই। কারণ, ভালো মাছই বাজারে আসছে। মড়কের কারণে বাজারে মাছ কিনতে যাননি নোয়াপাড়ার বাসিন্দা আবদুল কাইয়ুম। তিনি জানান, মাছ খেলে সমস্যা হতে পারে সেজন্য মাছই কেনেননি। দেশি মাছ না পেয়ে খামারের মাছ কেনার কথা জানিয়ে জেল রোডের বাসিন্দা আফতাবুন নেছা খানম জানান, আগে প্রতিদিন বাসায় বিভিন্ন জাতের মাছ নিয়ে আসত বিক্রেতারা। কয়েকদিন থেকে তারা কম আসছে। এলেও ভালো মাছ মিলছে না।