মৌলভীবাজারের নাসিরপুরে নিহত জঙ্গিদের লাশ সনাক্ত, লাশ গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি পরিবারের
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ এপ্রিল ২০১৭, ৭:২৮ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
নাসিরপুরে জঙ্গি আস্তানায় আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিহত ৭ জনের লাশ সনাক্ত করলেও তা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে তাদের পরিবার। সোমবার সকালে নিহতদের স্বজনরা দিনাজপুর থেকে মৌলভীবাজার এসে জঙ্গি লোকমান হোসেন, তার স্ত্রী শিরিনা আক্তার ও পাঁচ সন্তানের লাশ সনাক্ত করেন।
শিরিনার বাবা আবু বকর সিদ্দিকি সোমবার সকাল আটটার দিকে মৌলভীবাজারে পৌঁছেন। সেখান থেকে পুলিশ তাদের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিয়ে যায় এবং পরে আবারও মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে লাশ শনাক্তের পর কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন জঙ্গি লোকমানের শাশুর। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন আরেক মেয়ের জামাই সানোয়ার হোসেন ও ইউপি সদস্য মোফাজ্জেল হোসেন। লাশ শনাক্ত করে বর্তমানে তারা সদর হাসপাতালে অবস্থান করছেন। নাসিরপুরে জঙ্গি আস্তানায় আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে নিহত সাতজন দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের একই পরিবারের সদস্য।
নিহত শিরিনার বাবা আবু বকর সিদ্দিকি সোমবার সকাল আটটার দিকে মৌলভীবাজারে পৌঁছেন। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন আরেক মেয়ের স্বামী সানোয়ার হোসেন ও ইউপি সদস্য মোফাজ্জেল হোসেন। আবু বক্কর সিদ্দিকের দেওয়া তথ্য মতে, তাঁর বড় মেয়ে মোছাম্মাৎ শিরিনা আক্তার (৩৫), তাঁর স্বামী লোকমান হোসেন (৪৫), তাদের বড় মেয়ে মোছাম্মাৎ আমেনা খাতুন (২০) (কিছুদিন আগে তাঁর বগুড়ায় বিয়ে হয়েছে), মেয়ে সুমাইয়া (১২), মরিয়ম (১০), ফাতেমা (৭), খাদিজা (সাত মাস) দীর্ঘদিন ধরেই পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলো।
ভয়াবহ এই পরিণতির জন্য জামাতা লোকমানের উগ্রবাদী কর্মকান্ডকেই দায়ী করছেন শশুরবাড়ির লোকজন। এজন্য মেয়ে ও পাঁচ নাতনির লাশ ফেরত চাইলেও জামাতা লোকমানের মরদেহ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন শ্বশুর আবু বক্কর সিদ্দিক। তার দাবি, বছর তিনেক আগে তার মেয়ে ও নাতনিদের নিয়ে লাপাত্তা হয় লোকমান। তাদের আর কোনো খোঁজ তারা পাননি।
নিহত জঙ্গি লোকমান হোসেন ওরফে লোকমান হাকিম শিবগঞ্জ থানার ২০০৮ সালের একটি মামলার আসামি। ২০০৯ সালে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ওই মামলার অভিযোগপত্র দেওয়ার পর ওই মামলাটি এখন বিচারাধীন আছে। মামলায় মোট আসামি ২২ জন। সবার পরিচয় লেখা হয়েছে জেএমবির সদস্য।
এদিকে পরিবার সূত্রে জানা যায়, নিহত লোকমান আলী (৪০) ঘোড়াঘাট উপজেলার ডাঙ্গাপাড়ার নুরুল ইসলামের ছেলে। তারা তিন ভাই। বড়ভাই জাকারিয়া ইসলাম (৫০)। পেশায় চিকিৎসক। ঘোড়াঘাটের রাণীগঞ্জ বাজারের একটি ঔষধের দোকানের মালিক তিনি। মেজো ভাই লোকমান আলী(৪০) ও ছোট সোলেমান আলী (৩৫)। এছাড়া তাদের চার বোনের সবারই বিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের বাবা নুরুল ইসলাম ‘আহালে হাদিস’ হিসেবে পরিচিত।
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইসরাইল হোসেন বলেছেন, লোকমান জেএমবির শুরা সদস্য ছিলেন। তার নামে ঘোড়াঘাট থানায় কোনো মামলা না থাকলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থানায় তার বিরুদ্ধে একটি সন্ত্রাস বিরোধী মামলা হয় ২০০৮ সালে ২৫ অক্টোবর।
সংবাদ সম্মেলনে মাধ্যেমে এমটাই নিশ্চিত করেন মৌলভীবাজার জেলার পুলিশ সুপার মো শাহ জালাল। তিনি জানান নাসিরপুরের ঘটনাস্থলে যারা নিহত হয়েছেন তাদের একটা ফ্যামেলি ছবি ছিল। এই ছবিটা আমরা এখানকার কেয়ারটেকারকে দেখিয়েছি। কেয়ারটেকার বলেছে এখানে যারা ভাড়া নিয়েছিল এটা তাদেরই ছবি। এবং এই ছবিটাই আমরা ঘোড়াঘাট থেকে যারা এসেছেন তাদেরকে দেখিয়েছি এবং তারা বলেছে এটাই তাদের আতী¡য় স্বজনের ছবি। সেই ক্ষেত্রে আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছি যারা নিহত হয়েছে তাদের বাড়ি ঘোড়াঘাটে। তাছাড়া এখানে তাদের আত্বীয় স্বজন বলেছে তাদেরকে ঘটনার আগের দিন বা কয়েকদিন আগে তাদেরকে একটা কল দিয়েছে একটা মোবাইল থেকে। কল দিয়ে বলেছে বলেছে হয়ত আর দেখা হবে না।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে লাশ নিবেন কিনা জিজ্ঞেস করা হলে, তারা এই এই লাশগুলো গ্রহণ করবেন না বলে জানিয়েছেন।
অন্যদিকে নিহত জঙ্গি লোকমানের পরিবারের সাথে কোন সম্পর্ক ছিলো না বলে জানা গেছে। লোকমানের বাবা নুরুল ইসলাম জানতেন ছেলে ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করে। তবে শ^শুরের সাথে মাঝে মধ্যে যোগাযোগ হলেও বেশ কিছুদিন হলে তা বন্ধ হয়ে যায়। লোকমানের ছোটভাই সোলেমান আলীও বেশ কিছুদিন থেকে নিখোঁজ রয়েছে। ধারনা করা হচ্ছে সোলেমানও নব্য জিএমবির কার্যক্রমে সক্রিয় রয়েছেন।
গত ২৯ মার্চ (বুধবার) সন্ধ্যায় মৌলভীবাজারের জঙ্গি আস্তানার মধ্যে নাসিরপুর ‘অপারেশন হিটব্যাক’ শুরু করে সোয়াত। রাতে অভিযান বন্ধ করে দিয়ে পরের দিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে অভিযান শুরু হয়। ‘বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে অভিযান শেষ হয়েছে।