সিলেট নগর জুড়ে বানর আতঙ্ক : আক্রমনের শিকার হচ্ছেন নারী-শিশুসহ সবাই
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ মার্চ ২০১৭, ২:১০ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
সিলেটে বেড়েছে বানরের উপদ্রব। প্রতিদিনই বানরের আক্রমনের শিকার হচ্ছেন নারী-শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ। একসময় এই বানরের বিচরণ নগরীর গোয়াইটুলাস্থ হযরত চাষনী পীর (রহ.) এর মাজারের টিলায় সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন তা ছড়িয়ে পড়েছে পুরো নগরীতে।
নগরীর হযরত চাষনী পীর (রহ.) মাজার ও আশপাশের এলাকায় দীর্ঘ দিন থেকে রয়েছে বানরের বসবাস। এক সময় মানুষ বানরের খেলা দেখে, খাবার দিয়ে আনন্দ উপভোগ করতেন। কিন্তু দীর্ঘকাল যে বানর লোকালয়ে বাস করেও ছিলো শান্ত। সেই বানর এখন চাষনীপীর মাজার এলাকা ছেড়ে ছড়িয়ে পড়েছে পুরো নগরীতে। ৬নং ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার শিশু, নারী পুরুষের আতঙ্কের কারণ। বানর হিংস্র হয়ে আক্রমন করছে বাসা-বাড়িতে। শিশু, নারীসহ কেউই রেহাই পাচ্ছেন না বানরের আক্রমন থেকে। বাসায় ঢুকে রান্না করা খাবার নিয়ে যাচ্ছে, দোকান থেকে নেয়া বিস্কিট বা অন্যান্য পণ্য হাত থেকে কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে। দিনে দুপুরে গাছ থেকে ফল বা সবজি নষ্ট করে ফেলে যাচ্ছে মাটিতে। অবস্থা এতোটা মারাত্মক হয়ে দাঁড়িয়েছে যে সকাল থেকেই শিশু ও অভিভাবকদের একা স্কুলে যেতে বা মক্তবে যেতে ভয়ের মধ্যে থাকতে হয়। গত ৬ মাসে শিশু, মহিলাসহ বিভিন্ন শ্রেনীর অন্তত ২০/২৫ জন আক্রমনের শিকার হয়েছেন।
চাষনী পীর (রহ.) মাজার এলাকা ও ৬নং ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে এমনটা জানা গেছে। গত ৫ থেকে ৬ মাসে বানরের এমন আক্রমনের কারন সম্পর্কে স্থানীয়রা বলছেন, মাজার এলাকা ও আশপাশের এলাকায় বানরের সংখ্যা বেড়েছে বেশ কয়েকগুন।
মাজারের নির্দিষ্ট এলাকায় বানরের খাবারের ব্যবস্থা থাকায় অন্যান্য এলাকা থেকে বিপুল সংখ্যক বানর এই এলাকায় জড়ো হয়। বৃহস্পতিবার, শুক্রবার ও শনিবার দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন কলা ও অন্যান্য খাবার নিয়ে এলেও সপ্তাহের অন্য চারদিন খাবার কমে যায়। খাবার সংকটের কারনে তখন বানর বাসা-বাড়িতে দল বেধে ছুটে যায়। বংশ বিস্তারের ফলে বানরের অবস্থান ও চলাচলের এলাকা সীমানাও বেড়েছে। যোগাযোগ করা হলে চাষনীপীর মাজার ওয়াকফ এস্টেটের মোতাওয়াল্লী আব্দুর রব রউজ বানরের এই আক্রমনের বিষয় সম্পর্কে বলেন, সংখ্যা বেড়েছে ঠিক। খাবার সংকটও হয়ে থাকতে পারে। তিনি মাজারের পাশের এলাকায় মাজারের নিজস্ব জমিতে বন কেটে জায়গা দখল করে বাড়ি তৈরি করা হচ্ছে এমন অভিযোগ করে বলেন, শুধু মাজারের বানর নয় অন্যান্য এলাকার বানরও এই এলাকায় এসে যাওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই সমস্যা সমাধানে কিছু বানরকে অন্যত্র স্থানান্তর করার বিষয়ে সুদৃষ্টি দেয়ার আহবান জানান।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, গত কয়েক বছরে বানরের চলাচলের সীমানা বেড়েছে কয়েকগুন। ৬নং ওয়ার্ডের গোয়াইটুলা, বাদামবাগিচা, হাউজিং এস্টেট, বড়বাজার, চৌকিদেখি, মজুমদারী, কোনাপাড়া, পীর মহল্লা, জালালাবাদ আবাসিক এলাকা, লন্ডনি রোড, শিবগঞ্জ সোনারপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় বানরের উপদ্রব সবচেয়ে বেশি। সিটি কর্পোরেশনের ৬নং ওয়ার্ডের এসব এলাকার বিপুল সংখ্যক মানুষ বানর আতঙ্ক ও আক্রমনের শিকার হলেও সংশ্লিষ্ট বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন এখানে নির্বিকার। এলাকার সচেতন নাগরিকরা মনে করছেন এসব বানর অন্যত্র স্থানান্তর করলে কমে যেতে পারে বানরের উৎপাত। একই কথা বলছিলেন ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদ।
সূত্র জানায়, গত রোববার সকালে সিলেটের শাহী ঈদগাহ’র হাজারীবাগ এলাকায় বানরের আক্রমণের শিকার হয়েছে ইয়াসীন মিয়া নামে ৮ বৎসরের শিশু। গত রোববার চাষনীপীর (রহ) মাজারের পাশের গোয়াইটুলার হালিমা নামের ৬০ বছর বয়স্ক এক মহিলা আক্রমনের শিকার হন। এর এক সপ্তাহ আগে ওই এলাকায় ছাত্র, মহিলাসহ তিনজন একদল বানরের আক্রমনে পড়েন। আক্রমনের শিকার হালিমা জানান, আমি বাসার গেইট বন্ধ করতে গেলে ৫/৭টি বানর আমার উপর হামলে পড়ে। তার শরীরে ৩/৪ টি স্থানে কামড় দিয়েছে বলে তিনি জানান।
অন্যরা জানিয়েছেন বানরের কামড় ও নখের আঘাতে মারাত্মক অসুস্থ হয়েছেন। বানরের আক্রমনে জটিল রোগ থেকে রক্ষা পেতে ৫শ টাকা মূল্যের ৫টি টিকা দিতে হয়। আক্রমনের শিকার দরিদ্র পরিবারের অনেকেই এই টিকাও দিতে পারছেন না।
এমন অবস্থার বর্ননা দিয়ে কাউন্সিলর রেজওয়ান জানান, শিশু ইয়াসীন মিয়ার বাবা একজন রিকসা চালক। টিকা দেয়ার টাকা সংকুলান করতে না পেরে কাউন্সিলরের দ্বারস্থ হলে তিনি সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, স্বাভাবিক জীবন যাপনে বানর আতঙ্ক দিন দিন বাড়তে থাকায় গত একমাসে চাষনীপীর মসজিদ কমিটি ও অন্যান্য এলাকায় মিটিং করে বানরের অক্রমন থেকে রক্ষার পেতে প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন। মানববন্ধন করেছেন ওই এলাকার শত শত সাধারণ জনতা। ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. রেজওয়ান আহমদ জানিয়েছেন এই ব্যাপারে তিনি সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে বন বিভাগের সংশ্লিষ্টদের কাছে অভিযোগ করেছেন। ২/১ দিনের মধ্যে এলাকার লোকজনকে সাথে জেলা প্রশাসক ও বন বিভাগের কাছে স্মারকলিপি দেবেন। স্থানীয় বাসিন্দা এডভোকেট সোহেল আহমদ জানান, বানর আতংক এই এলাকার মানুষের কাছে বড় আতঙ্কের বিষয়। বাসায় রাখা খাবার নিয়ে যাওয়াসহ শিশুদের উপর প্রায়ই আক্রমন করছে বানরের দল। এমনটা জানিয়ে তিনি প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে এই ব্যাপারে বিহিত ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ করেন।