সন্ত্রাসবাদে জড়ালে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিল : রায়কে বৈধতা দিয়েছে ইইউ আদালত
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ মার্চ ২০১৭, ১১:৩৮ অপরাহ্ণ
লন্ডন অফিসঃ সন্ত্রাসী কার্যক্রম কিংবা উগ্রবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিল করাকে বৈধ বলে রায় দিয়েছে ইউরোপিয়ান মানবাধিকার আদালত। সুদানি বংশোদ্ভূত এক ব্যক্তির ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ফিরে পাওয়ার দাবিতে করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৯ মার্চ বৃহস্পতিবার স্ট্রার্সবার্গে অবস্থিত ইউরোপিয়ান কোর্ট অব হিউম্যান রাইটস এমন রায় দিয়েছে। ইংরেজি দৈনিক গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
সুদানি বংশোদ্ভূত ওই ব্যক্তির নাগরিকত্ব যখন বাতিল করা হয় তখন তিনি ছিলেন সুদানে। এরপর তিনি আর ব্রিটেনে ফিরতে পারেননি। এই ব্যক্তি ছোটবেলায় পরিবারের সাথে ব্রিটেনে আসেন। ২০০০ সালে তিনি ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পেয়েছিলেন। সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে এই ব্যক্তির নাগরিকত্ব বাতিল হওয়ার ঘটনাকে উগ্রবাদে জড়িত অভিবাসী পরিবারের সন্তানদের জন্য একটি অশনি সংকেত বলে মনে করা হচ্ছে। কেননা ইইউ আদালতের রায়ের পর হোম অফিস নাগরিকত্ব বাতিলের এই নীতি প্রয়োগ আরও বাড়িয়ে দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
অপরাধের সাজা না দিয়ে নাগরিকত্ব বাতিল কোনো সমাধান কি-না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আবার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বিদেশে থাকা অবস্থায় নাগরিকত্ব বাতিল করে দেয়ার কারণে আর যুক্তরাজ্যে ফিরতে পারেন না। এতে তার আইনের আশ্রয় নেয়ার যথাযথ সুযোগও থাকে না। ফলে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব নিয়ে যারা যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন, তারা সন্ত্রাসবাদের অজুহাতে এ আইনের ফাঁদে পড়তে পারেন বলে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। পরিচয় প্রকাশিত না হওয়া সুদানি বংশোদ্ভূত ওই ব্যক্তি ২০০৯ সালে জনশৃংখলা ভঙ্গের দায়ে গ্রেফতার হয়েছিলেন। জামিনে থাকা অবস্থায় তিনি যুক্তরাজ্য থেকে বিদেশে যান। ২০১০ সালের ১৪ জুন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেরেসা মে (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী) এক আদেশে তাঁর ব্রিটিশ পাসপোর্ট বাতিল করেন এবং যুক্তরাজ্যে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেন। এসময় ওই ব্যক্তি সুদানে অবস্থান করছিলেন। হোম অফিস দাবি করে, ওই ব্যক্তি প্রথমে সোমালিয়ায় গিয়েছিলেন এবং সেখানে তিনি সন্ত্রাসীমূলক কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন, যা আল-শাবাব জঙ্গি গোষ্ঠীর সাথে সম্পৃক্ত।
ওই ব্যক্তি আইনজীবীর মাধ্যমে সরকারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেন। ব্রিটেনের হাইকোর্ট সুপ্রিমকোর্টে ঘুরে ২০১৩ সালে তিনি বিষয়টি ইউরোপিয়ান মানবাধিকার আদালতে তুলেন। ওই ব্যক্তি দাবি করেন, ব্রিটিশ পাসপোর্ট বাতিল এবং যুক্তরাজ্যে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে তার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। কিন্তু আদালত ততকালীন হোম সেক্রেটারি থেরেসা মের পদক্ষেপকে বৈধ বলে রায় দিয়েছে। স্টাসবার্গের তিন বিচারক একমত হয়ে বলেছেন, ততকালীন হোম সেক্রেটারি থেরেসা মে দ্রুত এবং বিচক্ষণার সাথে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তা আইনসম্মত। এছাড়া ব্রিটেনে প্রবেশ করতে না দেয়ার কারণে যথাযথ আইনী পদক্ষেপ নিতে না পারার যে অভিযোগ ওই ব্যক্তি করেছিলেন, তাও নাকচ করে দিয়েছেন আদালত। ওই ব্যক্তি অভিযোগ করেছিলেন যে, টেলিফোনে তিনি তাঁর আইনজীবীর সাথে খোলাখুলি কথা বলতে পারেননি, কারণ কথপোকথন রেকর্ড করা হতে পারে বলে তিনি ভয়ে ছিলেন।
ইইউ আদালতের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় হোম অফিস এক বিবৃতিতে বলেছে, ব্রিটিশ নাগরিকত্ব লাভ একটি বড় সুযোগ। এটা কোনো অধিকার নয়। দেশ ও জনগণের নিরাপত্তা বিঘœ করে এমন যে কাউকে নাগরিকত্ব না দেয়া বা কারও নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ার জন্য হোম সেক্রেটারিকে যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, তা অত্যন্ত যুক্তিসংগত।
১৯৮১ সালের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব আইনে নাগরিকত্ব বাতিলের সুযোগ দেয়া থাকলেও এই ক্ষমতার খুব একটা প্রয়োগ হয়নি বলা চলে। কিন্তু কনজারভেটিভ দলীয় থেরেসা মে হোম সেক্রেটারির দায়িত্ব পাওয়ার পর ২০১০ সালে ৩৩ জনের নাগরিকত্ব বাতিল করেন। তবে এদের সবাই দ্বৈত নাগরিক ছিলেন কিংবা তাদের অন্যদেশে নাগরিকত্বের সুযোগ ছিল বিধায় এদের রাষ্ট্রহীন হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। ফলে ব্যাপক সমালোচনা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে সিদ্ধান্তগুলো টিকে যায়।
সিরিয়ার জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস-এ যোগ দেয়া ব্রিটিশ নাগরিকরা যাতে যুক্তরাজ্যে ফিরতে না পারে সেজন্য ২০১৪ সালে থেরেসা মে নাগরিকত্ব বাতিলের ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করেন। যুক্ত করেন, অন্য কোনো দেশের নাগরিক হওয়ার যোগ্য বিবেচনার মত পর্যাপ্ত আলামত থাকলে তাদের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিল করা যাবে। প্রায় ৮ শতাধিক ব্রিটিশ নাগরিক আইএস-এ যোগ দিতে সিরিয়ায় গিয়েছেন বলে ধারণা করা হয়।
যুক্তরাজ্যের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বৈধ উপায়ে ১০ বছর বসবাস করলে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পেয়ে থাকেন। আবার স্পাউস কিংবা ওয়ার্ক পারমিটসহ নানা শ্রেণিতে আরও দ্রুততম সময়ে ব্রিটিশ নাগরিক হওয়া যায়। ইইউ আদালতের রায়ের পর এটা নিশ্চিত হলো যে, ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পেলেও ব্রিটেনে আজীবন থাকার নিশ্চয়তা নেই। আইন মেনেই ব্রিটিশ নাগরিকত্ব টিকিয়ে রাখতে হবে।