সিলেটে থেকে পরিত্যক্ত প্লাস্টিক রফতানি হচ্ছে বিদেশে!
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ মার্চ ২০১৭, ১১:১২ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
পরিবেশের শত্রু হিসেবেই এতোদিন বিবেচিত হয়ে আসছিল পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল। এই পুরনো প্লাস্টিকের বোতল এখন আর ফেলনার জিনিস নয়। পরিত্যক্ত বোতলের চিপস এখন রফতানি হচ্ছে বিদেশে। এতে একদিকে যেমনি আয় হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা অন্যদিকে কমছে পরিবেশ দূষণ। পাশাপাশি সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে কর্মসংস্থানের। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ক্ষুদ্র এ শিল্পের আরো বিকাশ ঘটানো সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, বাসা-বাড়ি ও রাস্তাঘাটে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পরিত্যক্ত প্লাস্টিক সংগ্রহ করে ভাঙাড়ি ব্যবসায়ীরা তা বিক্রি করে থাকেন প্লাস্টিক প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা মালিকদের কাছে। পরে প্লাস্টিকের বোতলগুলো পরিচ্ছন্ন করে চিপস আকারে কেটে তা রফতানি করা হয় চীন, কোরিয়া ও ভিয়েতনামের মতো শিল্প উন্নত দেশগুলোতে। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও এই ক্ষুদ্র শিল্পটি বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অপার সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে।
সিলেট পেট এসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. কামরুল হোসেন চৌধুরী জানান- সিলেটে ১৪টি কারখানায় প্লাস্টিক বোতল প্রক্রিয়াজাত করে চিপস তৈরি করা হয়। এখাতে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় একহাজার মানুষের। এছাড়া প্রতি মাসে সিলেটের কারখানাগুলো থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা মূল্যের প্লাস্টিক চিপ রফতানির জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের কাছে পাঠানো হয়।
সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শাহজালাল প্লাস্টিক কারখানার স্বত্তাধিকারী দবির চোকদার জানান- রঙভেদে তারা প্রতিকেজি পুরাতন প্লাস্টিক বোতল ২০ থেকে ৫০ টাকায় কিনে থাকেন। আর প্রক্রিয়াজাত করণের মাধ্যমে প্রতিকেজি প্লাস্টিক চিপস বিক্রি করেন ৩৫ থেকে ৭০ টাকায়। এই ব্যবসা মোটামুটি লাভজনক হলেও ব্যাংক ঋণের চড়া সুদের কারণে মাস শেষে লাভের প্রায় পুরোটাই হাতছাড়া হয়ে যায় ব্যবসায়ীদের। ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমানো হলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা নিজেরাই বিদেশে প্লাস্টিক রফতানি করতে পারতেন। এতে তারা আর্থিকভাবে লাভবানও হতে বলে দাবি করেন তিনি।
পুরনো প্লাস্টিক প্রক্রিয়াজাতকরণের এ কারখানাগুলোর স্থায়ী জায়গা না থাকাকে বড় বাধা বলে দাবি করে দক্ষিণ সুরমার আরাফাত প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজের স্বত্তাধিকারী হানিফ ভূইয়া জানান- ৫ বছরের জন্য জায়গা ইজারা নিয়ে তারা কারখানা চালান। ইজারার মেয়াদ শেষ হলে মালিক অস্বাভাবিক হারে ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। এর প্রতিবাদ করারও কোন সুযোগ নেই। সরকারী উদ্যোগে স্থায়ী জায়গার বন্দোবস্ত করা গেলে এ ব্যবসার প্রসার ঘটতো এবং বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হতো বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নতুন এ রফতানি পণ্যকে সম্ভাবনাময় উল্লেখ করে সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি সালাহ উদ্দিন আলী আহমদ বলেন- পরিত্যক্ত প্লাস্টিক বোতল বিদেশে রফতানি হওয়ায় আমরা একদিকে যেমনি বৈদেশিক মূদ্রা আয় করছি, তেমনি পরিবেশ রক্ষাও করতে পারছি। ক্ষুদ্র এই ব্যবসায়ীদের সরকারি উদ্যোগে পৃষ্ঠপোষকতা করা গেলে উদ্যোক্তারা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি নতুন এই রফতানি পণ্যের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করার সম্ভব হবে।