ইলিয়াস পত্নীর কাছে ধরাশায়ী দুই চৌধুরী
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ মার্চ ২০১৭, ৭:৩৬ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
নবগঠিত ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচনে বিএনপির জয়জয়কার। নির্বাচনে দলীয় গ্রুপিংয়ের বলি ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ। প্রথমবারের মতো এ উপজেলা নির্বাচন ছিলো আওয়ামীলীগের দুই চৌধুরীর ‘প্রেস্টিজ ইস্যু’র লড়াই। আর ওসমানীনগরের রাজনীতির মাঠে কোনঠাসা অবস্থানে থাকা বিএনপিকে আরো শক্তিশালী করার লড়াই ছিলো সাবেক এমপি এম. ইলিয়াস আলীর সহধর্মীনি তাহসিনা রুশদীর লুনার। গতকালই ত্রিমুখী এ লড়াইয়ের হিসেব পায় পুরো ওসমানীনগরবাসী। গতকাল ০৬মার্চ সোমবার ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তিনটি পদেই বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরা। এতে নিখোজঁ বিএনপি নেতা এম. ইলিয়াস আলীর পত্নী ও বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদীর লুনা কাছে ধরাশায়ী ক্ষমতাসীন দলের দুই প্রভাবশালী সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী ও যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
তবে দুই চৌধুরীর বিপরীতমূখী অবস্থান এবং নিজ নিজ সমর্থিত প্রার্থী থাকায় এ হার বলে মনে করছেন স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। এই অভ্যন্তরীণ কোন্দলেই আঁটকে গেছে ক্ষমতাসীনদের নির্বাচনের জয়ের স্বপ্ন। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ জনসাধারণকে একাট্টা করতে সমর্থ হোন রুশদীর লুনা।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আতাউর রহমান ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীর অনুসারী। অপরদিকে দলের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের উপদফতর সম্পাদক আখতারুজ্জামান চৌধুরী জগলু ছিলেন যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর অনুসারী। নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এ বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন শফিক চৌধুরীর বলয়ে। উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীক না পেয়ে জগলু চৌধুরী বিদ্রোহী প্রার্থী হন। বেঁকে বসা জগলু চৌধুরীকে সমর্থন দিয়ে কাছে টানেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। আনোয়ারুজ্জামানের পক্ষের নেতাকর্মীরা জগলু চৌধুরীর ও শফিকুর রহমান পক্ষের নেতাকর্মীরা আতাউর রহমানের হয়ে নির্বাচনী মাঠে লড়াই করেন। আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী এই দুই চৌধুরীর নেতাকর্মী-সমর্থকরা বিভক্ত হয়ে নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীকে যেকোনো কিছুর বিনিময়ে বিজয়ী করতে নেমেছিলেন মাঠে। কিন্তু দুই চৌধুরীর পক্ষের নেতাকর্মীদের পিছনে ফেলে জয় তুলে নেন একক প্রার্থী নিয়ে সুবিধায় থাকা ইলিয়াস পত্নী লুনার পক্ষের নেতাকর্মীরা। তবে আওয়ামীলীগের দুই প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও জয় পাওয়া সহজ ছিল না বিএনপির। নীরব ভোটেই বিএনপি প্রার্থীর জয় এসেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাছাড়া ইলিয়াস পত্নী লুনার ৪দিনের নির্বাচনী সফর ও ওসমানীনগরের ৮ইউনিয়নে জনসভা, পথসভা করে বিএনপির দলীয় নেতাকর্মীদের একজোট করায় এসেছে এই জয়। নির্বাচনী প্রচারণার শুরুতে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠলেও ইলিয়াস পত্নী লুনা এলাকায় এসে নেতাকর্মীদের মধ্যে একাট্টা সৃষ্টি করেন।
এতে করে তারা বিএনপির চেয়ারম্যান মনোনীত প্রার্থী ময়নুল হকের পক্ষে নীরব ভোট বিপ্লব ঘটান। এছাড়া দলের কর্মী সমর্থক থেকে শুরু করে জনসাধারণের কাছে সাবেক সংসদ এম ইলিয়াস আলী ছিলেন সবার উপরে। এ অঞ্চলের উন্নয়নে এই নেতার অবদান ও দীর্ঘ প্রায় ৫বছর থেকে নিখোঁজ থাকায় দল ও দলের বাইরে অনেকেই ধানের শীষ প্রতিকে ভোট দিয়েছেন বলে মনে করছেন অনেকেই।
উল্লেখ্য, গতকাল সোমবার ০৬ মার্চ নবগঠিত ওসমানীনগর উপজেলার প্রথম নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ময়নুল হক চৌধুরী। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ২০,৭৭৮ ভোট। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপি প্রার্থী গয়াছ মিয়া ২৯,৭০৮ ভোট ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপি প্রার্থী মোসলিমা চৌধুরী ২৫,৫৩৬ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।