উপজেলা পরিষদ নির্বাচন : বেকায়দায় আওয়ামী লীগ, সুবিধায় বিএনপি
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১০:০৭ অপরাহ্ণ
সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা:
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনজন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী সংগঠনের উপজেলা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আকমল হোসেন। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে একই পদে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হয়েছেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তাদীর আহমদ ওরফে মুক্তা।
এই বিদ্রোহী প্রার্থীকে নিয়ে বেকায়দায় আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব থাকলেও একক প্রার্থী নিয়ে সুবিধায় আছে বলে মনে করছে বিএনপি। গত রোববার দুপুর ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত এলাকা ঘুরে দলীয় নেতা-কর্মী ও নানা পেশার লোকদের সঙ্গে কথা বলে এই ধারণা পাওয়া গেছে। এখানে চেয়ারম্যান পদে অন্যজন হলেন বিএনপির প্রার্থী সংগঠনের জেলা কমিটির সাবেক সহসভাপতি আতাউর রহমান।
জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের সর্বশেষ নির্বাচন হয় ২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারি। ভোট গণনার পর আকমল হোসেনকে বেসরকারিভাবে জয়ী ঘোষণা করা হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ, উচ্চ আদালতে মামলা, একটি কেন্দ্রে পুনরায় ভোটসহ নানা কারণে প্রায় তিন বছর পর ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর আকমল হোসেন দায়িত্ব পান। এর আগে পরিষদে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তাদীর আহমদ।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা বলছেন, জগন্নাথপুরে দলের এক পক্ষ এখন সুনামগঞ্জ-৩ আসনের (দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ও জগন্নাথপুর) সাংসদ অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আবদুল মান্নানের অনুসারী। অন্য পক্ষ আছে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়াত আবদুস সামাদ আজাদের ছেলে আজিজুস সামাদ আজাদ ডনের সঙ্গে। দলীয় প্রার্থী প্রস্তাবনার জন্য ৩ ফেব্রুয়ারি দুই পক্ষ পৃথক সভা করে। আজিজুস সামাদের পক্ষের নেতা-কর্মীরা চেয়ারম্যান পদে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হরমুজ আলীকে প্রার্থী করতে চেয়েছিলেন। নিজেদের প্রার্থী দিতে না পেরে তাঁরা এখন অনেকটা নীরব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, দুই প্রার্থী নিয়ে নেতা-কর্মীরা নানা হিসাব-নিকাশ করছেন। এখন বিভক্ত নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করাই দলীয় প্রার্থীর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। আরেক নেতা বলেন, রাজনীতি এবং বয়স দুদিক থেকে আকমল হোসেন অভিজ্ঞ। অন্যদিকে মুক্তাদীর আহমদ নিজে তরুণ এবং দীর্ঘদিন পরিষদে দায়িত্ব পালন করায় উপজেলাজুড়ে মানুষের সঙ্গে তাঁর একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে তাঁকে নিয়ে বিশেষ আগ্রহ আছে। আজিজুস সামাদ আজাদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জয়দ্বীপ সূত্রধর বীরেন্দ্র বলেন, ‘শুরুতেই গলদ হয়েছে। প্রার্থী প্রস্তাবনার জন্য কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুসারে কোনো বর্ধিত সভা হয়নি। সভাপতি-সেক্রেটারি কিছু লোক নিয়ে একতরফাভাবে এটা করেছেন। এ নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ আছে।’
পৌর শহরের থানা রোডে গণসংযোগকালে কথা হয় মুক্তাদীর আহমদের সঙ্গে। চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যান মিলিয়ে প্রায় ৮ বছর দায়িত্ব পালনের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ছাত্রজীবন থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সামনে রেখে রাজনীতি করছি। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের উৎসাহে প্রার্থী হয়েছি। দলমত-নির্বিশেষে সবার সহযোগিতা পাচ্ছি। আমি আমার শ্রম, মেধা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে অগ্রসর জগন্নাথপুর গড়তে চাই।’
আতাউর রহমান ভরদুপুরে পৌর শহরের ইকরছই এলাকায় দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করছিলেন। সভার একপর্যায়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতা শাখাওয়াত হোসেন জীবন মুঠোফোনে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দেন। সভা শেষে আতাউর রহমান বলেন, ‘আমাদের অবস্থা ভালো। দলের সবাই এক হয়ে কাজ করছেন। জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।’ তাঁর সঙ্গে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবু হুরায়রা ছাদ যোগ করেন, ‘আমরা গত নির্বাচনেও জিতেছিলাম। পরে ফল কেড়ে নেওয়া হয়। এবার সবকিছু মোকাবিলায় আমরা ঐক্যবদ্ধ।’
আকমল হোসেন সকাল থেকে গণসংযোগে করেন উপজেলার রানীগঞ্জ এলাকায়। মুঠোফোনে তিনি বলেন, ‘আমি দলের প্রার্থী। সব নেতা-কর্মী আমার সঙ্গে আছেন এবং কাজ করছেন।’ দলের পদধারী এক নেতা একই পদে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিষদের তিনজনই আওয়ামী লীগের। প্রার্থী বাছাই সভায় অনেকের মত ছিল, আমরা তিনজনই যেন স্ব-স্ব পদে নির্বাচন করি। কিন্তু ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে মুক্তাদীর আপত্তি জানান। এখন যেহেতু তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন সে কারণে দলীয়ভাবে তাঁর বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুজিবুর রহমান বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তাঁরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হলেন বিজন কুমার দে, বিএনপির সোহেল আহমদ খান টুনু, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি কামাল উদ্দিন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সৈয়দ ছলিম আহমদ, স্বতন্ত্র মো. ফয়জুল হক। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান হাজেরা বারী, বিএনপির ফারজানা আক্তার ও স্বতন্ত্র সুফিয়া খানম সাথী। জগন্নাথপুর উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ৬৭ হাজার ৪৯৯ জন। ভোট হবে আগামী ৬ মার্চ।