সহপাঠীদের হাতেই খুন কিশোর সোহাগ
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ৪:৩২ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
সহপাঠীদের হাতেই খুন হয়েছে সোহাগ। চার বন্ধু মিলে রাতের আঁধারে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। আর হত্যার পর লাশ জমিতেই রেখে চলে যায় তারা। হত্যায় ব্যবহৃত দা নজমুল নিয়ে যায় তার বাড়ি। লাউঝাড়ের নিচে বস্তা দিয়ে ঢেকে রেখেছিল দা। পুলিশ নজমুলকে সঙ্গে নিয়েই ওই দা উদ্ধার করে। পুলিশ জানায়- উদ্ধার করার সময়ই দেখা গিয়েছিল দা-য়ে রক্ত লেগে আছে। গোটা দা-ই ছিল রক্তমাখা। থানায় নেয়ার পর নজমুল খুনের ঘটনা স্বীকার করে। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ বাড়ির পেছনের লাউঝাড়ের নিচ থেকে ওই দা উদ্ধার করে। নজমুলের স্বীকারোক্তি মতো পুলিশ ঘটনার পরদিন অভিযান চালিয়ে আরেক সহপাঠী রাজুকেও গ্রেপ্তার করেছে। রাজুও ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। জগন্নাথপুর থানা পুলিশ খুনের ঘটনায় জড়িত আরো দুই কিশোরের নাম পেয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। তবে কী কারণে সোহাগকে হত্যা করা হয়েছে সেটি এখনো অজানা। এই খুনের পেছনে বড় ধরনের রহস্য লুকিয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ। এ কারণেই পুলিশ সুনামগঞ্জ আদালতে নজমুল ও রাজুর ৫ দিনের রিমান্ড চেয়েছে। জগন্নাথপুর থানার ওসি মুরছালিন গতকাল মানবজমিনকে জানিয়েছেন- কারা, কীভাবে লোমহর্ষক এ ঘটনা ঘটিয়েছে সেটি পুলিশের কাছে প্রায় পরিষ্কার। ইতিমধ্যে তদন্তে পুলিশ সেগুলো পেয়েছে। দুই আসামিও গ্রেপ্তার হয়েছে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে নজমুল একেক সময় একেক কথা বলেছে। সে প্রথমে বলেছিল নিহত সোহাগের কাছে সে আড়াইশ’ টাকা পেত। ওই টাকা নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। দিনের বেলা সোহাগ তাকে মারধর করেছে। আবার এ কথা ঘুরিয়ে অন্য কথা বলে। সুতরাং খুনের কারণ নিয়ে রহস্য দেখা দিয়েছে। এ কারণেই আসামিদের ৫ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। জগন্নাথপুর উপজেলার আশারকান্দি ইউনিয়নের জয়দা গ্রামের কিশোর মাহফুজুর রহমান সোহাগ। ১৩ বছরের মেধাবী সোহাগ জয়দা দাখিল মাদরাসার ছাত্র। গ্রামের লোকজন জানিয়েছেন- শীত মৌসুমে জগন্নাথপুর এলাকার প্রায় প্রতিটি এলাকায়ই ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এসব আয়োজনে সন্ধ্যা হলেই ছুটে যেতো সোহাগ। বন্ধুদের সঙ্গে নিয়েই সে ওয়াজ মাহফিলে অংশ নিতো। গত ১৩ই ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার দিকে একই গ্রামের সহপাঠী নজমুল ঘর থেকে ওয়াজ মাহফিলে নেয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে সোহাগকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর থেকে নিখোঁজ ছিল সোহাগ। রাতভর তাকে বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করলেও পাওয়া যায়নি। ১৪ই ফেব্রুয়ারির বাড়ির কাছাকাছি একটি ধান ক্ষেত থেকে সোহাগের রক্তমাখা লাশ উদ্ধার করে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- সোহাগ খুনের ঘটনা ছিল মর্মান্তিক। তার মাথা, মুখ, কপালসহ বিভিন্ন স্থানে এমনভাবে কোপানো হয় যে লাশ দেখে আঁতকে ওঠেন সবাই। এ কারণে ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা লাশ সোহাগের পিতা তৈয়বুর রহমান টিটুকে দেখানো হয়নি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জগন্নাথপুর থানার সাব-ইন্সপেক্টর আনোয়ার হোসেন গতকাল জানিয়েছেন- ঘটনার পর থেকে পুলিশ সক্রিয় রয়েছে। ইতিমধ্যে পুলিশ এ ঘটনার প্রায় ৮০ ভাগ তথ্য খুঁজে পেয়েছে। আরো কিছু তথ্যের প্রয়োজন। এ কারণে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন-আলোচিত এ খুনের ঘটনার তদন্ত দ্রুত শেষ করেই আদালতে রিপোর্ট দেবো। সোহাগের বাবা তৈয়বুর রহমান টিটু ও মা নার্গিস বেগম জানিয়েছেন- গ্রামের কারও সঙ্গে তাদের কোনো বিরোধ নেই। সবার সঙ্গে সংখ্যতা ছিল। তাদের পুত্র সোহাগকে হত্যার পর প্রভাবশালী মহল এই মামলাটি ভিন্নখাতে নেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। খুনিদের রক্ষা করতে একটি মহলও সক্রিয় রয়েছে। তারা আলোচিত এ ঘটনার বিচার দাবি করেন। সূত্রঃ মানবজমিন