৭ বছরে ৫৯ বার কেঁপেছে সিলেট
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ৩:১৯ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজঃ ভারতের আসাম ও মেঘালয়ের কাছে অবস্থিত ‘ডাউকি ফল্টে’র অন্তর্ভুক্ত ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা সিলেট। বছরে বেশ কয়েকবার ভূমিকম্প হয় এখানে। গত সাত বছরেই ৫৯ বার ভূমিকম্প হয়েছে সিলেটে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী জানান, এই সময় পর্যন্ত যে ভূমিকম্প হয়েছে সবগুলোই চার মাত্রার বেশি। এর মধ্যে ২০১০ সালেই ১৯ বার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। ২০১৬ সালে ভূমিকম্প হয় ১৮ বার।
গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ৭ বছরে ৫৯ বার ভূমিকম্পের ঘটনায় বিশেষজ্ঞ মহল উদ্বিগ্ন। এ অবস্থায় সিলেটের সকল ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করতে ৫২ হাজার ভবনের অ্যাসেসমেন্ট (মূল্যায়ন বা নিরীক্ষা) করার প্রক্রিয়া চলছে। বিষয়টি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও সংশিষ্টরা এ প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে চাচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সিলেট ভূমিকমেপর বিপদসংকুল এলাকার মধ্যে পড়েছে। সিলেট একদিকে ভূমিকমেপর উত্পত্তিস্থল ডাউকি পয়েন্টর মাত্র ২শ’ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, অন্যদিকে শাহবাজপুর ফল্টও (ভূগর্ভস্থ পেটের ফাঁক, এটি হবিগঞ্জ-কুমিল্লা এলাকাধীন) সিলেটের কাছাকাছি। যে কারণে সিলেটে ভূমিকমেপর ঝুঁকি খুব বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে ভূমিকমেপর ঝুঁকিভেদে তিনটি বলয় নির্ধারিত রয়েছে। তন্মধ্যে সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ তথা প্রথম বলয়েই সিলেটের স্থান। এ বলয়ে ৭-৯ মাত্রার ভূমিকমপ হতে পারে। প্রথম বলয়কে ভূকমেপর ডেঞ্জার জোন বলে বিবেচনা করা হয়।
সংশিষ্টরা বলছেন, সামপ্রতিক সময়ে ঘন ঘন ভূমিকমপ হচ্ছে। যদিও ভূকমেপর মাত্রা সহনীয় থাকছে, তথাপি পরিস্থিতি বিবেচনায় আগে থেকেই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। এজন্য সিলেটের সকল ভবন অ্যাসেসমেন্ট করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অ্যাসেসমেন্ট প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম বলেন, সিলেটে প্রায় ৫২ হাজার ভবন রয়েছে। এসব ভবনের অ্যাসেসমেন্ট করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনার, ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনীর একটি টিম, শাবির শিক্ষকদের একটি টিম এবং সিটি করপোরেশন একযোগে কাজ করবে। বিষয়টি প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও ইতিমধ্যে বিভাগীয় কমিশনার ও সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে।
ড. জহির বিন আলম বলেন, সিলেটের ভবনগুলোর গঠন ভালো। ছোটখাটো ভূমিকমপ হলে তেমন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নাই। ডাউকি পয়েন্টে যদি ৬ মাত্রার ভূমিকমপ হয়, তবে সিলেটে হবে ৫ মাত্রার মতো। সরাসরি সিলেটে যদি ৫ থেকে ৫.৫ মাত্রার ভূমিকমপ হয়, তবে ক্ষতি হবে ১০-২০ ভাগ। কিন্তু এর বেশি মাত্রার ভূমিকমপ হলে ক্ষয়ক্ষতি বাড়বে।
সংশিষ্টদের মতে, সিলেটের প্রায় ৫২ হাজার ভবনের মধ্যে কতগুলো ভবন ঝুঁকিপূর্ণ, কতগুলোর মেরামত দরকার, তা চিহ্নিত করতেই অ্যাসেসমেন্ট করা হবে। এ প্রক্রিয়ায় চিহ্নিত ভবনগুলো ভেঙ্গে ফেলা কিংবা মেরামত করার বিষয়টি সিটি করপোরেশনকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৃহত্তর সিলেটের অন্তত: ১শত স্থাপনা রয়েছে যা ঝুকিপূর্ণ। গত কয়েক বছরে ভবন নির্মাণে অনেকের মধ্যে সচেতনতা এসেছে। তবে কোনো ধরণের দুর্যোগ দেখা দিলে সেই দুর্যোগ মোকাবিলার প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সিলেট দমকল বাহিনীর হাতে নেই বলে জানান সিলেট ফায়ার সর্ভিস স্টেশনের উপ-পরিচালক রফিকুল ইসলাম। তিনি জানান বহুতল ভবনে উঠার যন্ত্রপাতি নেই। অন্যদিকে সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ের আশংকা হচ্ছে, বেশি মাত্রায় ভূমিকম্প হলে নগরীর গ্যাস লাইন ফেটে, বিদ্যুতের তার ছিড়ে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের মতো ঘটনা ঘটতে পারে। এছাড়া সিলেটের মাটির নিচে রয়েছে তেল-গ্যাস। তাই শহরটি একারণেও ঝুকিপূর্ণ। এর প্রতিরোধক হিসাবে ‘কন্ট্রোল ট্রিপ’ নামক যন্ত্রের মাধ্যমে গ্যাস-বিদ্যুত্ সংযোগ অটো অফ হওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। যা সংযোজন জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল।
শাবির সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. আখতারুল ইসলাম বলেন, ৬০ থেকে একশ বছরের পুরনো বিল্ডিংও রয়েছে এই শহরে। রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ৫ মাত্রার বেশি ভূমিকমপ হলে অনেক পুরনো ভবন ধসে পড়বে। তিনি বলেন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনসমূহের তালিকা অনুযায়ী নগরীতে ২০টি সরকারি এবং ৮০টির মত বেসরকারি ঝুঁকিপূর্ণ বাসাবাড়ি ও ভবন রয়েছে।
শাবির বিভাগীয় প্রধান ও ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের প্রফেসর ড. জহির বিন আলম জানান নগরীর বেশ কয়েকটি ভবনকে ভয়ংকর হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন ভবনও রয়েছে। -সুত্র ইত্তেফাক