ভুলে ভরা আর ‘হেফাজতের কথায়’ পাঠ্য বইয়ে পরিবর্তন ঠিক হয়নি : জাফর ইকবাল
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ জানুয়ারি ২০১৭, ১:৩৯ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
শিক্ষাবিদ, লেখক ও অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, হেফাজতের কথায় পাঠ্যবইয়ে পরিবর্তন আনা ঠিক হয়নি। এতে আমি খুব কষ্ট পেয়েছি। সকলকে এর প্রতিবাদ করারও আহ্বান জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সিলেট নগরীতে শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জাফর ইকবাল এসব কথা বলেন।
গত বছরের ৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় নেতাদের এক যৌথ বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। ওই বিবৃতিতে পাঠ্যপুস্তকের বাংলা বই থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে ১৭টি গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধের তালিকা প্রকাশ করা হয়। যার সবই ২০১৭ সালের বইয়ে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। একইভাবে যে ১২টি গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধ-নিবন্ধকে নাস্তিক্যবাদী ও হিন্দুত্ববাদী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয় তার সব কটিই বাদ দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরীর পুলিশ লাইন উচ্চ বিদ্যালয়ে ‘শিক্ষাঙ্গনে শান্তি ও মূল্যবোধ : আমাদের করণীয়’ শীর্ষক বেসরকারী উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা আইডিয়া ও গণস্বাক্ষরতা অভিযান আয়োজিত মতবিনিময় সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাফর ইকবাল।
অনুষ্ঠান শেষে পাঠ্য পুস্তকে পরিবর্তন সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমি এখনো বইগুলো দেখিনি। কিন্তু একধরণের অভিযোগ ওঠেছে, এই বিষয়টি বিবেচনার সময় এসেছে, হেফাজত কিংবা তারা একধরণের অভিযোগ করেছিলো, সেই অবিযোগের পরিপ্রক্ষিতে আমাদের বইয়ের যে সমস্ত বিষয় পরিবর্তন করা হয়েছে, যদি সেটা হয়ে তাকে তবে তা একেবারেই ঠিক হয়নি।’
জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমাদের মূল্যবোধের ভেতরে আসলে হেফাজত, কিংবা ইসলাম কিংবা হিন্দু এই ধরণের বিষয় থাকার কথা না। আমরা একটি নির্দিষ্ট বয়সের ছেলেমেয়েদের যে জিনিসটা শেখাতে চাই, সেই জিনিসটা আমরা সঠিকভাবে শেখাতে পারছি কি না সেটাই মূল আলোচ্য বিষয়।’
‘আমি বইগুলো এখনো দেখিনি কিন্তু যদি এই ধরণের পরিবর্তন হয়ে থাকে তাহলে বলতে হবে আমি মনে খুব কষ্ট পেয়েছি’,- বলেন জাফর ইকবাল।
সকল সচেতন মানুষকে এই পরিবর্তনের প্রতিবাদ করা উচিত জানিয়ে এই শিক্ষাবিদ বলেন, শিক্ষার্থীদের অসাম্প্রদায়িক শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। এই ক্যারিকুলাম ঠিক করতে হবে। এ ব্যাপারে শিক্ষাবিদদের মতামত নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
গত ১ জানুয়ারি দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে বই তুলে দেয় সরকার। এনসিসিসির এসব বইয়ের নানা ভুল অসঙ্গতি নিয়ে কয়েকদিন ধরেই চলছে ব্যাপক আলোচনা।
এ ব্যাপারে জাফর ইকবাল বলেন, পাঠ্যবইয়ে অনেক ভুল রয়েছে বলে শুনেছি। যা মোটেই কাম্য নয়। এমন ভুল থাকা প্রমাণ করে যারা বইগুলো ছাপার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন তারা মোটেই আন্তরিক নন। তারা বিন্দুমাত্র গুরুত্ব দেন না। তারা আন্তরিক হলে ভুল থাকতো না। ভুল থাকা মোটেই উচিত নয়।
তিনি বলেন, এই বিষয়টি নিয়ে হৈ-চৈ হলে হয়তো তদন্ত কমিটি হবে। কিন্তু পরে সবাই ভুলে যাবে। কিছুই হবে না। এই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত জানিয়ে তিনি বলেন, এর সাথে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। কারণ শিশুদের যখন বিনামূল্যে বই দেওয়া হয় তখন তারা আনন্দের সঙ্গে সেগুলো গ্রহণ করে। কিন্তু যখন বইয়ে অনেক ভুল দেখতে পায় তখন শিশুরা খুব কষ্ট পায়। তাদের মন ভেঙ্গে যায়।
জাফর ইকবাল বলেন, এই ভুলগুলো দ্রুত ঠিক করতে হবে। শিশুদের ভুল শিখানো যাবে না। এবং আগামীতে যাতে এধরণের ভুল কখনোই, কখনোই না হয় এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।
গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরীর সঞ্চালনায় এ অনুষ্ঠানে অতিথিরা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এতে নগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়।