তবুও ফ্যাক্টর ডনঃসুনামগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচন
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ ডিসেম্বর ২০১৬, ৫:৪৫ পূর্বাহ্ণ
চৌধুরী মুমতাজ আহমদঃ
ডন। বিশেষ কোনো জগতের নিয়ন্ত্রণ থাকে তার হাতে। তার অঙ্গুলি হেলনে পাল্টে যায় হিসাব নিকাশ। সিনেমায় এমনই দেখা যায় সচরাচর। সুনামগঞ্জের জেলা পরিষদ নির্বাচনে আজিজুস সামাদ আজাদ ডন যেন সত্যি তেমনই এক ‘ডন’ হয়ে উঠেছেন। তিনি জনপ্রতিনিধি নন। তাই তার ভোট দেয়ার অধিকারও নেই। কিন্তু ভোটারদের অনেকেরই চাবি তার হাতে রাখা আছে। সে চাবি যার তালায় জুড়বে তারই বিজয়ের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। সুনামগঞ্জের নির্বাচনে তাই বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছেন ডন। তিনি যেদিকে হেলবেন সে দিকেই বিজয়ের পতাকা উড়বে- এমনটাই বাতাসে কানাকানি। নির্দলীয় লেবাসে জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও দল থেকে প্রার্থী সমর্থনের কারণে তা দলীয় নির্বাচনের আমেজ পেয়েছে।
সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এনামুল কবীর ইমন। অপরদিকে তাকে টেক্কা দিয়ে যিনি লড়াইয়ে নেমেছেন সেই নূরুল হুদা মুকুটও আওয়ামী লীগ নেতা। শুধু নেতাই নন মুকুট সুনামগঞ্জ আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা, ছিলেন জেলার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে। দুই নেতার লড়াইয়ে বেকায়দায় পড়েছেন জেলা পরিষদের আওয়ামী ঘরানার নির্বাচকমণ্ডলীরা (ভোটার)। কাকে বেছে নেবেন, দল সমর্থন দিয়েছে ইমনকে, মুকুটকেই বা কীভাবে মাথা থেকে ফেলে দেন। উভয় সংকটে আছেন সুনামগঞ্জের আওয়ামী জনপ্রতিনিধিরা। আজিজুস সামাদ ডনের কাছে সে সমস্যাটা আরো বেশি বড় হয়ে ধরা দিয়েছে। সবসময়ই দেখে এসেছেন তার বাবা সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদের বিশেষ স্নেহভাজন ছিলেন নূরুল হুদা মুকুট। পুরো সুনামগঞ্জও জানে মুকুট বেড়ে উঠেছেন আবদুস সামাদ আজাদেরই ছায়ায়।
শুধু তাই নয়, ডন দেখেছেন মুকুটও তার বাবার সে ভালোবাসার প্রতিদান দিয়ে গেছেন সব সময়। সামাদ আজাদকে মুকুটও বাবার মতো শ্রদ্ধা করেছেন। বাবার প্রিয়পাত্রটিকে কীভাবে নিরাশ করেন তিনি। আবার অন্যদিকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কি করে যাবেন আজিজুস সামাদ আজাদ ডন। একা হলে না হয় একটা কথা ছিল। আজিজুস সামাদ আজাদের একটা ভোট ব্যাংক আছে, সমস্যা বেঁধেছে সেখানেই। ইমন-মুকুট দুজনই সেই ভোট ব্যাংকের চাবিটি দাবি করেছেন ডনের কাছে। সামাদ আজাদকে যারা ভালোবাসেন তাদের অনেকেই এখন ডনের অনুসারী। তাদের অনেকেই সুনামগঞ্জের বিভিন্ন স্তরে জনপ্রতিনিধিত্ব করছেন। অনেকেরই বিশ্বাস ডন যেমন বলবেন চোখ বুঝে তারা তেমনটিই করবেন। সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল হুদা মুকুট দৃঢ়তার সঙ্গেই বললেন, ডন আছেন আমার সঙ্গে। আছেন পৌরসভার চেয়ারম্যান আইয়ুব বখত জগলুল, আছেন সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য মতিউর রহমান। প্রচারণাকালে তিনি আলো দেখতে পাচ্ছেন বলেই জানান।
মুকুট অভিযোগ করেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থক সংসদ সদস্যরা নির্বাচনী আচরণবিধি মানছেন না। তিনি অভিযোগ করেন, সোমবার সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন তার ধর্মপাশাস্থ বাড়িতে এলাকার সকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বারকে জড়ো করেছিলেন। গরু জবাই করে ভোজ দিয়ে প্রকল্প বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি একই রকম অভিযোগ করেন সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকের বিরুদ্ধেও।
সংসদ সদস্য মানিক তার এলাকার সকল চেয়ারম্যান-মেম্বারকে জড়ো করে ২৮ তারিখের পর ৫ লাখ টাকা করে প্রকল্প বরাদ্দের আশ্বাস দিয়েছেন। সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সদ্য বিদায়ী প্রশাসক ব্যারিস্টার এনামুল কবির ইমন বললেন, আমার সঙ্গে মন্ত্রীরা আছেন, আছেন সকল সংসদ সদস্য। তাই আমার ভয়ের কোনো কারণই নেই। আজিজুস সামাদ ডন আপনার সঙ্গে আছেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার ইমন বলেন, তার সঙ্গে দেখা করে সহযোগিতা চেয়েছি-দোয়া চেয়েছি। ব্যারিস্টার ইমনেরও অভিযোগ আছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বিরুদ্ধে। তার অভিযোগ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে জলের মতো টাকা ঢালছেন নূরুল হুদা মুকুট।
মানবজমিনের কথা হয় আজিজুস সামাদ ডনের সঙ্গে। তিনি বলেন, নির্দিষ্ট দায়িত্ব না দিলে স্থানীয় রাজনীতিতে জড়াতে চাই না আমি। এ কারণে সুনামগঞ্জের জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে আমার কোনো আগ্রহ নেই। তিনি বলেন, যেহেতু আমাকে কোনো দায়িত্ব দেয়া হয়নি তাই অযাচিত হস্তক্ষেপ করতে চাই না এবং তা আমার পছন্দও নয়। ডন স্বীকার করেন নুরুল হুদা মুকুট তার বাবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন তবে এবারের সুনামগঞ্জের জেলা পরিষদ নির্বাচনের ব্যাপারে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। ডন যার জয় তার- এমন কথা শুনা যাচ্ছে এমন কথার জবাবে আজিজুস সামাদ ডন বললেন, তা সত্য নয়-শুধু বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলা।