শাবিপ্রবিতে ভর্তি জালিয়াতি : অপরাধীদের বাচাঁতে মরিয়া শাবি প্রশাসন ও পুলিশ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ নভেম্বর ২০১৬, ১০:৪৪ অপরাহ্ণ
বিশেষ প্রতিনিধি:
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশবিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির চক্রান্তের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ৮জনকে গ্রেফতার করার তিন দিন পেরিয়ে গেলেও মামলা করেননি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অন্যদিকে গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে শাবি ছাত্রলীগের এক কর্মী আটক হওয়ার পর আশ্রয়দানকারী মূল অপরাধীদের বাঁচাতে পুলিশ মরিয়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরও পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ নিয়ে বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের কাছে ব্যাখ্যা চান। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নীরব থাকায় মুলহোতারা ধরা-ছোয়ার বাইরে রয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় জড়িতদের বাঁচাতে দুর্বল আইনে পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের অভিযোগ করেছেন স্বয়ং শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি-সম্পাদক।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেই মামলা:
জালিয়াতকারীদের বিরুদ্বে পুলিশবাদী হয়ে মামলা করলেও ঘটনার তিন দিন পেরিয়ে গেলেও কোন মামলা করেনি শাবি প্রশাসন।
এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার ইশাফাকুল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে, তিনি নিজেই বাদী হয়ে হয়ে রবিবার সকালে মামলা করেছেন বলে দাবি করেন। তবে মামলার কপি চাওয়া হলে তিনি নিশ্চুপ থাকেন।
অন্যদিকে জালালাবাদ থানার ওসি (তদন্ত) ওমর ফারুক জানান, আমরা বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনকে বারবার অনুরোধ জানানো সত্ত্বেও উনারা অপারগতা প্রকাশ করলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোন ধরনের মামলা করেননি বলে তিনি জানান।
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন:
এদিকে ওসি আখতার হল থেকে আটকের বিষয়ে অস্বীকার করলেও ড. রাশেদ তালুকদার হল থেকে
আটকের বিষয়ে স্বীকার করেন। অথচ ২১০ নং কক্ষ থেকে আল আমিনকে আটক করা হয় বলে হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দাবি করে আসছেন। ওই কক্ষটি ছাত্রলীগ সহসভাপতি অন্জন রায় সমর্থিত সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম নিয়ন্ত্রণ করেন।
থানায় নজরুলের অবস্থান:
আল আমীনকে আটকের পর থেকে ছাত্রলীগ নেতা নজরুল ইসলাম জালালাবাদ থানায় অবস্থান করতে দেখা গেছে। পরীক্ষার আগের রাত(২৫ নভেম্বর) থেকে জালালাবাদ থানায় দৌড়ঝাপ শুরু করেন নজরুল। শনিবার এবং রবিবার তাকে ওসি আখতার হোসেনের কক্ষে অবস্থান করতে দেখা যায়।
সাংবাদিকদের প্রক্টরের ফোন:
এদিকে জালিয়াত চক্রকে নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের ব্যাখ্যা জানতে সাংবাদিকের কাছে ফোন দিয়ে জানতে চান। সাংবাদিকরা অভিযোগ করে বলেন, প্রক্টর মহোদয় জোর করে সংবাদের সোর্সের নাম জানার চেষ্টা করেন। বিষয়টি স্বীকার করে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. রাশেদ তালুকদার বলেন, নিউজের সোর্স আমি জনতে চাইবনা?
মূল হোতাদের বাঁচানোর চেষ্টায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মী-শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ:
এদিকে ফেসবুকে শাবি ছাত্রলীগ সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থ লিখেন, গত ২৬ নভেম্বর(শনিবার) শাবির ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় । কিন্তু শাবির ছাত্র হিসেবে মনের মাঝে অজানা ভয়ের ধাক্কা লাগে, যখন শুনি জালিয়াতির মাধ্যমে একদল প্রতারক চক্র শাবিপ্রবিতে অনৈতিকভাবে ভর্তির চেষ্টা চালাচ্ছে ।
তিনি অভিযোগ করেন, প্রতারকচক্রের রাঘববোয়ালরা কোথায়? আটককৃত প্রতারকদের বিরুদ্ধে বর্তমান তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে মামলা না দিয়ে পুরোনো আইনে মামলা কেন ?
তিনি বলেন, যদি তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে মামলা হত, তাহলে শাস্তি বেশি হত। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেন বাদী হয়ে মামলা করে নাই ? সেই প্রশ্নও মনে জাগে।
যারা এই ঘৃণ্য অপরাধকে নীরব থেকে সমর্থন দিচ্ছে এবং ঘটনাটিকে অন্যদিকে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে তারা প্রকৃত অপরাধীর চেয়েও জঘন্য অপরাধী । তবে যেন চুনোপুঁটি ধরতে যেয়ে রাঘববোয়ালদের ছাড়তে না হয় ।
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, জালিয়াতি চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। আশা করি শাবি প্রশাসন সময় থাকতে সুনাম নষ্টকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে। তিনি ছাত্রলীগের ওই নেতাকে ইঙ্গিত করে লিখেছেন, ছাগল চোর, ছিনতাইকারীরা ভর্তি জালিয়াতি করছে।
প্রশাসনের মামলা না করায় নূরা আলম বলেন, চুরি হইলো নিজের ঘরে, মামলা করবে পাশের ঘরের কর্তা।
সৈয়দ জুয়েম লিখেছেন, জালিয়াতির সাথে ছাত্রলীগের কয়েকজনের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। শাবি ছাত্রলীগের অভিভাবকদের ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জানাচ্ছি।