সিলেটে প্রকাশ্যে হত্যা : ধস্তাধস্তির পর নিথর দেহ পড়ে থাকে রাস্তায়
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ নভেম্বর ২০১৬, ১২:২০ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
সিলেটের জিন্দাবাজারে কলেজছাত্র মিসবাহ উদ্দিনের খুনি শনাক্ত করা হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। তবে, কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড সেটি গতকাল পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। তবে পুলিশ বলছে, খুনি গ্রেপ্তার হলেই খুনের ঘটনার রহস্য উন্মোচিত হবে। সিলেটের প্রাণকেন্দ্র জিন্দাবাজারের কাস্টমস কার্যালয়ের সামনে সন্ধ্যারাতেই এই খুনের ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, শনিবার রাতে হঠাৎ করে কাস্টমস অফিসের সামনে তারা চিৎকার শুনেন। এ সময় ধস্তাধস্তির দৃশ্য তারা দেখেছেন। একটু পরে দেখেন এক যুবক রাস্তায় পড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে। তার গলা দিয়ে ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝরছে। পরে তার সঙ্গে এক যুবক সহ স্থানীয় লোকজন তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তারা বলেন, ধস্তাধস্তির পর তারা দেখেন দু-তিনজন যুবক জিন্দাবাজার অভিমুখে পালিয়ে যায়। খুনের ঘটনার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়- জিন্দাবাজার-চৌহাট্রা রাস্তার উপর রক্তের দাগ পড়ে আছে। ঘটনার পর বেশ কিছুক্ষণ মিসবাহউদ্দিনের দেহ রাস্তার উপর পড়েছিল। পরে সিএনজি এনে তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। রাতে ওই এলাকায় পুলিশ ও র্যাবের সদস্যরা পরিদর্শন করেন। নিহত যুবক মিসবাহউদ্দিনের বয়স প্রায় ২০ বছর। সে নগরীর মজুমদারী কোনাপাড়ার ৫৪ নং বাসার ভাড়াটে বাসিন্দা। তার মূল বাড়ি দোয়ারাবাজার উপজেলার চণ্ডিপুর গ্রামে। তার পিতা রহমতুল্লাহ জার্মান প্রবাসী। পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, বাবা রহমত উল্লাহ ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার জন্য বছর ৭ আগে তাদের সিলেট নিয়ে আসেন। মিসবাহ ২০১৪ সালে নগরীর মিরের ময়দান এলাকার কমার্স কলেজে এইচএসসি পাস করে। এরপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ না পাওয়ায় সে অনেকটা হতাশ হয়ে পড়ে। তখন থেকে সে বিদেশ যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। বাবা-মা’র চার সন্তানের মধ্যে একমাত্র পুত্র সন্তান ছিল সে। শনিবার ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতালে ছুটে যান মা। এ সময় একমাত্র পুত্রকে হারিয়ে কান্নায় বারবার মূর্চ্ছা যাচ্ছিলেন তিনি। নিহত মিসবাহ’র মা হাসপাতালে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, শনিবার বাসায় ছিল সে। সন্ধ্যার সময় সে বাসা থেকে বের হয়। বলেছিল জিন্দাবাজার যাবে। কিন্তু শেষে খবর আসে সে হাসপাতালে আছে। তিনিও খুনের ঘটনার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না। ঘটনাস্থলে তার সঙ্গে ছিল বন্ধু রমজান আলী। রাতে সে জানায়, নগরীর চৌহাট্রা থেকে সে ও মিসবাহ হেঁটে হেঁটে জিন্দাবাজার আসছিল। এ সময় তাদের ওপর হামলা হয়। তাকেও মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে তিনি দেখেন মিসবাহর গলা দিয়ে অঝোরে রক্ত ঝরছে। সিলেটের কোতোয়ালি থানার ওসি সোহেল আহমদ রাতে জানিয়েছেন, মিসবাহর গলায় একটি ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। আর ওই আঘাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হতে পারে। তিনি বলেন, ঘটনার পর থেকেই সিলেটের একজন সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে অনুসন্ধান ও অভিযান শুরু হয়েছে। দ্রুতই এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে বলে দাবি করেন তিনি। তবে, গতকাল বিকালে কোতোয়ালি থানার ওসি (তদন্ত) নুরুল আবসার জানিয়েছেন, দুপুরে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মিসবাহ উদ্দিনের লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে। এরপর বিকালের দিকে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তারা লাশ নিয়ে ছাতকে চলে যাবেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়নি বলে দাবি করেন তিনি। তবে, মিসবাহউদ্দিন খুনের ঘটনায় একজন জড়িত। তাকে পুলিশ ইতিমধ্যে শনাক্ত করেছে। এখন তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু হয়েছে। খুনি গ্রেপ্তার হলে খুনের ঘটনার রহস্য উদঘাটন হবে বলে জানান তিনি। এদিকে, খুনের ঘটনায় তথ্য পেতে রাতেই পুলিশ নিহত মিসবাহ উদ্দিনের বন্ধু রমজান আলীকে আটক করেছিল। রাতে তাকে কোতোয়ালি থানায় রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তবে, ওসি তদন্ত জানান, বন্ধু রমজান খুনের ঘটনায় সে জড়িত নয়। বরং রমজান খুনের ঘটনায় মর্মাহত।