জিন্দাবাজারে প্রকাশ্যে খুন : মিসবাহ’র ‘বন্ধুকে’ খুঁজছে পুলিশ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ নভেম্বর ২০১৬, ৯:১৬ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
সিলেট নগরীর জিন্দাবাজারে প্রকাশ্যে কুপিয়ে যুবককে হত্যার ঘটনায় কবির নামে নিহতের এক বন্ধুকে খুঁজছে পুলিশ। বন্ধুদের মধ্যে বিরোধের জের ধরে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা পুলিশের।
শনিবার (২৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় জিন্দাবাজারের কাস্টমস অফিসের সামনে প্রকাশ্যে মিসবাহ উদ্দিন নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। মিসবাহ নগরীর একটি বেসরকারি কলেজ থেকে গতবছর এইচএসসি পাস করেন।
তবে হত্যাকাণ্ডের ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ঘটনায় মামলা দায়ের হয়নি। তবে পুলিশের দাবি, মামলা না হলেও নিহতের বন্ধু ও প্রত্যক্ষদর্শীদের দেওয়া তথ্যে ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছেন তারা।
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে রোববার বিকেলে মিসবাহের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের চন্ডিপুরে পারিবারিক কবরস্থানে রাতে মিসবাহকে দাফন করা হয়। সোমবার দুপুরে এলাকাবাসীর উদ্যোগে খুনিদের গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন করা হবে।
কোতোয়ালি থানার ওসি (তদন্ত) নুরুল আফসার বলেন, নগরীর জিন্দাবাজারে একটি জিম থেকে ফেরার পথে মিসবাহের উপর হামলা হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে, দাফন শেষে তারা আসবেন বলে জানিয়েছেন। মামলা না হলেও পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে এবং বেশ কিছু তথ্য জানা গেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, আশা করছি খুব শিগগির হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কে বা কারা জড়িত; তা বিস্তারিত বলা যাবে। হত্যাকাণ্ডের পরপরই রমজান নামে মিসবাহের এক বন্ধুকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। মিসবাহের উপর হামলার পর গুরুতর অবস্থায় রমজান ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন ওসি (তদন্ত) নুরুল আফসার।
নিহতের চাচা রেজাউল করিম সেবুল বলেন, মিসবাহকে খুনের পর বন্ধু-সহপাঠীদের মাধ্যমে কবির নামে এক বন্ধুর সঙ্গে তার বিরোধ ছিল বলে জানতে পেরেছি। কবির নামের ওই ছেলেটি নগরীর জিন্দাবাজারের কাজী ম্যানশনের একটি টেইলার্সে কর্মচারী বলে জানিয়েছেন তিনি। কবিরের সঙ্গে মিসবাহের যোগাযোগ ছিল বলে তারা আগে জানতেন না। গত রমজানে কবিরের সঙ্গে মিসবাহের বিরোধ হলে মার্কেটের ব্যবসায়ীরা তা মিটমাট করে দেন বলে জানান রেজাউল করিম। পরবর্তীতে আর কোন বিরোধ না হলেও কবিরের নেতৃত্বে ৬-৭ জনের উপস্থিতিতে মিসবাহকে খুন করা হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে তিনি দাবি করেন। নিহতের মা বাদি হয়ে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি।
গত শনিবার রাত ৮ টায় নগরীর জিন্দাবাজারে খাদ্য অফিসের সামনে মিসবাহকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে খুন করা হয়। ওসমানী হাসপাতালে নেওয়ার আগে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয় বলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান। খবর পেয়ে কোতোয়ালি থানা পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য একই হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে।
লাশের সুরতহাল প্রসঙ্গে কোতোয়ালি থানার ওসি সোহেল আহমদ বলেন, নিহতের গলার বাম পাশে ধারালো অস্ত্র দিয়ে একটি মাত্র কুপ মারা হয়েছে।
এদিকে রোববার ময়না তদন্ত শেষে লাশ গ্রহণের জন্য হাসপাতাল মর্গের সামনে মিসবাহের স্বজন ও বন্ধুরা ভিড় করেন। এসময় তাদের কান্নায় আশপাশের পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে। একমাত্র ছেলের লাশের অপেক্ষায় থাকা মায়ের আহাজারিতে উপস্থিত সকলের চোখে পানি আসে।
সিলেট কমার্স কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করা নিহত মিসবাহ উদ্দিন দোয়ারাবাজারের চন্ডিপুরের রহমত উল্লাহের ছেলে। বাবা জার্মান প্রবাসী হওয়ায় পড়ালেখার জন্য মা ও দুই বোনের সঙ্গে সে নগরীর মজুমদারী কোনাপাড়ার শ্রাবণী ৫৪ নম্বর বাসার ভাড়া থাকতেন। এক বছর আগে এইচএসসি পাস করলেও সেবার ভালো কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেননি মিসবাহ।