সুস্থ হয়ে আবার লেখাপড়া চালিয়ে যেতে শাবিতে ভর্তি হতে চান খাদিজা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ নভেম্বর ২০১৬, ১১:০১ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
রূপকথার গল্পও যেনো হার মানে খাদিজা বেগম নার্গিসের কাছে। ফিনিক্স পাখি নাকি মৃত্যুর পর আবার জেগে ওঠে। সিলেট সরকারী মহিলা কলেজের এই ছাত্রীটি যেনো সেই পাখি।
আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার পর যে মেয়েকে দেখে, একদিন পার হওয়ার আশাও ছেড়ে দিয়েছিলেন প্রায় সবাই, এমনকি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও যাকে নিয়ে বলেছিলেন- বাঁচার সম্ভাবনা মাত্র পাঁচ শতাংশ। সেই খাদিজা বেঁচে আছেন তো বটেই, ধীরে ধীরে সুস্থও হয়ে ওঠছেন।
এ কেবল খাদিজার পরিবারের জন্য নয়, নানা দুঃসংবাদের মধ্যে দিয়ে যাওয়া দেশের সকল মানুষের জন্যও এক বিরাট সুসংবাদ। তাঁর আক্রান্ত হওয়ার সংবাদে পুরো দেশবাসীই তো উদ্বিগ্ন হয়েছিলো। প্রার্থনায় বসেছিলো। প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিলো।
তবে এখানেই থেমে থাকতে চান না এই রূপকথার নায়িকা। সুস্থ হয়ে আবার লেখাপড়া চালিয়ে যেতে চান খাদিজা। আগেই নিজের জীবনের যে লক্ষ্য ঠিক করে রেখেছিলেন খাদিজা- ব্যাংকার হওয়া, সেই লক্ষ্যে এখনও অবিচল তিনি।
মঙ্গলবার এক সাক্ষাতকারে খাদিজা বলেন, ‘আমি বাড়ি ফিরে আবার লেখাপড়া করব। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা এসেছিলেন। তাঁরা আমাকে ভর্তি করবেন বলে গেছেন। আমি হয় ইংরেজিতে পড়ব, নইলে অর্থনীতিতে।’ বললেন, যে বিষয়েই সম্মান পড়ুন না কেন, তিনি ব্যাংকার হবেন।
এই শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়েই ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলমের চাপাতির কোপে মৃত্যুমুখে পড়েছিলেন খাদিজা।
মঙ্গলবার স্কয়ার হাসপাতালে প্রথম আলো’র প্রতিবেদক শেখ সাবিহা আলমের সাথে আলাপকালে খাদিজা বলেন নিজের শারিরীক অবস্থা সম্পর্কে বলেন ‘আমি ভালো আছি’।
এসময় ‘খাদিজা’ বলে ডাকতে ঘাড় ঘুরিয়ে সাড়াও দেন তিনি। যদিও শরীরজুড়ে ক্ষতচিহ্ন আর ব্যান্ডেজ বাধা ছিলো তবু এসময় মুখে হাসি লেগেই ছিলো খাদিজার।
মানুষ আপনার খোঁজখবর করেছেন, আপনার জন্য প্রার্থনা করেছেন, এ খবর জানেন—জবাবে খাদিজা বলেন, ‘সবাইকে ধন্যবাদ। আমি শুনেছি, সবাই দোয়া করেছেন। আমি এখন ভালো আছি।’
ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়, তাঁর জন্য চকলেট আছে শুনে ব্যান্ডেজ মোড়া ডান হাত এগিয়ে দেন খাদিজা। একটি চকলেট মুখে পুরে, অন্যদেরও চকলেট সাধেন। বলেন, বাড়ি যেতে মন চায়। পারলে এখনই চলে যান।
গত ৩ অক্টোবর সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী খাদিজা পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে এমসি কলেজে ছাত্রলীগ নেতা এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিষ্কৃত ছাত্র বদরুল আলমের নৃশংসতার শিকার হন। বদরুল তাঁকে উপর্যুপরি কোপান। গুরুতর আহত অবস্থায় খাদিজাকে প্রথমে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সিলেটের জালালাবাদের আউশা গ্রামে খাদিজাদের বাড়ি। ৩ অক্টোবর মাকে বলেছিলেন, পরীক্ষা দিয়ে ফিরে ভাত খাবেন। বদরুলের কোপে গুরুতর আহত হওয়ায় বাড়ি ফেরা হয়নি, ভাতও খাওয়া হয়নি। মনোয়ারা বেগমও ভাত না খেয়ে ছিলেন। খাদিজাকে এখন আর নল ঢুকিয়ে খাওয়াতে হয় না। বললেন, স্বাভাবিক সব খাবার খাচ্ছেন তিনি। কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।
৩ অক্টোবর দিবাগত গভীর রাতে স্কয়ার হাসপাতালে আনা হয়েছিল খাদিজাকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় তখন তাঁর ওপর হামলার ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেছে। খাদিজা অচেতন। ৪ অক্টোবর স্কয়ার হাসপাতালের নিউরোসার্জারির চিকিৎসক রেজাউস সাত্তার বলেছিলেন, ‘এ ধরনের রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ৫ শতাংশ। ৭২ ঘণ্টার আগে কিছু বলা যাচ্ছে না।’ আর বুধবার রেজাউস সাত্তার বলেন, ‘ও ভালোভাবে সেরে উঠছে। এখনো তারিখ ঠিক না হলেও আশা করি, কয়েক দিন পরই হাসপাতাল থেকে ছুটি পাবে।’
খাদিজার মস্তিষ্কে দুই দফা এবং দুই হাতে ও পায়ে অস্ত্রোপচার হয়েছে। বাঁ হাত, বাঁ পা এখনো ঠিকমতো নাড়াতে পারেন না। তবে চিকিৎসকদের আশা, তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবেন। ২৪-২৫ নভেম্বরের দিকে তাঁকে সিআরপিতে নেওয়া হবে। সেখানকার চিকিৎসা শেষে খাদিজার বাড়ি ফেরার কথা।
৩ অক্টোবরের ঘটনা সম্পর্কে খাদিজা কিছু বলেন কি না, জানতে চাইলে মাশুক মিয়া বলেন, ‘তারে আমি জিগাইসি, আব্বু, তুমি যে আইলায় হাসপাতালে, কী হইছিল? বাচ্চা আউলিয়া ফালায়। ডাক্তার বেশি মাতত না করছে।’
সূত্র : প্রথম আলো।