দুই শিশুপুত্র খুন : তিন ঘণ্টা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে যা বললো ছাতির আলী
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ অক্টোবর ২০১৬, ১২:৫১ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
‘স্ত্রীর উপর রাগ করে দুই পুত্র সন্তানকে খুন করেছি। প্রথমে ছোটো ছেলে মামুন এবং পরে বড় ছেলে রুজেলকে খুন করি।’ গতকাল বিকালে সিলেটের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিকালে একথা জানিয়েছে সিলেটের ওসমানীনগরের চিন্তামনি গ্রামের দুই শিশুপুত্রের খুনি পিতা ছাতির আলী। এ সময় সে আদালতে জানায়, ‘খুনের ঘটনার পর নিজ গ্রামের কালিমন্দিরের পাশে জঙ্গলে লুকিয়ে ছিল। ওখান থেকে তাকে আটক করেন গ্রামের লোকজন।’ সিলেটের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. নজরুল ইসলাম ছাতির আলীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন। জবানবন্দি গ্রহণের পর তাকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বুধবার সকালে ছাতির আলীকে আটকের পর ওসমানীনগর থানা হাজতেই রাখা হয়। সেখানে পুলিশ তার বক্তব্য গ্রহণ করে। পরে সে আদালতে জবানবন্দি দেয়ার সম্মতি প্রকাশ করায় গতকাল দুপুরে ছাতির আলীকে সিলেটের আদালতে প্রদান করা হয়। বিকাল ৩টায় আদালতে তার জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। ছাতির আলী প্রথমে পুলিশের কাছে এবং পরে আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে জানায়, স্ত্রী নুরমনির পরকীয়ায় সন্দেহ থাকার কারণেই সংসারে বিরোধ বাধে। আর এ থেকেই সংসারে অশান্তি শুরু হয়। এ কারণে তার স্ত্রী বাড়ি থেকে চলে গিয়েছিল। পরে গ্রামের লোকজন তাকে বাড়ি নিয়ে এলেও তিনি কথাবার্তা বলতেন না। এজন্য স্ত্রীর প্রতি তার প্রচণ্ড রাগ ছিল। এই বিরোধ থেকে রোববার সে সুপারিগাছের গুঁড়ি দিয়ে ধারালো ও সরু (চোকা) সুরকি তৈরি করে। সোমবার সে বড় ছেলে রুজেল ও ছোটো ছেলে মামুনকে নিয়ে স্থানীয় চণ্ডিহাওরে মাছ ধরতে যায়। দুপুরের পর সে বড় ছেলেকে বাড়ি পাঠিয়ে এলোপাথাড়ি আঘাত করে ছোটো ছেলে মামুন মিয়াকে খুন করে। আর মামুনের লাশ ডোবার পানিতে চুবিয়ে রেখে হাওরের কাছে বসে থাকে। এমন সময় বড় ছেলে রুজেল গিয়ে মামুন কই জিজ্ঞেস করে। এ সময় সুরকি নিয়ে রুজেলের উপর হামলা চালায়। রুজেলের মাথার পেছনের অংশে উপর্যুপরি আঘাত করলে সে লুটে পড়ে। পরে সুরকি দিয়ে তার গলায় আঘাত করা হয়। প্রায় তিন ঘণ্টা আদালতে তার জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। এ সময় ছাতির আলী আরো জানায়, খুনের ঘটনার পরপরই সে গ্রামের কালিমন্দিরের পাশের জঙ্গলে অবস্থান নেয়। এরপর দুই দিন মন্দিরের কাছে জঙ্গলেই ছিল। বুধবার সকালে ক্ষুধার যন্ত্রণায় সে জঙ্গল থেকে বের হলে স্থানীয়রা দেখে ফেলে। এরপর সে আটক হয়। সিলেটের ওসমানীনগর থানার ওসি আবদুল আউয়াল চৌধুরী জানিয়েছেন, বুধবার জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে ছাতির আলী সব কিছু স্বীকার করেছে। সে আদালতেও জবানবন্দি প্রদানে সম্মতি দেওয়ায় দুপুরে তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়। আদালতে তার সঙ্গে এসেছিলেন ওসমানীনগর থানার এসআই অনুজ কান্তি। জবানবন্দি গ্রহণের পর তিনি জানিয়েছেন, স্ত্রীর সঙ্গে বিরোধের জের ধরে সে দুই শিশুপুত্রকে হত্যা করেছে বলে স্বীকার করেছে। হাওরের নির্জন স্থানে এলোপাথাড়ি আঘাতে সে তাদের খুন করে বলে জানায়। তিনি বলেন, ছাতির আলী খুনের ঘটনার পর অনেকটা নির্বাক হয়ে গেছে। সে মাঝে মাঝে কেঁদে উঠে। তবে, পুলিশের কাছে তার অস্বাভাবিক আচরণের কোনো দৃশ্য পরিলক্ষিত হয়নি। বুধবারই সিলেটের ওসমানী নগর থানায় ছাতির আলীকে একমাত্র আসামি করে মামলা করেছিলেন দুই শিশুপুত্রের মা নুরমনি বেগম। দুই সন্তানকে হারিয়ে তিনি পাগলপ্রায়। জানিয়েছেন, তিনি দুই পুত্রের মুখের দিকে চেয়ে সংসার করার জন্য সব কিছু বিসর্জন দিয়েছিলেন। ছাতির আলীর নির্যাতনের মুখেও তিনি কারও কাছে অভিযোগ দিতে চাননি। এখন তার চোখের মণিরা নেই। তিনি ঘাতক ছাতির আলীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। বলেন, ছাতিরের এমন বিচার হোক- যা দেখে আর কোনো বাবা তার সন্তানদের হত্যার সাহস পেতে না পারে। এটাই তার রাষ্ট্রের কাছে শেষ আব্দার। এসআই অনুজ কান্তি জানিয়েছেন, আদালতে ছাতির মিয়ার জবানবন্দি গ্রহণের পর তাকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।