পালিয়ে যাওয়া আ.লীগের শতাধিক নেতা লন্ডনে
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯:৩৭ অপরাহ্ণ
জুবায়ের আহমেদ, লন্ডন:
ছাত্র-জনতার অবিস্মরণীয় অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তার আজ্ঞাবহ মন্ত্রী-এমপি, মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যানসহ দলের নেতারা প্রায় সবাই গা ঢাকা দিয়েছেন।
জানা গেছে, এদের মধ্যে শতাধিক রয়েছেন লন্ডনে। দুই একজন জনসম্মুখে এলেও অনেকেই রয়েছেন অন্তরালে। তাদের মধ্যে অনেকেই সোসাল মিডিয়ায় সরফ রয়েছেন।
নাম না প্রকাশের শর্তে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, লন্ডনে ৫ আগস্টের আগে ও পরে অসংখ্য নেতারা বিভিন্ন ধাপে পালিয়ে এসেছেন। জনসম্মুখে আসার চেষ্টা করলেও অনেকেই দলীয় নেতাকর্মীদের দ্বারা লাঞ্ছিত হওয়ার ভয়ে তারা এখন আর বের হচ্ছেন না। সাবেক এক মন্ত্রী লন্ডনের জনসভায় উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দিতে চাইলে দলীয় নেতাকর্মীরা এতে বাধা প্রদান করেন। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের এক নেতা চিৎকার করে বলেন, দুর্নীতি করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়ে নিরাপদে পালিয়ে এসেছেন আপনি। আপনাদের অপকর্মের জন্য হাজারো নেতাকর্মী দেশে অসহায়। তারা দেশে নিগৃহীত হচ্ছে আর আপনি এখানে আরামে আছেন।
একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, শুধু লন্ডন শহরেই রয়েছেন দলের সাবেক মন্ত্রী, এমপি, মেয়রসহ দলের শতাধিক নেতা, এমনকি মন্ত্রী-এমপিদের সঙ্গে পালিয়ে এসেছেন তাদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তারাও। রয়েছেন বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী, বিচারপতি ও উচ্চপদস্থ আমলা। জানা যায়, প্রাথমিক ধাক্কা সামলাতে তাঁরা ভারত যান। পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তীতে তারা পাড়ি জমান লন্ডনে।
তাদের মধ্যে রয়েছেন, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. শফিকুর রহমান চৌধুরী, ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান, সুনামগঞ্জ-১ আসনের এমপি রণজিৎ সরকার, সিলেট-৩ আসনের এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমসহ অনেকেই।
গোয়েন্দা তথ্য ও ইমিগ্রেশন পুলিশের তথ্য অনুসারে, বিপুলসংখ্যক ভিআইপি ৫ আগস্টের পূর্বেই দেশ ছেড়েছেন। কোটা আন্দোলন ঘিরে দেশ যখন উত্তাল, সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছিল চারদিকে এমন জটিল পরিস্থিতিতে ১৫ জুলাই মধ্যরাতে দেশ ছাড়েন সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। পরিবারের পাঁচ সদস্যকে নিয়ে তিনি লন্ডনে আসেন।
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী রয়েছেন লন্ডনে। সম্প্রতি লন্ডনের একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের পাশ দিয়ে সাইফুজ্জামানের হেঁটে যাওয়ার দৃশ্য আলজাজিরার আই-ইউনিটের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। লন্ডনে ৯০ লাখ মার্কিন ডলারের বেশি মূল্যের ছয়টি সম্পত্তির মালিক তিনি।
যুক্তরাজ্যে তাঁর যে সম্পত্তির সাম্রাজ্য রয়েছে, এটি তার একটি ছোট অংশ। ১ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলারের (প্রায় ১৬৮ কোটি টাকা) বাড়িতে বসবাস করছেন।
এদিকে ওই আগস্টে পালিয়ে লন্ডনে যান সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। কীভাবে দেশ ছেড়েছেন আনোয়ারুজ্জামান সে বিষয়ে মুখ খুলেছেন। তিনি বলেন, আমি ৫ আগস্ট থেকে সিলেট ক্যান্টনমেন্টে ছিলাম। সেখান থেকে ১৪ আগস্ট বের হয়েছি। আনোয়ারুজ্জামান বলেন, আমি ১৭ আগস্ট লন্ডনে এসেছি। দীর্ঘদিন লন্ডনে ছিলাম। আমার পরিবার এখানে ছিল। আমি সিলেটের মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর প্রায় ৮ মাস দায়িত্ব পালন করেছি। তখন গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় ছিল জীবন রক্ষা। এ জন্য প্রথম যে জিনিসটা সেটা হলো, নিরাপদ স্থানে যাতে আমরা নিজেকে নিরাপদ রাখতে পারি। আমাদের সহযোদ্ধাদের; ছোট কর্মী থেকে বড় নেতা পর্যন্ত সবাইকে এই জিনিসটা বলেছিলাম যে, সবাই যেন সেফ জায়গায় চলে যায়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগের জন্য এটি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের মতো আরেকটি ঝড়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সকালে আওয়ামী লীগ জেনেছিল শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সব হারিয়েছে। আর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ জেনেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। তিনি এবং তার ছোট বোন শেখ রেহানা বিদেশে চলে গেছেন।