বিলুপ্তির পাতায় গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য ‘ঢেঁকি’
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২৭ অপরাহ্ণ
জুবেল আহমেদ, ওসমানীনগর:
‘ও বউ ধান ভানে রে, ঢেঁকিতে পাড় দিয়া, ঢেঁকি নাচে বউও নাচে হেলিয়া দুলিয়া, ও বউ ধান ভানে রে..’ -পল্লি কবি জসিম উদ্দিনের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ঢেঁকি নিয়ে এই কবিতা এখনো থাকলেও নানান স্মৃতির এই ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি এখন বিলুপ্তির পথে। গ্রাম বাংলার মহিলাদের কণ্ঠে অতীতে শোনা যেত এ ধরনের সুর আর ঢেঁকির দুপ দুপ শব্দ। এক সময় গ্রামে গ্রামে অগ্রহায়ণ মাসে নতুন ফসল ঘরে তোলার পর এবং পৌঁষ সংক্রান্তিতে ঢেঁকির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠতো গ্রামের অধিকাংশ বাড়ি। ঢেঁকিতে পা রেখে কত গান ও কত প্রবাদ গাওয়া হতো গ্রাম্য মেয়েদের। বর্তমান যান্ত্রিকতার যুগে এই চিরচেনা সুর যেন প্রায়ই হারিয়ে গেছে। এক সময় ভোরে আজানের সঙ্গে সঙ্গে স্তব্ধতা ভেঙে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ত ঢেঁকির শব্দ। অগ্রহায়ণ মাস আসলেই সিলেটের ওসমানীনগরে আমন ধান ঘরে তুলে সেই ধান ঢেঁকিতে ভেঙ্গে তৈরী হত নানা রকমের পিঠা। কিন্তু আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বিশ্ব এগিয়ে যাওয়ায় এখন আর ঢেঁকির প্রয়োজন পরে না কারো। শহরে তো বটেই, আজকাল গ্রামের ছেলে-মেয়েরা ঢেঁকি শব্দটির কথা জানলেও বাস্তবে দেখেনি। অনেকের কৌতুহল, কেমন করে মেশিন ছাড়া ধান থেকে চাল বের করা হতো। আসলে ধানের তুষ ছাড়িয়ে চাল বানানোই ছিল ঢেঁকির কাজ। ঐতিহ্যবাহী সেই ঢেঁকি আজ বিলুপ্তির পাতায়।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে আমন ধান ধান কাটা থেকে মাড়াই ও ধান ভাঙ্গা পর্যন্ত সকল কাজ সমাপ্ত করেন আধুনিক মেশিনেই। আর তাই আধুনিকতায় যান্ত্রিকতার ছোয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী কৃষি ও গৃহস্থলী সামগ্রী ঢেঁকি। ধান, চাল, আটা ও চিড়া ভাঙ্গানোর জন্য বৈদ্যুতিক মিল হওয়ার কারণে গ্রামীণ কৃষকরা সহজেই ধান, আটা ও চিড়া কম সময়ে অল্প খরচে ভাঙ্গাতে পারছে। কিন্তু এক সময় গ্রামের অভাবগ্রস্থ গরিব অসহায় মহিলাদের উপার্জনের প্রধান উপকরণ ছিল এই ঢেঁকি। গ্রামের বিত্তশালীদের বাড়িতে যখন নতুন ধান উঠত তখন অসহায় অভাবগ্রস্থ মহিলারা ঢেঁকিতে ধান ছেঁটে চাল বানিয়ে দিত। তা থেকে তারা যা পেত তা দিয়েই ছেলে-মেয়ে নিয়ে সংসার চলে যেত। ঢেঁকিতে ধান ভানতে গিয়ে তারা বিভিন্ন ধরনের হাসি-তামাশার কথা বলত ও গান গাইত।
উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের গাভুরটিকি গ্রামের রাজিয়া বেগম বলেন, ঢেঁকি আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির এক অপূর্ব নিদর্শন। যখন যন্ত্রচালিত ধান ভানা কল ছিল না তখন ঢেঁকির কদর বেশ ছিল। গ্রামগঞ্জে এখন পুরোপুরি ঢেঁকি বিলীন হয়ে গেছে।
ঢেঁকি সম্পর্কে জানতে চাইলে অনেকেই জানান, আগে প্রায় সবার বাড়িতে ঢেঁকি ছিল। সেই ঢেঁকিছাঁটা চাল ও চালের পিঠার গন্ধ এখন আর নেই। পিঠার স্বাদ ও গন্ধ এখনো মনে পড়ে। আধুনিক প্রযুক্তির ফলে গ্রামবাংলায় ঢেঁকির ব্যবহার কমে গেছে।