কুশিয়ারা নদী : সেতুর অভাবে চরম ভোগান্তিতে ৫০ হাজার মানুষ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ অক্টোবর ২০১৬, ২:১৮ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
এপারে সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলা সদর, ওপারে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার শতাধিক গ্রাম। মাঝখানে খরস্রোতা কুশিয়ারা নদী। এই নদী পাড়ি দিয়েই অন্তত আট হাজার মানুষকে প্রতিদিন চলাচল করতে হয়। নদীতে একটি সেতু নির্মাণের জন্য এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে এলেও সুফল পায়নি। তাই যুগের পর যুগ ধরে খেয়ানৌকায় করে মানুষ নদী পারাপার করতে হচ্ছে।
বালাগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ মতিন বলেন, ‘একটি সেতুর জন্য ভুক্তভোগী মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই মানববন্ধন, সমাবেশসহ নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করে আসছে। কিন্তু সেতু নির্মাণে কার্যকর কোনো উদ্যোগই চোখে পড়ছে না। এ অবস্থায় দুটি উপজেলার অন্তত ৫০ হাজার মানুষ সেতুর অভাবে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। দাবি জানাতে-জানাতে এখন সাধারণ মানুষ হতাশ হয়ে পড়েছে।’
বালাগঞ্জ ও রাজনগরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অর্ধশতাধিক মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বালাগঞ্জের আশপাশের শতাধিক গ্রাম রাজনগর উপজেলার অন্তর্ভুক্ত হলেও, এসব গ্রাম তাদের উপজেলা সদর থেকে অন্তত ১৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। তাই এসব গ্রামের মানুষ নদীর ঠিক ওপারে অবস্থিত বালাগঞ্জ উপজেলা সদরেই বাজার-সওদা থেকে শুরু করে শিক্ষা-চিকিৎসাসেবা নিয়ে থাকে। এসব মানুষের অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেছে বালাগঞ্জ বাজারে।
একই সূত্র জানিয়েছে, নদী-তীরবর্তী রাজনগরের শতাধিক গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষকে বালাগঞ্জ উপজেলায় যাতায়াত করতে হয়। বিশেষ করে রাজনগরের বিলবাড়ী, তোলাপুর, মোকামবাজার, গালিমপুর, রামপুর, কান্দিরগাঁও, উমরপুর, মেদিনীমহল, বাঘমারা, ফতেপুর, হামিদপুর, বেড়কুড়ি, মোল্লাবাড়ী, শাহপুর, জাহিদপুর, হামছাপুর গ্রামের মানুষকে প্রতিদিনই ব্যবসা-চিকিৎসা-শিক্ষাসহ নানা কাজে ও আত্মীয়তার সূত্রে বালাগঞ্জে আসতে হয়। এ অবস্থায় একটি সেতুর অভাবে তাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, দুটি খেয়াঘাটের মাধ্যমে রাজনগর উপজেলার মানুষ কুশিয়ারা নদী পাড়ি দিয়ে বালাগঞ্জে আসছে। এগুলো হচ্ছে পূর্ববাজার খেয়াঘাট ও বাসস্ট্যান্ড খেয়াঘাট। এর মধ্যে পূর্ববাজার দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ছয় থেকে সাড়ে ছয় হাজার এবং বাসস্ট্যান্ড খেয়াঘাট দিয়ে দেড় থেকে দুই হাজার মানুষ চলাচল করে বলে সংশ্লিষ্ট ইজারাদারেরা জানান। চলাচলকারী লোকজনের মধ্যে স্কুল-কলেজের অন্তত এক হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে।
বালাগঞ্জের ডিএন মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, তাঁর বিদ্যালয়ের ১ হাজার ৪০০ জন শিক্ষার্থীর অর্ধেকই রাজনগরের বাসিন্দা। ওই শিক্ষার্থীদের গ্রামের আশপাশে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় বালাগঞ্জই তাদের একমাত্র ভরসা। একই তথ্য জানালেন বালাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ লিয়াকত শাহ ফরিদী। তিনি জানালেন, তাঁর কলেজের প্রায় ১ হাজার ১০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৫ শতাংশই রাজনগর উপজেলার বাসিন্দা।
বালাগঞ্জ ডিএন মডেল উচ্চবিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আবদুল হাফিজ বলেন, ঝড়-বৃষ্টির মৌসুমে নৌকাডুবির আশঙ্কা থাকায় শিক্ষার্থীরা ভয়ে স্কুল-কলেজে আসে না।
রাজনগরের রামপুর গ্রামের বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘এই জীবনে সেতু দেখতাম পারমু কি না, সন্দেহ!’ কালারবাজার গ্রামের গৃহিণী পিয়ারা বেগম (৬০) জানান, নারী ও শিশুদের খেয়া পারাপার হতে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয়।
বালাগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো. জাহিদুল ইসলাম সেতুটি নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘এ সেতু নির্মাণ হলে দুটি উপজেলার সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন হবে। এর বাইরে সিলেটের ওসমানীনগর ও ফেঞ্চুগঞ্জ, এ দুটি উপজেলার সঙ্গে আন্তযোগাযোগ তৈরি হবে।’
মো. জাহিদুল ইসলাম আরও জানান, সেতুটি নির্মাণের ব্যাপারে ২০১০ সালে এলজিইডির প্রধান কার্যালয়ে একটি প্রকল্প-পরিকল্পনা পাঠানো হয়েছিল। এরপর সেতুটি নির্মাণের প্রস্তুতি হিসেবে মাঠপর্যায়ে উচ্চপর্যায়ের একটি দল পর্যবেক্ষণও করে গেছে। এরপর বিষয়টি আর এগোয়নি।