বিবিসির প্রামাণ্যচিত্রে বৃটেন জয়ী সিলেটী কন্যা নাদিয়া
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১:০৩ পূর্বাহ্ণ
লন্ডন অফিস:
বিবিসি প্রতিবেদন ‘দ্য ক্রনিক্যালস অব নাদিয়া’য় নিজের শিকড়ের গল্প বললেন ‘দ্য গ্রেট ব্রিটিশ বেইক অব’ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নাদিয়া হোসেইন। বুধবার স্থানীয় সময় রাত ৯টার দিকে বিবিসিতে প্রচারিত হয় এক ঘণ্টার এই প্রামান্যচিত্র। এতে নাদিয়া শোনান, তার পূর্ব পুরুষদের গ্রামীন ইতিহাস, কৃষ্টি, রেওয়াজ ও ঐতিহ্যের কথা।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নাদিয়া হোসেইন গত বছর বিবিসির রান্নাবিষয়ক প্রতিযোগিতা ‘দ্য গ্রেট ব্রিটিশ বেক অফ’ জিতে সাড়া ফেলেন। এরপর রানির জন্মদিনের কেক বানিয়ে আবারও আলোচনায় আসেন তিন সন্তানের এই জননী। আর এবার বাংলাদেশের গল্প দিয়ে বাজিমাত করলেন যুক্তরাজ্যের লুটন শহরে জন্ম নেওয়া নাদিয়া।
বিবিসির জন্য একটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করতে সম্প্রতি বাংলাদেশে আসেন নাদিয়া। দ্য ক্রনিকলস অব নাদিয়া শিরোনামের এই প্রামাণ্যচিত্রে কোনো চাকচিক্য ছাড়াই তুলে ধরা হয়েছে বাংলাদেশের প্রকৃতি আর মানুষের গল্প।
এক ঘণ্টা করে দুই পর্বের প্রামাণ্যচিত্রটি দেখায় বিবিসি ওয়ান। গত বুধবার এর শেষ পর্ব দেখানো হয়। এরপর দর্শকদের যে প্রতিক্রিয়া তাতে বোঝা গেল, শুধু নাদিয়া নন, যুক্তরাজ্যের দর্শকেরাও বাংলাদেশের প্রেমে পড়ে গেছেন। তাঁরা অনুষ্ঠান শেষ হতে না-হতেই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম টুইটারে বিবিসির ওপর ক্ষোভ ঝাড়েন, অনুষ্ঠানটি কেন মাত্র দুই পর্ব করা হলো! বিবিসির উদ্দেশে দর্শকদের করা বিভিন্ন টুইট বার্তা নিয়ে গত শুক্রবার একটি সংবাদও প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ দৈনিক ডেইলি এক্সপ্রেস ও ডেইলি সান। দর্শকেরা নাদিয়ার উপস্থাপনশৈলীর প্রশংসা করার পাশাপাশি বলেছেন, তাঁরা এই অনুষ্ঠান আরও দেখতে চান। কেউ কেউ বলেছেন নাদিয়াকে দিয়ে একটি স্থায়ী অনুষ্ঠান চালু করতে।
দ্য ক্রনিকলস অব নাদিয়া প্রামাণ্যচিত্রে নাদিয়া ঢাকায় ‘থ্রাইভ’ নামে একটি দাতব্য সংস্থার কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। এই প্রতিষ্ঠানটি বস্তিবাসী ছিন্নমূল শিশুদের নিয়ে কাজ করে। ‘জাগো’ নামে একটি বিদ্যালয়ে গিয়ে ২৯০ জন বস্তিবাসী শিশুশিক্ষার্থীকে নিজে সমুচা বানিয়ে খাওয়ান নাদিয়া। তিনি বলেন, ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষের ঢাকা শহরে ৩০ লাখের মতো মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। এসব শিশু ঠিকমতো এক বেলা খেতে পায় না। কিন্তু শিক্ষা অর্জনের যে আগ্রহ এবং চেষ্টা, তা সত্যিই আশাব্যঞ্জক।
প্রামাণ্যচিত্রে ছিল কারওয়ান বাজার ঘুরে নাদিয়ার বাজার করার দৃশ্য। এ ছাড়া বরিশালের গোমরা গ্রামের জেলেদের হাজার বছরের পুরোনো পদ্ধতিতে মাছ শিকারের গল্প। এসব জেলে নদীতে মাছ শিকারে ভোঁদড় ব্যবহার করেন। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পানি লবণাক্ত হয়ে পড়ায় জেলেরা আগের মতো মাছ পান না। সেখান থেকে নাদিয়া যান সিরাজগঞ্জে। ঘরোয়াভাবে চানাচুর আর নিমকি বানিয়ে জহির-হামিদা দম্পতির জীবন বদলে যাওয়ার গল্প তুলে আনেন নাদিয়া।
নাদিয়া বলেন, প্রাচুর্য আর দারিদ্র্য বাংলাদেশে পাশাপাশি বাস করছে। কিন্তু মানুষের যে ভাগ্যবদলের চেষ্টা, কঠোর পরিশ্রম, তা সত্যিই অসাধারণ। তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক বৈষম্য, কথা বলার ধরনে অমিল কিংবা ধর্ম বিশ্বাসের পার্থক্য যা-ই থাকুক না, আপনি এখানে সবার সঙ্গে বসতে পারবেন। আপনজনের মতো কথা বলতে পারবেন।’ প্রামাণ্যচিত্রে নাদিয়া বেশ কিছু বাংলাদেশি খাবারও রান্না করেন।
বাংলাদেশের রূপরহস্য উদ্ঘাটনের পর নাদিয়া বলেন, ‘আমি ব্রিটিশ, আমি বাংলাদেশি এবং আমি মুসলিম।
এই তিন পরিচয়ের জন্যই আমি গর্বিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘এত দিন আমি বাংলাদেশকে “ব্যাক হোম” বলতাম, কারণ আমার বাবা বলতেন। এখন আমি জানি বাংলাদেশ কেন আমার “ব্যাক হোম”। এখন থেকে আমাকে বারবার বাংলাদেশে ফিরে আসতে হবে।’