এবার উপজেলায়ও তিনটি পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন!
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ আগস্ট ২০১৬, ১২:৩৪ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ :
পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ, সিটি করপোরেশনের পর এবার দলীয় প্রতীকে ভোট করতে স্থানীয় সরকারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের বিধি সংশোধন করছে নির্বাচন কমিশন। এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদ ছাড়াও ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের বিধান রেখে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালার খসড়া চূড়ান্ত করেছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। এই প্রথম স্থানীয় সরকারভুক্ত কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রধান জনপ্রতিনিধি ছাড়াও ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের বিধান যুক্ত হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
ইসি সূত্র জানায়, উপজেলা পরিষদের সংশোধিত বিধিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য কোনো শর্ত রাখা হচ্ছে না। এ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে ভোটারদের স্বাক্ষরযুক্ত কোনো তালিকা জমা দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। উপজেলা পরিষদে ভোটের আগে কোনো প্রার্থীর মৃত্যু হলে ওই নির্বাচন বাতিল করা হবে। পরে আবার যখন সেখানে নির্বাচন করা হবে তখন সেখানে যারা বৈধ প্রার্থী ছিলেন তাঁদের নতুন করে আর মনোনয়পত্র জমা দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। মহিলা সদস্য পদে সমভোট পেলে লটারির মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের বিধান রাখা হয়েছে এ বিধিমালায়। এ ছাড়া আচরণ বিধিতে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, মেয়রসহ সরকারি সুবিধাভোগী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের প্রচারণায় বিধি-নিষেধ রাখা হয়েছে। বিধিমালা দুটির চূড়ান্ত খসড়া ইসির বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। বৈঠকটি আগামী বুধবার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব আইন ড. শাজাহান জানান, দলীয় প্রতীকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের বিধি সংশোধন করা হচ্ছে। বুধবার কমিশন বৈঠকে খসড়া বিধি অনুমোদন করে তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে ভেটিংয়ের জন্য। এজন্য খসড়া বিধিতে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলীয়ভাবে এবং স্বতন্ত্র উভয়ভাবেই প্রার্থিতার সুযোগ রাখা হয়েছে। নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, স্থানীয় সরকারভুক্ত প্রতিষ্ঠান সিটি করপোরেশন, উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচনের মধ্যে একমাত্র উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভিন্নতা দেখা দিয়েছে। সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা নির্বাচনে শুধু মেয়র এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার বিধান রয়েছে। বাকি পদগুলোতে দলীয় প্রতীক নেই। শুধু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পাশাপাশি ভাইস চেয়ারম্যান এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদেও দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। সর্বশেষ ২০১৪ সালে ছয় ধাপে সারাদেশে নির্দলীয় প্রতীকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৫ সালের নভেম্বরে জাতীয় সংসদে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিধান রেখে আইন পাস হয়। ইসি সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা এবং উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালার চূড়ান্ত খসড়ার কপি এরই মধ্যে কমিশনারদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
এর সঙ্গে ইসির উপসচিব মোহা. ইসরাইল হোসেন স্বাক্ষরিত কার্যপত্র উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের লক্ষ্যে বিধিমালা সংশোধনের প্রস্তাবনা প্রস্তুত করা হয়েছে। ওই কার্যপত্রে আরো বলা হয়েছে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা এবং আচরণ বিধিমালার আদলে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা ও আচরণ বিধিমালা প্রস্তুত করা হয়েছে। এতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ভোটারের স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা যাচাই পদ্ধতি রাখা হয়নি। যদিও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১ শতাংশ, পৌরসভায় ১০০ ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থীদের ৩০০ ভোটারের স্বাক্ষর জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে। তবে ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য এ শর্ত রাখা হয়নি। বিধি ২৬-এ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বা ভাইস চেয়ারম্যান বা মহিলা সদস্যের কতিপয় ক্ষেত্রে বাধা-নিষেধ। বিধি ২২-এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো ব্যক্তি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বা ভাইস চেয়ারম্যান বা মহিলা সদস্য পদে অধিষ্ঠিত থাকা অবস্থায় কোনো পদে প্রার্থী হইলে তিনি মনোনয়পত্র দাখিলের সময় থেকে ভোট গ্রহণের তারিখ পর্যন্ত (ক) নির্বাচনী প্রচারণা ও নির্বাচনী কার্যক্রমে উপজেলা পরিষদের অফিস ও যানবাহন ব্যবহার করতে পারবেন না; (খ) উপজেলা পরিষদ বা তার আওতাধীন কোনো ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভার কোনো কার্যক্রমে বা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না; এবং (গ) সংশ্লিষ্ট উপজেলায় অবস্থিত কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি, আধা-সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা বা এনজিওর কোনো কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। বিধির ২৩ ধারায় বলা হয়েছে, ভোট গ্রহণের আগে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনীত বৈধ প্রার্থীর কারো মৃত্যু হলে সংশ্লিষ্ট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদের নির্বাচন কার্যক্রম রিটার্নিং কর্মকর্তা গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে বন্ধ করে দেবেন। বিদ্যমান বিধিমালায় কোনো প্রার্থীর মৃত্যু হলে বাকি প্রার্থীদের মধ্যে ভোটের বিধান রয়েছে। এ ছাড়া মহিলা সদস্য নির্বাচনে কোনো একাধিক প্রার্থী সমভোট পেলে লটারির মাধ্যমে নির্বাচনের বিধান রাখা হয়েছে। তবে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সমভোট পেলে পুনরায় ভোট হবে। খসড়া বিধিতে কোনো প্রার্থী বা তাঁর পক্ষে অন্য কেউ বিধিমালা লঙ্ঘন করলে অনধিক ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানার কথা বলা হয়েছে। রাজনৈতিক দল বিধি লঙ্ঘন করলে ১০ হাজার টাকা জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছে। এদিকে স্থানীয় সরকারের অন্যান্য নির্বাচনের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিসহ সরকারি সুবিধভোগীদের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়ার ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সভা, সমাবেশ এবং সরকারি স্থাপনা ও যানবাহন ব্যবহার করার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকছে। তবে প্রার্থীরা পথসভা ও ঘরোয়া সভা করতে পারবেন।