সিলেট জেলা ছাত্রলীগ : কমিটি স্থগিত, তবুও বেপরোয়া নেতাকর্মীরা
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ আগস্ট ২০১৬, ১২:০৬ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
এমসি কলেজে গত ৭ মার্চ ছাত্রলীগের দুই পক্ষে গোলাগুলির ঘটনা তদন্তে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের একটি দল সিলেটে আসে। তাদের পর্যবেক্ষণে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম দায়ী হিসেবে চিহ্নিত হলে ১১ মার্চ কেন্দ্রের নির্দেশে স্থগিত করা হয় জেলা ছাত্রলীগের কমিটি। কিন্তু তারপরও বেপরোয়া নেতা-কর্মীরা। সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের ফটকের সামনে কারারক্ষীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের পর সর্বশেষ স্থগিত কমিটির এক নেতার ছুরিকাঘাতে একজন ব্যবসায়ী খুন হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
কারারক্ষীদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর একজন সহসভাপতিসহ আটজন নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। তখন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন বলেছিলেন, ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নিয়ে ফায়দা লোটার চেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে এভাবেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গত বুধবার ছুরিকাঘাতে ব্যবসায়ী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সুলেমানকে সংগঠন থেকে তাৎক্ষণিক বহিষ্কারের কথা জানিয়ে জাকির হোসাইন বলেন, খুনের মতো ঘটনায় জড়িত কেউ ছাত্রলীগে থাকতে পারে না। অপরাধীর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতেই স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
গত বুধবার নগরের জিন্দাবাজারে মোটরসাইকেল পার্কিং করা নিয়ে বচসায় জেলা ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সহসভাপতি সুলেমান চৌধুরী ছুরিকাঘাত করেন করিম বক্স মামুন (২৬) নামের একজন ব্যবসায়ীকে। বিপণিবিতানের সিসি ক্যামেরায় এ দৃশ্য দেখে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ওই দিন রাতেই সুলেমানকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে। পরদিন ব্যবসায়ী মামুনের বাবা বাদী হয়ে সুলেমানসহ তিনজনকে আসামি করে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন।
এর আগে ২১ জুলাই সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের ফটকে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হিরণ মাহমুদের মুক্তি পাওয়া নিয়ে কারারক্ষীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনায় স্থগিত জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি হোসোইন আহমদ চৌধুরী, শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক মওদুদ আহমদ আকাশ, সহসম্পাদক মাসুম আহমদ মাহি, উপগ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক সাইয়াদ আহমদ জামিল, সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের কর্মী রুহেল আহমদ, এমসি কলেজ ছাত্রলীগের কর্মী দেলোয়ার হোসেন, সয়েফ আহমদ ও সৌরভ দাশকে কেন্দ্র থেকে বহিষ্কার করা হয়।
ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতা ও কর্মীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, কারা ফটকে সংঘর্ষের ঘটনা যে হিরণ মাহমুদকে নিয়ে ঘটেছিল, ছাত্রলীগ বেপরোয়া হওয়ার পেছনে তাঁর ভূমিকাই বেশি। হিরণ মাহমুদ গত ১৬ মে গ্রেপ্তার হন। তাঁর বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সিপিবি-বাসদের সিলেট বিভাগীয় সমাবেশে হামলার মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। তিনি গ্রেপ্তার হওয়ার পর নগরের বালুচার এলাকায় তাঁর দখল থেকে একজন চিকিৎসকের বাসা উদ্ধার করার পর ওই বাসা থেকে ককটেল ও গুলির খোসা উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় শাহপরান থানায় তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা হয়।
প্রায় দুই মাস কারাবন্দী থাকার পর উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে ২১ জুলাই সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার সময় কারাফটকের সামনে ছাত্রলীগের কর্মীরা কারারক্ষীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ ঘটনার ছবি তুলতে গিয়ে কারারক্ষীদের হামলায় আহত হন চারজন ফটোসাংবাদিক।
ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, সিপিবি-বাসদের সমাবেশে হামলার ঘটনার পর হিরণ মাহমুদ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পদ থেকে বরখাস্ত হন। স্থগিত করা হয় তাঁর নেতৃত্বাধীন কমিটি। এরপর প্রায় এক বছর পর ২০১৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর কেন্দ্র থেকে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা হয়। এতে শাহরিয়ার আলম সভাপতি ও রায়হান চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক হন। তাঁদের নেতৃত্বাধীন কমিটির মধ্যে হিরণ মাহমুদের অনুসারীরা থাকায় ১১ মার্চ কমিটি স্থগিত হওয়ার আগ পর্যন্ত একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ৭ মার্চ এমসি কলেজে দুই পক্ষে সংঘর্ষের সময় হিরণ মাহমুদের পক্ষের দুই কর্মী গুলিবিদ্ধ হন।
তবে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার এবং মামলার পরও গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত সুলেমান চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এ বিষয়ে সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল আহমদ বলেন, সুলেমানের বাড়ি কানাইঘাট উপজেলার দর্পনগর গ্রামে। তাঁর খোঁজে নগর ও গ্রামে পুলিশ তৎপরতা চালিয়েছে।