দুর্দিন চলছে সিলেটের সম্ভাবনাময় পোল্ট্রি শিল্পের
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ আগস্ট ২০১৬, ৬:২৪ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক :
সিলেটে গত কয়েক বছরের তুলনায় প্রায় দেড় হাজার কমে গেছে পোল্ট্রি শিল্প। বর্তমানে এ শিল্প অনেকটাই সংকটে রয়েছে। সিলেটে বয়লায় মোরগের একদিনের বাচ্চা, খাবার, ভ্যাকসিনসহ ওষুধের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় ইতোমধ্যে লোকসানের মুখে অনেকে খামার গুটিয়ে নিয়েছেন। তবে কী কারণে এ শিল্পের সংখ্যা দিনে দিনে কমে যাচ্ছে এসব বিষয়ে মোটেই অবগত নয় সিলেট প্রাণিসম্পদ বিভাগ।
বিশাল সম্ভাবনাময় শিল্পে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরেরও কোনো নজরদারি নেই। প্রাণিসম্পদ দপ্তরও সিলেটের পোল্ট্রি ব্যবসায়ীদের কোনো কাজেই আসছে না।
ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন- সিলেট প্রাণিসম্পদ বিভাগ এ শিল্পকে রক্ষা করার জন্য কোন ধরণের পদক্ষেই গ্রহণ করেনা। এমনকি এ শিল্পকে ধরে রাখার জন্য খামারিদেরকেও উদ্বুদ্ধ করছেন না তারা। যার কারণেই এ শিল্প থেকে উদ্যোক্তারা দূরে সরে যাচ্ছেন।
সরেজমিনে কথা হয় ব্যবসায়ী ইমরুল পাভেজ ভুট্টু’র সাথে। বর্তমানে কোন ধরনের ব্যবসা শুরু না-করতে পেরে অনেকটা দিশেহারা তিনি। ব্যবসায়ী ভুট্টু জানান- এ ব্যবসা আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। যখন বেকার ছিলাম তখন বয়লার মোরগের ফার্ম চালু করার পর অনেকটা স্বাবলম্বী হয়ে ওঠি। ২০১০ সাল থেকে একটানা ৫ বছর বয়লার মোরগের ব্যবসা করেছি। সফলও হয়েছি।
কিন্তু চলতি বছরের শুরু থেকেই আগের তুলনায় বয়লায় মোরগের একদিনের বাচ্চা, খাবার, ভ্যাকসিনসহ ওষুধের দাম কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় এ ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছি। কারণ আমার কাছে যে পুঁজি ছিলো তা দিয়ে আর এ ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব নয়। তবে এখনো আমার বয়লার মোরগ পালনের শেড রয়েছে। যদি কোন সময় সুযোগ হয় আবারো আমি এ ব্যবসা চালু করব।
সাদারপাড়া এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান বলেন- ভুট্টু ভাই যখন মুরগি বিক্রি করতেন তখন তিনি সাদারপাড়াসহ আশপাশ এলাকায় মাইকিং ও প্রচারপত্রও বিলি করতেন। বাজার থেকে অনেকটা কম মূল্যে তিনি মোরগ বিক্রি করতেন। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত শতাধিক লোক তার মোরগের ফার্ম থেকে মোরগ সংগ্রহ করত। কিন্তু হঠাৎ এ বছরের প্রথম থেকেই তার মোরগের ফার্ম বন্ধ হয়ে যায়। তবে এখনো মোরগ পালনের শেড রয়েছে।
শুধু ভুট্টু নয় সিলেট নগরীর উপশহর এলাকার বাসিন্দা হাজী দিনার। ২০১৩ সালে নিজ বাসার ছাদের আংশিক জায়গার উপর স্থাপন করেন বয়লার মোরগের খামার। আমেরিকায় অবস্থানকারী বোন জান্নাত বেগমের পাঠানো টাকার পাশাপাশি আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে দেনা করে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন এ খামারে। নিজ হাতে গড়া খামারের আয় দিয়ে ভালোই চলছিল দিনারের ছোট্ট পরিবারের সংসার। পরবর্তীতে পুঁজি সংকটসহ নানা কারণে কয়েকমাস পূর্বে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায় দিনারের মোরগের খামার। তিনি এখন পুঁজিহারা-নিঃস্ব।
অনুসন্ধানে জানা যায়- আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে ব্যর্থ হয়ে গত ৫ বছরে সিলেটের ভুট্টু, দিনারের মতো অন্তত দেড় হাজার খামারি বাধ্য হয়েছেন তাদের পোল্ট্রি খামার বন্ধ করে দিতে। পুঁজি ও পেশা হারিয়ে তারা ছিটকে পড়েছেন অর্থনীতির মূল ধারা থেকে। এরা বছরে ৮-১০টি বয়লার মোরগের বাচ্চার চালান তুলতেন ফার্মে। অনেক আশায় বুক বেঁধে যারা নিজের সর্বস্ব বিনিয়োগ করে, স্বজনদের কাছ থেকে দেনা করে উদ্যোক্তা হয়েছেন, স্বপ্ন দেখেছেন অনেক বড় হওয়ার, তারা এখন নিঃস্ব-অসহায়। প্রতি বছরই সিলেটের ২-৩ শতাধিক উদ্যোক্তা পোল্ট্রি খামারের দিকে এগিয়ে এলেও খুব কমসংখ্যকই শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারছেন বলে জানা গেছে।
সিলেট প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়- ব্রয়লার ও লেয়ার মোরগের ফার্মের ব্যবসায়ীদের জন্য প্রতিবছরই নানা ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয় সিলেট প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে। যারা ফার্ম ব্যবসা সাথে জড়িত তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে সিলেট প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে ট্রেনিং,পথসভা, প্রশিক্ষণ ও অফিস থেকেও পরামর্শ দেয়া হয়।
২০১৫-১৬ অর্থবছরের হিসেবে পর্যালোচনা করে দেখা যায়- সিলেট সদরে ব্রয়লার ফার্ম চালু আছে ৯৩টি ও লেয়ার মোরগের ফার্ম চালু আছে ২৬টি। যা গত অর্থ বছরের চেয়ে সিলেটে বয়লার ও লেয়ার মোরগের ফার্মের সংখ্যা অনেকটাই কমে গেছে। তবে কি কারণে দিনে দিনে সিলেটে ফার্মের সংখ্যা কমেছে এ বিষয়ে অবগত নন সংশ্লিষ্টরা।
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রি সাইন্স ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর ড. এএসএম মাহবুব জানান, আমাদের দেশে মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে পোল্ট্রি শিল্পখাত। নানা প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে দেশীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি সুযোগ পেলেই রফতানি বাজারে প্রবেশের চেষ্টা করে চলেছে এ খাতটি। আমি মনেকরি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের দিকেই বেশি নজর দেয়া।