শিকারি আতঙ্কে হাকালুকির অতিথিরা!
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ জানুয়ারি ২০২০, ১০:১৯ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
একটু উষ্ণতার খোঁজে হাজারো মাইল পাড়ি দিয়ে বৃহত্তম হাওর হাকালুকিতে আসে অতিথি পাখি। পর্যাপ্ত খাবার আর উপযুক্ত পরিবেশের জন্য প্রতিবছরই তারা দলবেঁধে আসে। কিন্তু শিকারিদের ভয়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে থাকতে হচ্ছে তাদের।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শিকারিদের কারণে প্রতিবছরই কমছে অতিথি পাখির সংখ্যা। এছাড়া হাওরের অসংখ্য বিলের গভীরতা কমে যাওয়া, ঝোপঝাড় ধ্বংস হওয়া ও মৎজীবীদের মাছ শিকারের কারণে পাখির আশ্রয়স্থল ও খাবার কমে যাচ্ছে।
হাকালুকি হাওরের আয়তন ১৮ হাজার ১১৫ হেক্টর। সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলার পাঁচটি উপজেলাজুড়ে এর বিস্তৃতি। এ হাওরে ছোট-বড়-মাঝারি সব মিলিয়ে প্রায় ২৩৮টি বিল রয়েছে। শীত মৌসুমে হাওরের ছকিয়া, নাওগাঁ, পিংলা, ঘরকুঁড়ি, বাইয়া, হাওরখাল, গজুয়া, রঞ্চি ও কালাপানি জলাশয়ে অতিথি পাখির আধিক্য বেশি থাকে।
সরেজমিনে হাওরের বিভিন্ন বিল ঘুরে তেমন পাখির দেখা না মিললেও ঘরকুঁড়ি ও ছকিয়া বিলে কিছু দেখা গেছে। বিলের যে প্রান্তে মানুষের আনাগোনা কম সেখানেই নানা রঙের পাখি অবস্থান করছে। সকাল ও বিকেলে সবচেয়ে বেশি পাখি দলবেঁধে ছোটাছুটি করছে। কিছু পাখি মাছ শিকার করে খাচ্ছে।
স্থানীয়রা জানায়, এবার হাওরে বালিহাঁস, ভুতিহাঁস, গিরিয়া হাঁস, ল্যাঞ্জা হাঁস, গুটি ঈগল, কাস্তেচড়া, কুড়া ঈগল, সরালি, পানভুলানি, কালিম, টিটি, পেডিসহ অন্তত ১৫-২০ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি এসেছে। তবে এর মধ্যে বালিহাঁস ও ভুতিহাঁসের সংখ্যা বেশি। এছাড়া হাকালুকির বিভিন্ন বিলে সাদা বক, কানি বক, পানকৌড়ি, চিল, বাজ পাখিসহ দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন পাখি রয়েছে।
হাওরের ছকিয়া বিলে কথা হয় মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার সাদিপুর গ্রামের মৎস্যজীবী তাজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, আগের তুলনায় পাখি কমে যাচ্ছে। এক সময় পাখির কারণে আমরা মাছ ধরতে পারতাম না। কিন্তু এখন সেই চিত্র বদলে গেছে। পাখি কমে যাওয়ায় পর্যটকের সংখ্যাও কমে গেছে।
একই উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ গ্রামের মৎস্যজীবী চন্দন বিশ্বাস বলেন, হাওরের দুই শতাধিক বিলের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি বিলে পাখি রয়েছে। তাও যেখানে মানুষের আনাগোনা কম সেখানে বিচ্ছিন্নভাবে পাখি ওড়াউড়ি করছে।
হাওরে পর্যটকও অনেক কমে গেছে উল্লেখ করে কুলাউড়া উপজেলার হাওরপাড়ের বাসিন্দা ও কলেজ শিক্ষক মতিউর রহমান বলেন, শীত মৌসুমে পর্যটকরা আসেন পাখি দেখতে। কিন্তু শিকারের কারণে হাওর পাড়ে পাখি আসছে না। দেখতে হলে যেতে হয় মাঝখানে। সেখানে গিয়ে আগের মতো পাখি দেখতে না পেয়ে পর্যটকরা হতাশ হয়ে ফিরে যান।
বাংলাদেশ বার্ডস ক্লাবের সহসভাপতি তারেক অনু বলেন, হাকালুকিতে মূলত শীতপ্রধান দেশের পাখিগুলো আসে। কিন্তু এখানে পাখির থাকার জায়গা নেই। কৃষি জমির জন্য হাওরের সব ঝোপঝাড় কেটে সাবাড় করা হচ্ছে। এটা পাখির জন্য খুবই ক্ষতিকর। সেজন্য পাখি আসছে না।
তিনি বলেন, হাকালুকির একটি অংশে বিষ দিয়ে পাখি শিকার করা হচ্ছে। এ পাখিগুলো নিধন করে পর্যটকদের কাছে বিক্রি করছে শিকারিরা। এছাড়া সিলেটের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পাখির মাংস দিয়ে খাবারের একটা রেওয়াজ থাকায় এক শ্রেণির মানুষ নিয়মিত পাখি শিকার করছে। ফলে পাখিরা বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থান করছে।