জগন্নাথপুরে সরকারি টাকায় আ’লীগ নেতার বাড়ির রাস্তায় ব্রিজ
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ আগস্ট ২০১৯, ৩:৫৬ অপরাহ্ণ
গোবিন্দ দেব, জগন্নাথপুর:
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার সৈয়দপুর শাহারপাড়া ইউনিয়নের হাড়িকোনা গ্রামে সরকারি অর্থায়নে এক আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ির রাস্তায় সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়ায় এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এই পরিবারের এক সদস্য স্বাধীনতা বিরোধী বলেও অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সরকারি অর্থায়নে স্বাধীনতা বিরোধী ব্যক্তির বাড়ির জন্য সেতু নির্মাণ প্রকল্প বাতিলের দাবি জানিয়ে জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ করা হয়।
ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নে সেতু নির্মাণের দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ করে কার্যাদেশ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। সুনামগঞ্জের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রেজাউল আলম গত ২ জুলাই লটারির মাধ্যমে সেতুটির কাজ পেয়েছেন।
লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, সৈয়দপুর শাহারপাড়া ইউনিয়নের হাড়িকোনা গ্রামের বাসিন্দা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মনোয়ার আলীর বাড়ির সামনে তার নিজ বাড়ির জন্য একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। মনোয়ার আলীর ভাই আনোয়ার আলী ৭১ সালে স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার হিসেবে পরিচিত। জগন্নাথপুর উপজেলার রাজাকারের তালিকায় তার নাম রয়েছে।
এলাকাবাসীর পক্ষে লিখিত অভিযোগকারী সৈয়দপুর হাড়িকোনা গ্রামের বাসিন্দা মসুদ কোরেশী বলেন, সরকারি অর্থে এক ব্যক্তির বাড়ির জন্য সেতু নির্মাণের বিষয়টি এলাকায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করে। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের যখন ক্ষমতায় তখন রাজাকারের বাড়িতে সেতু নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়টি মেনে নেয়া যাচ্ছে না তাই আমি সেতু নির্মাণ কার্যক্রম বাতিলের দাবি জানিয়ে লিখিত আবেদন করেছি।
জগন্নাথপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তর সূত্র জানায়, চলতি অর্থ বছরে জগন্নাথপুর উপজেলায় ১০ টি সেতু নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। গত ২ জুলাই লটারির মাধ্যমে সেতুগুলোর ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। ১০ টি সেতুর মধ্যে সৈয়দপুর হাড়িকোনা রত্নাখালের ওপর সৈয়দ মনোয়ার আলীর বাড়ির সামনে ২১ লাখ ১৭ হাজার ৯৯১ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২৪ ফুট দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মাণ প্রকল্প রয়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সৈয়দ এমদাদ বলেন, সরকারি অর্থে ব্যক্তির বাড়ির জন্য সেতু নির্মাণ কেউ মানতে পারছেন না। এনিয়ে এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বদরুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে যারা সরকারি অর্থায়নে ব্যক্তির বাড়িতে সেতু নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করেছেন তারা কাজটি সঠিক করেননি। দ্রুত এ সেতু নির্মাণ প্রকল্প বাতিল করে জন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সেতু নির্মাণ করা হোক। তিনি বলেন, যে ব্যক্তির জন্য সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে তার ভাই স্বাধীনতা বিরোধী হিসেবে পরিচিত। প্রধানমন্ত্রী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন। আগামীতে আওয়ামী লীগের সভায় আমরাও এ দাবি জানাব।
সৈয়দপুর শাহারপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মনোয়ার আলী বলেন, আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে।তিনি বলেন,আমি গত ২০ বছর ধরে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি।গত ছয় বছর ধরে একটি সেতুর জন্য দাবি জানিয়ে আসছিলাম।সেতুটি বাস্তবায়ন হলে আমিসহ আরও কয়েক পরিবার উপকৃত হবে। তিনি বলেন, আমার ভাই যুক্তরাজ্য প্রবাসী ছিলেন।সেখানে তিনি মৃত্যু বরণ করেছেন।তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সঠিক নয়।
জগন্নাথপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা পিআইও শাহাদাত হোসেন ভূঁইয়া বলেন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রণয়ন কমিটির সুপারিশ ক্রমে আমরা সেতুগুলো চূড়ান্ত তালিকা ভুক্ত করি। সরেজমিনে পরিদর্শন করে এক বাড়ির জন্য যদি প্রতীয়মান হয় তাহলে তা আমরা বাতিলের সুপারিশ করব।তিনি বলেন ঠিকাদার কে এখনো কার্যাদেশ দেয়া হয়নি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রণয়ন কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজুল আলম মাসুম বলেন, এলাকাবাসীর পক্ষে এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। তিনি বলেন, রাজাকারের পরিবার কিনা সেটা বড় কথা নয়। জনস্বার্থ আছে কিনা সেটা দেখা হবে।