‘ডেঞ্জারজোন’ ওসমানীনগর: সন্তানের মুখ দেখা হলো না নাজমুলের, শোকে স্তব্ধ এলাকাবাসী
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ আগস্ট ২০২৫, ৯:৫৪ অপরাহ্ণ

জুবেল আহমদ, ওসমানীনগর:
আনন্দের অপেক্ষায় দিন গুনছিলেন নাজমুল ইসলাম। আগামী সপ্তাহে স্ত্রী সন্তান জন্ম দেবেন এই খুশির খবরেই চোখে মুখে ছিল উচ্ছ্বাস। একই সপ্তাহে ছোট ভাইয়ের বিয়ের আয়োজনও চলছিল জোরেশোরে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মমতায় সেই হাসি থেমে গেলো সড়ক দুর্ঘটনার ডেঞ্জারজোন খ্যাত সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের ওসমানীনগর উপজেলার ইলাশপুরে। নতুন জীবনের প্রথম কান্না শোনার আগেই স্ত্রীর জীবনে নেমে এলো এক অদম্য শূন্যতা। ছোট ভাইয়ের বিয়ের আনন্দও রঙ হারাল শোকে। সাথে পুরো ইশবপুরে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) বিকেলে ওসমানীনগরের ইলাশপুর এলাকায় যাত্রীবাহী বাস চাপায় প্রাণ হারান নাজমুল ইসলাম (৩২) ও তার বন্ধু আরশ আলী। নাজমুলের বাড়ি উমরপুর ইউনিয়নের ইশবপুরে আর আরশও একই ইউনিয়নের বাসিন্দা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, গোয়ালাবাজার থেকে সিলেটের পথে মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন তারা। হঠাৎ পেছন থেকে দ্রুতগামী ঢাকা এক্সপ্রেস বাস ধাক্কা দেয়। নাজমুল ঘটনাস্থলেই মারা যান, আরশ আলী হাসপাতালে নেওয়ার পথে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
ঘটনার পর উত্তেজিত জনতা তাজপুর বাজারে বাসটি আটক করে আগুন ধরিয়ে দেন। ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ও বাস জব্দ করে। কিন্তু আগুনে জ্বলে ওঠা বাসের চেয়ে অনেক বেশি পুড়ে গেছে ইশবপুরের একটি পরিবার।
গ্রামের মানুষ বলছেন, নাজমুল ছিলেন শান্ত, পরিশ্রমী ও হাসিখুশি স্বভাবের। এখন তার স্ত্রী একা হয়ে গেলো, পৃথিবীতে তার সন্তান আসবে কিন্তু বাবা থাকবে না।
তারা বলছেন, বাংলাদেশে প্রতিদিনই এমন অসংখ্য দুর্ঘটনা কেড়ে নিচ্ছে তরুণ প্রাণ। অতিরিক্ত গতি, বেপরোয়া চালনা ও সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাব যেন নাজমুলদের জীবন কেড়ে নেওয়ার এক অবিরাম চক্রে পরিণত হয়েছে। নাজমুলের মতো কত স্বপ্ন যে মহাসড়কে থেমে যায় তার হিসাব কেবল শোকাহত পরিবারের বুকের ভেতরেই জমা থাকে।
এদিকে, শুক্রবার বিকেলে সাড়ে ৫ টায় উপজেলার বড়ইশবপুর ওসমানীনগর ইসলামিক একাডেমীর মাঠে নাজমুলের জানাজা শেষে মরদেহ দাফন করা হয় গ্রামের কবরস্থানে। এ সময় পুরো এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। পরে সন্ধ্যা ৬ টায় আরশ আলীর প্রথম জানাজা উমরপুর বাজার টাইটেল মাদ্রাসায় এবং দ্বিতীয় জানাজা কাঠাল খাইড় জামে মসজিদে জানাজা শেষে মরদেহ দাফন করা হয় ।







