বিয়ানীবাজারে চোরাই চিনির সিন্ডিকেট
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ মে ২০২৫, ৭:৪০ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
চোরাইপণ্যকে বিয়ানীবাজারে বলা হয় ‘বুঙ্গার মাল’। আর চোরাই চিনিকে বলা হয় ‘বুঙ্গার চিনি’। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে চোরাই পথে আসা চিনির চালানই ‘বুঙ্গার চিনি’। পুলিশের হাতে আটকের পর চিনির চালান আদালতে নিলামে ওঠে। আর এই চিনির চালান কেজিপ্রতি বাজার দরের চেয়েও অধিক মূল্যে কিনে নেয়া হয়!
বিয়ানীবাজারে প্রতি কেজি চিনি খুচরা বাজারে বিক্রি হয় কেজি ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায়। কিন্তু আদালত থেকে নিলাম করা বুঙ্গার চিনির যেন কদরই আলাদা। নিলামে প্রতি কেজি চিনি ১২৮ থেকে ১৪৫ টাকায় চড়ামূল্য দিয়ে কিনে নেয়া হয়। এ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, চিনি নয়, চোরাচালান সিন্ডিকেটের কাছে নিলামের কাগজ বেশি মূল্যবান। এই নিলামের কাগজ চিনি চোরাচালানের সহজ পন্থা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চিনির চালান নিতে আদালত থেকে যে কয়দিন সময় বেঁধে দেয়া হয়, নিলামের সেই কাগজ নিয়ে এই কয়দিনে কয়েক দফায় চোরাই চিনির চালান আনা যায়। আর আদালতের এই কাগজ দেখিয়ে পার পেয়ে যান চোরাকারবারিরা। আর নিলামের কাগজে পরিমাণ বেশি লেখা থাকলে, সেটি চোরাচালানীদের কাছে বেশি মূল্যবান। এইসব কাগজে ভর করে বিয়ানীবাজার পৌর শহরে ২-৩ জনের একটি সিন্ডিকেট চোরাই চিনি বিক্রি করছে।
গোদামে রেখে এসব চিনি তারা বিক্রি করছে ওইসব ঘষামাজা কাগজের জেরে। যাতে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা কোনো অভিযান পরিচালনা করতে না পারে। বিয়ানীবাজার, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ এবং বড়লেখা উপজেলার ১৮-২০ জন ব্যক্তি স্থানীয়ভাবে চোরাই চিনি বাজারজাতের সহযোগী। তাদের অন্তত ৬ জনের বিরুদ্ধে বিয়ানীবাজারসহ অন্যান্য থানায় মামলা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অবৈধভাবে আসা এসব চিনিতেই এখন ছেয়ে গেছে বিয়ানীবাজার। পৌর শহরের মুফচ্ছিল মার্কেটের এক মুদি ব্যবসায়ী উপজেলার চোরাই চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। মূলত তার সঙ্গে রফাদফার পরই চোরাকারবারীরা পৌর শহরে চিনি নিয়ে প্রবেশ করেন। এর বাইরে আর কারও কাছে তারা চিনি সরবরাহ করেন না।
কখনো বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে, কখনো বা বিশেষ ব্যবস্থায় চোরাই পণ্য বিয়ানীবাজারে প্রবেশ করে। আর এই বিশেষ ব্যবস্থা হচ্ছে, ‘ম্যানেজ সিস্টেম’।
সার্বিক বিষয়ে বিয়ানীবাজার থানার ওসি আশরাফ উজ্জামান বলেন, আসলে নিলাম ডাকের সকল কাগজ-যাচাই করা জঠিল প্রক্রিয়া। আদালত থেকে নিলামের পর ক্রেতাকে চিনি গন্তব্য স্থানে নিতে সময় বেঁধে দেয়া হয়। চোরাকারবারিরা আইনের ফাঁক দিয়ে হয়তো চোরাই চিনি বহন করতে পারে। তিনি বলেন, বিয়ানীবাজার থানা পুলিশ চোরাচালান বন্ধে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, ক্ষুদ্র মুদি দোকানিরা ২-৩ বস্তা করে চিনি ক্রয়ের পর তা প্যাকেট করে ফেলেন। এসব প্যাকেট দেখে আসলে বোঝা যায় না এগুলো বৈধ না অবৈধ।