ওসমানীনগরে কৃষি জমিতে অবাধে গড়ে উঠছে আবাসন, কমছে ফসলী জমি
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ মে ২০২৫, ৮:২৩ অপরাহ্ণ
জুবেল আহমদ, স্টাফ রিপোর্টার:
প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটের ওসমানীনগরে প্রশাসনিক আইন অমান্য করে কৃষি জমিগুলোতে অবাধে গড়ে উঠছে আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন। ভূমি ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী কৃষি জমিতে আবাসিক অথবা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করতে হলে জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু ওসমানীনগরে এ আইন কেউ মানছে না। আইন লংঘন করেই গড়ে উঠছে বিভিন্ন স্থাপনা। এসব স্থাপনার কবল থেকে রক্ষা পাচ্ছে না হাওর এলাকার জমিগুলোও। একই সঙ্গে ইটের চাহিদা মেটাতে এবং ভিটা উঁচু করার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে কৃষি জমির ওপরের মাটি। এতে চরম হুমকির মুখে পড়ছে কৃষি ব্যবস্থা। ভবিষ্যতে এই উপজেলায় কৃষি জমির অভাবে খাদ্যশস্যের চরম ঘাটতি হবে বলে মনে করেন এলাকার সচেতন মহল।
জানা যায়, ২২৪.৫৪ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলায় ৮ টি ইউনিয়নে ২২ হাজার পরিবারে ২ লক্ষ ৩০ হাজার ৪৬৭ জন মানুষ বসবাস করেন। তাদের মধ্যে অধিকাংশ লোকই ইউরোপ-আমেরিকাসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে স্থায়ী ও অস্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছেন। এসব প্রবাসী পরিবারের সদস্যদের সিংহভাগই কৃষির প্রতি অমনোযোগী। প্রবাসীরা কৃষির চেয়ে বড় বড় বাসাবাড়ি এবং মার্কেট তৈরিতেই বেশি আগ্রহী। ফলে প্রবাসে আয়কৃত টাকার অধিকাংশই ব্যয় হচ্ছে দালানকোঠাসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণে। গ্রাম ও বাজার এলাকার আশপাশের কৃষি জমি বড় বড় অট্টালিকায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। এখন হাওর এলাকার কৃষি জমিগুলোতে গড়ে তুলছেন দালান কোঠাসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এছাড়া হাওর এলাকার অধিকাংশ কৃষি জমির ওপরের উর্বর মাটি চলে যাচ্ছে ইটভাটায় ও ভিটা ভরাটের কাজে। কৃষি জমি ভরাট করে বাসা-বাড়ি, মার্কেট ও বিভিন্ন ধরণের প্রতিষ্ঠান নির্মাণের কারণে ক্রমেই কমছে কৃষি জমির পরিমাণ।তবে কী পরিমাণ জমি কমেছে এর নির্দিষ্ট কোন পরিসংখ্যান নেই সংশ্লিষ্টদের কাছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের বাজার সংলগ্ন কৃষি জমিতে নির্মিত উপজেলা হাসপাতালকে কেন্দ্র করে সড়ক নিকটবর্তী জমিগুলো ভরাট করে ভিঠা তৈরি করা হয়েছে। এ বাজারের নিকটবর্তী ব্রাহ্মণগ্রাম এলাকায় কৃষি জমিতে গড়ে উঠেছে নান্দনিক পার্টি সেন্টার। এছাড়া তাজপুর ও সাদিপুর ইউনিয়নেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এদিকে, দয়ামীর ইউনিয়নের কুরুয়া এলাকায় কৃষি জমিতে গড়ে উঠেছে, খেলার ইনডোর, গোডাউন, মিনারেল ওয়ারটার তৈরির কারখানা, পেট্টোলপাম্প, বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য স্থাপনা।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যানুযায়ি, মোট জমির পরিমাণ ২২ হাজার ২৩৮ হেক্টর, তার মধ্যে ফসলি জমির পরিমাণ ১৪ হাজার ৫৬৩ হেক্টও, এক ফসলি জমির পরিমাণ ৫ হাজার ৯৬২ হেক্টর, দু’ ফসলি জমির পরিমাণ ৭ হাজার ৪১১ হেক্টর,তিন ফসলি জমির পরিমাণ ১ হাজার ১৫১ হেক্টর। এছাড়া সাময়িক পতিত জমির ১১৬২ হেক্টর এবং স্থায়ী পতিত জমির পরিমাণ ১৪০ হেক্টর। তথ্যানুযায়ি প্রতি বছর জমির বড় একটি অংশ অনাবাদি পড়ে থাকে। যে জমিগুলো থেকে অন্তত পানির রিজার্ভার এবং নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকাই জমি অনাবাদি থাকার অন্যতম কারণ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা উম্মে তামিমা বলেন, সময়ের ব্যবধানে কৃষি জমির পরিমাণ কমছেধানের উন্নত জাত আবিষ্কার না হলে অনেক আগেই খাদ্য ঘাটতি দেখা দিত। তবে যেভাবে কৃষি জমি কমছে তাতে ভবিষ্যতে খাদ্য ঘাটতির সম্ভাবনা রয়েছে। এব্যাপারে সকলকে সচেতন হওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, কৃষি জমিতে স্থাপনা তৈরির ব্যবাপারে আমরা নিরুৎসাহিত করি। জমির যথাযথ ব্যবহারে কোন ধরণের স্থাপনা নির্মাণে অনুমতি এবং নকশার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু ইউনিয়ন পর্যায়ে এসংক্রান্ত জনবল না থাকায় তা সম্ভব হয় না। জমির টপসয়েল কাটা বন্ধ করার জন্য আমি যোগদান করার পর থেকে অভিযান পরিচালনা করে আসছি এবং তা অব্যাহত থাকবে। নিজেদের স্বার্থে কৃষি জমির ব্যবহারে সকলকে সচেতন হওয়ার জন্য অনুরোধ জানান তিনি।