সুনামগঞ্জে ইতালি পাঠানোর নামে দালালের প্রতারণা, নিঃস্ব ১৫ পরিবার
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ মে ২০২৫, ১২:৫৫ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজঃ
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার ভীমখালি ইউনিয়নের ১৫ যুবককে ইতালি পাঠানোর কথা বলে, জাল ভিসা ও টিকিট দেখিয়ে দেড় কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে দিলোয়ার হোসেন (৪২) নামে এক দালাল। স্বপ্নের দেশ ইতালি পাঠানোর কথা বলে তাদের কাছ থেকে ১০ লাখ করে মোট দেড় কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা দিলোয়ার। বিদেশে গিয়ে ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় টাকা দিয়েও দিনের পর দিন ঘুরে বিদেশ যেতে না পেরে গ্রামের এসব সাধারণ মানুষ এখন সর্বস্ব হারিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। ভুক্তভোগীরা হলেন- রাহাদ মিয়া (২০), তুহেল আহমদ (৩০), আফজাল হোসেন (২৬), রাইফুল ইসলাম (২৫), জুবেল আহমদ (৩০), রাব্বি হাছান (২১), ইসলাম উদ্দিন (২৬), পারভেজ (২৮), কাউসার (২৩), সোহাগ (২২), সারোয়ার (২৫), কবির (২৮), আইনুল হক (২৪), পাবেল (২২), সামছুদোহা (৩০)। এ ছাড়াও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে আরও অনেক ভুক্তভোগী। ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জামালগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি গ্রামের ১৫ জন মানুষ কেউ জমিজমা, স্বর্ণালংকার, গরু-ছাগল বিক্রি ও ঋণ করে একই জেলার গৌরারং ইউপি’র লালপুর গ্রামের দিলোয়ার হোসেন নামে এক দালালকে টাকা দেন। কয়েক মাসের মধ্যে বিদেশে নেয়ার কথা থাকলেও দুই বছরের বেশি সময় ধরে দিনের পর দিন ঘোরায় ওই দালাল। সম্প্রতি ফ্লাইটের ভুয়া টিকিট দেখিয়ে একে জনের কাছ থেকে কয়েক ধাপে নগদ ও ডাচ্-বাংলা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১০ লাখ করে টাকা নেন দিলোয়ার ও তার বাবা তহুরুল ইসলাম তহুর (৬৫) এবং তার সহোদর তিন ভাই মো. মনোয়ার হোসেন (৩৬), মো. রেজাউল করিম (২৯), সারোয়ার হোসেন (২৬)। এদিকে বিদেশ যেতে না পেরে ঋণের চাপে অনেকই হয়েছেন বাড়িছাড়া। বারবার যোগাযোগ করার পর এখন দেবো তখন দেবো বলে দিন মাস বছর চলে যায়।
এমতাবস্থায় সামাজিকভাবে সালিশ ডাকলে সালিশে সাড়া দেয় এই দালাল ও তার বাবাসহ তিন ভাই। সালিশে উপস্থিত ভীমখালি ইউপি’র চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান ও গৌরারং ইউপি’র চেয়ারম্যান সৈকতের সামনে তারা এসব টাকা নিয়েছে বলে স্বীকার করে এবং তাদের বিদেশ পাঠাবে বলে সময় নেয় আর নিতে না পারলে সব টাকা ফেরত দিবে বলে জানায়।
এ ব্যাপারে গৌরারং ইউপি চেয়ারম্যান জানান, আমাকে জামালগঞ্জের নোয়াগাঁও গ্রামের লিটন মিয়া ও ভীমখালি ইউপি’র চেয়ারম্যান বিষয়টি অবগত করেছেন। আমি সবার সঙ্গে যোগাযোগ করে সালিশের ব্যবস্থা করলে দালাল দিলোয়ার দেড় কোটি টাকা নিয়েছে বলে স্বীকার করে এবং চার মাসের মধ্যে সব টাকা ফেরত দিবে বলে সালিশে কথা দেয়। পরে সে আর টাকা দেয়নি সালিশ অমান্য করেছে। ভীমখালি ইউপি চেয়ারম্যান জানান- আমার ইউনিয়নের ১০ জন ভুক্তভোগীর পারিবারিক অবস্থা দেখে আমি নিজ থেকে গৌরারং ইউপি’র চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করে সালিশের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করি। তবে দালাল দিলোয়ার তা অমান্য করে। কয়েক মাস পর যোগাযোগ করলে সে বিভিন্ন হুমকি-ধমকি দেয় এমনকি প্রাণে মারার হুমকি দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। তারপর নিরুপায় হয়ে ভুক্তভোগীরা আইনের আশ্রয় গ্রহণ করে।
তারা গত একমাসে পাঁচটি অভিযোগ করেছে সুনামগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। নোয়াগাঁও গ্রামের ভুক্তভোগী রাহাদের পিতা লিটন মিয়া বলেন, বিদেশ যাওয়ার জন্য দালাল দিলোয়ার হোসেন কে টাকা দিয়ে অনেকই প্রায় ২ বছর থেকে ঘুরছি। দিলোয়ার বার বার আমাদের আশা দিয়েও বিদেশ নিয়ে যায়নি আমার পোলাডা কে। আমি নিজে দিলোয়ার দালালের বাচ্চাকে ঋণ করে, গরু বিক্রি করে কয়েক ধাপে ১০ লাখ টাকা দিয়েছি। সম্পূর্ণ টাকা নেওয়ার পর এখন সে আমার ছেলেকে জাল ভিসা ও টিকেট দিয়ে ঢাকা থেকে ঘুরিয়ে আনে,আর কোনো ব্যবস্থা করে নি। ঋণের টাকা কিভাবে দেব এই নিয়ে খুবই বিপদে আছি।দিন দিন ঋণের পরিমান বেড়ে যাওয়াতে আমি ও আমার পরিবার পরিজন মৃত্যুর মুখে এসে দাড়িয়েছি।
আমি খুব অসুস্থ আমার আকুল আবেদন সরকার যে আমার বিচার করে দেয়। খালেক মিয়া নামে আরেক ভুক্তভোগীর বাবা বলেন, ১৭ লাখ টেকা দিয়ে ইতালিতে পৌছানোর চুক্তি ছিল,আমরা ১০ লাখ করে দিয়েছি জায়গায় গেলে পরে বাকি টাকা দিব। তবে আমাদের কে এই দালাল প্রতারণা করে ভুয়া ভিসা ও টিকেট হাতে ধরিয়ে দেয়। পরে ঢাকা গিয়ে আমরা ফিরে আসি এর পর থেকে আমাদের সাথে নয়ছয় শুরু করে।আমরা যারা বিদেশ যাওয়ার জন্য ঋণ করে টাকা দিছি তাদের মধ্যে অনেকেই মধ্যবিত্ত,মানসম্মানের ভয়ে বাড়িঘর বিক্রি করে রাস্তায় থাকি তবুও ঋণ শেষ হয়নি। আমারা সুবিচার চাই সরকারের কাছে। ভুক্তভোগী আফজাল হোসেন বলেন, জমি, মায়ের স্বর্ণালংকার, গরু-ছাগল বিক্রি করে বিদেশ যাওয়ার আশায় টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন বেঁচে থাকবো না মরে যাবো কিছুই বুঝতে পারছি না। আমরা চাই সরকার আমাদের টাকা ফিরিয়ে দিতে দ্রুত প্রায়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে। এ বিষয়ে দিলোয়ার হোসেনের নামে ওই দালালের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার প্রতিবেশীরা জানায়- গত কয়েক মাস ধরে সে বাড়ি আসে না, কোথায় থাকে তাও কেউ জানে না। মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার ব্যবহৃত নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া যায়। সুনামগঞ্জ সদর থানার তদন্ত অফিসার পুলিশ পরিদর্শক বলেন, মামলাটি আমি তদন্ত করেছি, ব্যাংকের প্রমাণগুলো যাচাই করে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।সুত্র-মানবজমিন