বাগদা-গলদা রেণুর অবৈধ ব্যবসা : জড়িত আছেন জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ মে ২০২৫, ৪:১৫ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্কঃ
পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার তেঁতুলিয়া ও বুড়া গৌরাঙ্গ নদীতে অবৈধ গলদা ও বাগদা চিংড়ির রেণুর ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠেছে। অবৈধ ওই ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। মাঝে-মধ্যে পুলিশ অভিযান চালালেও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে রেণু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সিন্ডিকেটের মূল হোতারা। সরজমিন তেঁতুলিয়া ও বুড়াগৌরাঙ্গ নদী এলাকা ঘুরে এ রকম চিত্র পাওয়া গেছে। প্রতিদিন নদী তীরবর্তী এলাকার শত শত মানুষ গলদা ও বাগদা চিংড়ির রেণু সংগ্রহ করছেন। অবৈধ মশারি জাল দিয়ে গলদা ও বাগদার রেণু সংগ্রহ করার কারণে অন্যান্য শতাধিক প্রজাতির মাছের রেণু পোনা মারা পড়ছে। এ কারণে সরকার নদীতে রেণু ধরা ও সংরক্ষণ করা এবং মশারি জাল ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে শাস্তির বিধান করেছেন। কিন্তু সরকারি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নদীতে চলছে অবিরাম রেণু ধরার মহোৎসব। বৈশাখ মাস থেকে আষাঢ় মাস পর্যন্ত জমজমাট অবৈধ রেণুর ব্যবসা চলে নদীতে। প্রতিদিন শত শত মানুষ গলদা ও বাগদার রেণু ধরার নামে শতাধিক অন্যান্য প্রজাতির মাছের রেণু পোনা নিধন করছেন। ভ্রাম্যমাণ ক্রেতারা নদীতীর থেকে সব রেণু ক্রয় করে নিয়ে আসেন আউলিয়াপুর লঞ্চঘাট এলাকায়।
সেখানে ভ্রাম্যমাণ ক্রেতাদের থেকে পাইকারি ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করা লাখ লাখ রেণু ড্রামে ভরে ট্রাকে করে চালান করা হয় খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। পুলিশ মাঝে-মধ্যে রেণু বোঝাই ট্রাকে অভিযান চালালেও বন্ধ হয়নি অবৈধ রেণুর ব্যবসা। এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের একাধিক নেতার রেণু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
অভিযুক্ত সাবেক ইউপি সদস্য বেল্লাল হোসেন রেণু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জানান, বর্তমানে রেণুর ব্যবসা খুবই কম মাছও কম পাওয়া যাচ্ছে নদীতে। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, রেণু না ধরলে খাবে কি নদীতীরের মানুষেরা? তিনি জানান, বাগেরহাট জেলার ফকিরহাটে ওই রেণু চালান করা হয়। সৈয়দ জাফর এলাকার রেণু ব্যবসায়ী ইসহাক হাওলাদার বলেন, নদীতে মাছ কম তাই রেণু ব্যবসাও মন্দা যাচ্ছে তাদের। তবে কয়েকজন রেণু ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নৌ পুলিশকে ম্যানেজ করেই নদীতে রেণু ধরছেন জেলেরা। এ ব্যাপারে দশমিনা নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ ফেরদৌস আহমেদ সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, প্রতিদিনই অভিযান চালিয়ে রেণু সংগ্রহকারীদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেয়া হয়। তিনি আরও বলেন, আমাদের অভিযানের খবর পেয়ে রেণু পাচারকারীরা পালিয়ে যায়, তাই এখনো পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে কোনোরকম পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয়নি। উপজেলা মৎস্য অফিসার মাহাবুব আলম তালুকদার বলেন, ১৫/১৬ কিলোমিটার নদীপথ সব সময় নজরদারিতে রাখা সম্ভব হয় না, মানুষ সচেতন না হলে রেণু নিধন বন্ধ করা খুবই কঠিন কাজ, তবে প্রায়ই নদীতে অভিযান পরিচালনা করা হয় বলে তিনি জানান। দশমিনা থানার ওসি মো. আব্দুল আলীম বলেন, রেণু ব্যবসা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।